সিলেট সিটি করপোরেশন (সিসিক) নির্বাচনে প্রার্থীদের প্রতীক বরাদ্দ হতে সপ্তাহখানেক দেরি। তার আগেই এলাকা ছেয়ে গেছে প্রতীক সংবলিত বিলবোর্ড ও পোস্টারে। প্রার্থীদের সমর্থকদের সৌজন্যে এসব করা হচ্ছে। কোথাও আবার প্রার্থী নিজে ভোট চেয়ে ব্যানার টানিয়েছেন। চলছে শোডাউন ও সভা-সমাবেশ। প্রার্থীসহ আচরণবিধি লঙ্ঘন করছেন সংসদ সদস্য (এমপি), সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারী ও দলীয় নেতাকর্মীরা। প্রতীক বরাদ্দের আগে এমন প্রচারণা নির্বাচনী আচরণবিধি লঙ্ঘনের শামিল। কিন্তু বিষয়টি আমলে নিচ্ছে না কেউ। আচরণবিধি লঙ্ঘন ঠেকাতে নির্বাচন কমিশনের কোনো পদক্ষেপও চোখে পড়ছে না।

জানা গেছে, গত ১৬ মে নগরীতে হবিগঞ্জ সমিতির ব্যানারে আয়োজিত মতবিনিময় সভায় আওয়ামী লীগ মনোনীত মেয়র প্রার্থী আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরীর পক্ষে ভোট চান হবিগঞ্জ-৩ আসনের এমপি অ্যাডভোকেট মো. আবু জাহির ও হবিগঞ্জ-১ আসনের এমপি গাজী মোহাম্মদ শাহনওয়াজ মিলাদ। চলতি মাসের প্রথম সপ্তাহে বেশ কয়েক দিন সিলেট-৩ আসনের এমপি হাবিবুর রহমান হাবিব দক্ষিণ সুরমা এলাকায় নৌকা প্রতীকের প্রচারণা চালান। ২০ মে কবি নজরুল অডিটোরিয়ামে আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরীর সমর্থনে অনুষ্ঠিত সভায় বক্তব্য দেন সুনামগঞ্জ-৫ আসনের এমপি মুহিবুর রহমান মানিক। এ ছাড়া প্রতিদিন প্রার্থী ও তাঁদের সমর্থকরা বিভিন্ন স্থানে শোডাউন ও সভা-সমাবেশ করছেন।

গতকাল শুক্রবার ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ মনোনীত মেয়র প্রার্থী হাফেজ মাওলানা মাহমুদুল হাসানকে নগরীর বাগমারা এলাকায় জুমার নামাজ শেষে শোডাউন করতে দেখা যায়। মেয়র প্রার্থী আনোয়ারুজ্জামান মণিপুরি সম্প্রদায়ের লোকদের সঙ্গে সভা করেছেন। জাতীয় পার্টির প্রার্থী নজরুল ইসলাম বাবুলও একাধিক স্থানে সভা ও গণসংযোগ করেছেন, যা প্রতীক বরাদ্দের আগে তাঁরা করতে পারেন না।

আগামী ২১ জুন সিলেট সিটি করপোরেশনের নির্বাচন হবে। প্রার্থীদের প্রতীক বরাদ্দ দেওয়া হবে ২ জুন। এর আগেই নগরীর বিভিন্ন সড়কে নৌকা ও লাঙ্গল প্রতীকে ভোট চেয়ে বিভিন্ন ধরনের বিলবোর্ড, সাইনবোর্ড ও পোস্টার দেখা যাচ্ছে। বিশেষ করে সমর্থকদের সৌজন্যে নগরীর মিরের ময়দান, সুবিদবাজার, আম্বরখানা, জিন্দাবাজারসহ বিভিন্ন এলাকার সড়কের পাশে, সড়কের ওপর, বিদ্যুতের খুঁটি ও সড়কের আইল্যান্ডের খুঁটিতে এসব পোস্টার, ব্যানার ও সাইনবোর্ড দেখা যাচ্ছে।

দরগা গেট এলাকায় লাঙ্গল প্রতীকের প্রার্থী নজরুল ইসলাম ভোট চেয়ে সাইনবোর্ড টানিয়েছেন। নৌকা প্রতীকের প্রার্থীর পক্ষে সুবিদবাজার সড়কের কয়েকটি স্থানে পোস্টার ও বিলবোর্ড টানিয়েছেন যুক্তরাজ্যের এসেক্স আওয়ামী লীগের সহসভাপতি সাজ্জাদুর রহমান চৌধুরীসহ একাধিক নেতা।

আচরণবিধি লঙ্ঘনে উদ্বেগ প্রকাশ করে সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন) সিলেটের সভাপতি ফারুক মাহমুদ চৌধুরী বলেন, নির্বাচন কমিশনকে এখন থেকে কঠোর হতে হবে, তা না হলে প্রতিনিয়ত আচরণবিধি লঙ্ঘন করবেন প্রার্থীরা।

এ বিষয়ে সিলেটের আঞ্চলিক নির্বাচন কর্মকর্তা ফয়সল কাদের সমকালকে জানান, এক সভায় নৌকার প্রার্থীর পক্ষে ভোট চেয়ে আচরণবিধি লঙ্ঘনের অভিযোগে সিলেট কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের (সিকৃবি) রেজিস্ট্রার বদরুল ইসলাম শোয়েবকে কারণ দর্শানোর নোটিশ (শোকজ) দেওয়া হয়েছিল। তিনি জবাব দিয়েছেন এবং নিজের ভুল বুঝতে পেরেছেন।

এমপিদের আচরণবিধি লঙ্ঘনের বিষয়টি অবগত নন জানিয়ে তিনি বলেন, মন্ত্রী, এমপি, মেয়র বা সরকারি চাকরিজীবী নির্বাচনী প্রচারণায় অংশ নিতে পারবেন না। সব প্রার্থীকে তাদের বিলবোর্ড সরিয়ে ফেলতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। তার পরও যদি কেউ না সরান, তাহলে নির্বাচন কমিশন ব্যবস্থা নেবে।