বাঁশের মাচায় ঝুলছে শত শত তরমুজ। কোনোটির রং হলুদ, কোনোটি সবুজ, রয়েছে ডোরাকাটা (বাংলালিংক)। ভেতরের রং লাল এবং হলুদ। প্রতিদিন ক্ষেত থেকে এমন তরমুজ তুলে বিক্রির জন্য পথের পাশে জড়ো করেন কৃষকরা। বিভিন্ন স্থান থেকে পাইকাররা এসে তরমুজ কিনে নিয়ে যাচ্ছেন ট্রাকে করে। অসময়ে মাঠজুড়ে এসব তরমুজের চাষ করেছেন জয়পুরহাটের চাষিরা।

তরমুজ চাষ করে এখানকার চাষিরা যেমন লাভবান, তেমনি শত শত মানুষের কর্মসংস্থানেরও সৃষ্টি হয়েছে। এপ্রিলের প্রথম থেকে শুরু হয়েছে তরমুজ বিক্রি, তা চলবে ডিসেম্বর পর্যন্ত।

জয়পুরহাটের পাঁচবিবি উপজেলার আওলাই ইউনিয়নের ভূতগাড়ী, ভারাহুত, শিরট্টি, গোড়নাসহ আশপাশের কয়েকটি এলাকায় তরমুজের চাষ হচ্ছে। স্থানীয় পাইকারি বাজারে এসব তরমুজ বিক্রি হচ্ছে ৪০ থেকে ৪৫ টাকা কেজি। খুচরা বিক্রি হচ্ছে ৬০ থেকে ৬৫ টাকা।

চাষিরা জানান, বছরের ৯ মাসই এ এলাকায় বাঁশের মাচায় তরমুজ চাষ করা যায়। চারা রোপণের ৫০ দিনের মধ্যেই ফলন হয়। তরমুজ চাষকে কেন্দ্র করে ভূতগাড়ী এলাকায় গড়ে উঠেছে অনেক দোকান।

জেলার পাঁচ উপজেলায় ৪৫ হেক্টর জমিতে তরমুজ চাষ হয়েছে এ বছর। এর মধ্যে সদরে ৯, পাঁচবিবিতে ২২, আক্কেলপুরে ২, ক্ষেতলালে ৫ ও কালাই উপজেলায় ৭ হেক্টর রয়েছে।

ভূতগাড়ী এলাকার কয়েকজন চাষি জানান, ২০১৮ সালে পাঁচবিবি উপজেলার ভারাহুত গ্রামের কৃষক আবু মুসা আড়াই শতক জমিতে মাচায় তরমুজের চাষ শুরু করেন। তাঁকে একটি এনজিও থেকে বীজ ও সার দেওয়া হয়। মাচা করতে ব্যয় হয় ৫ হাজার টাকা। ওই বছর তিনি তরমুজ বিক্রি করেন ২৬ হাজার টাকা। সে সময় তাঁকে দেখে তরমুজ চাষে এলাকার অনেকেই ঝুঁকে পড়েন। এক সময়ে যাঁদের কিছুই ছিল না, তরমুজ চাষ করে তাঁরা এখন সচ্ছল।

প্রথম তরমুজ চাষি আবু মুসা মণ্ডল এবার সাড়ে ৩ বিঘা জমি ৪০ হাজার টাকায় ইজারা নিয়ে তরমুজ চাষ করেছেন। তিনি বলেন, তরমুজ চাষে প্রতি বিঘায় ৪০ থেকে ৪৫ হাজার টাকা খরচ হয়। ফলন ভালো হলে বিঘায় ৮০ থেকে ১০০ মণ তরমুজ উৎপাদন হয়। দাম ভালো থাকলে এক থেকে দেড় লাখ টাকা বিক্রি হয়। এবার ১ হাজার ৬০০ থেকে ১ হাজার ৮০০ টাকা মণ বিক্রি হচ্ছে।

কৃষক ফরিদুল ইসলাম আড়াই বিঘা জমিতে তরমুজ চাষ করেছেন। তাঁর জমিতে রয়েছে হলুদ ও সবুজ জাতের তরমুজ। তিনি জানান, বছরে ৯ মাস তরমুজ চাষ করা যায়। শীত মৌসুমে এসব জমিতে আলু চাষ করা হয়।

চাষি আব্দুল করিম বলেন, ‘তরমুজ চাষ নিঃসন্দেহে লাভজনক ফসল। আমাদের সবকিছুই পরিবর্তন করে দিয়েছে এটি।’

রাজশাহী থেকে তরমুজ কিনতে আসা পাইকার আবেদ আলী জানান, তিন বছর ধরে এখানকার তরমুজ রাজশাহীতে নিয়ে বিক্রি করছেন তিনি। এখানকার তরমুজ অনেক  মিষ্টি হওয়ায় বাজারে চাহিদাও বেশি।

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের অতিরিক্ত উপপরিচালক মজিবুর রহমান বলেন, এ জেলায় ব্লাক বেবি, মধুবালা, গোল্ডেন ক্রাউন, ইয়েলো কিংসহ কয়েক জাতের তরমুজের চাষ হয়। কৃষি বিভাগ থেকে চাষিদের সবসময় পরামর্শ দেওয়া হয়।

জেলা কৃষি বিপণন কর্মকর্তা রতন কুমার রায় বলেন, গত বছর এ জেলায় ১৫ কোটি টাকার তরমুজ বিক্রি হয়েছে। এবার ২৫ কোটি টাকার তরমুজ বিক্রি হতে পারে।