- সারাদেশ
- সভাপতি-সম্পাদক দু’জনই কমিটিতে চান ‘মাই ম্যান’
নারায়ণগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগ
সভাপতি-সম্পাদক দু’জনই কমিটিতে চান ‘মাই ম্যান’

নারায়ণগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগের পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠনের জন্য সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক আলাদাভাবে দুটি তালিকা কেন্দ্রে পাঠিয়েছেন। তবে গুরুত্বপূর্ণ অনেক নেতার নাম প্রস্তাবিত দুই কমিটির একটিতেও নেই। দলের নেতাকর্মীর কাছে অপরিচিত, এমনকি দেশে থাকেন না এমন লোকজনও সভাপতি, সাধারণ সম্পাদকের ‘মাই ম্যান’ হওয়ার কারণে প্রস্তাবিত দুই কমিটিতে স্থান পেয়েছেন। যোগ্যতা নয়, কমিটিতে নিজ লোকের সংখ্যাধিক্যের দিকেই দু’জনের আগ্রহ বেশি বলে অভিযোগ উঠেছে।
নেতাকর্মীরা আশঙ্কা করছেন, ভবিষ্যতে জেলা কমিটির ‘তপু ঘোষ’ পরিণতি হবে। জেলা ছাত্রলীগের সহসভাপতি তপু চন্দ্র ঘোষ সম্প্রতি তিন সহযোগীসহ ছিনতাইয়ের অভিযোগে গ্রেপ্তার হয়েছেন। সংগঠনে তাঁর কোনো অবদান না থাকলেও শুধু একজন এমপির ছেলের প্রিয়পাত্র হওয়ায় তাঁকে দেওয়া হয়েছিল গুরুত্বপূর্ণ পদ।
দুই যুগ পর গত ২৩ অক্টোবর জেলা আওয়ামী লীগের সম্মেলন হয়। সম্মেলনে আগের কমিটির সভাপতি আবদুল হাই ও সাধারণ সম্পাদক আবু হাসনাত মোহাম্মদ শহীদ বাদলকে ফের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক ঘোষণা দিয়ে পূর্ণাঙ্গ কমিটি করার দায়িত্ব দেওয়া হয় তাঁদের।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক নেতাকর্মীরা জানান, নারায়ণগঞ্জ-৪ আসনের এমপি শামীম ওসমানের লোক হিসেবে পরিচিত বাদলের জমা দেওয়া কমিটিতে সহসভাপতি পদে ডা. সেলিনা হায়াৎ আইভীর নামের সঙ্গে একই পদে জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান চন্দন শীলের নাম প্রস্তাব করা হয়েছে। অথচ চন্দন শীল বর্তমানে মহানগর আওয়ামী লীগের সহসভাপতি। মহানগর আওয়ামী লীগের কোটায়ই তিনি দলের জাতীয় পরিষদের সদস্য। আইভীকে চাপে ফেলতে অযথাই চন্দন শীলকে টেনে আনা হয়েছে বলে মনে করছেন নেতাকর্মীরা। এ ছাড়া সহসভাপতি পদে ফয়েজউদ্দিন লাভলুর নাম প্রস্তাব করা হয়েছে। এমপি শামীম ওসমানের ছেলে অয়ন ওসমানের শ্বশুর ফয়েজউদ্দিন লাভলু। তিনি কখনোই আওয়ামী লীগের রাজনীতি করেননি। তবে তাঁর বাবা খোকা মহিউদ্দিন আওয়ামী লীগ নেতা ছিলেন। তিনি পরে জাতীয় পার্টিতে যোগ দিয়েছিলেন।
সভাপতির কমিটিতে কোনো গুরুত্বপূর্ণ পদে নাম নেই সাবেক নাজমা-শামীম কমিটির একমাত্র সাংগঠনিক সম্পাদক আনিসুর রহমান দিপুর। সদস্য হিসেবে তাঁর নাম প্রস্তাব করা হয়েছে। তিনি শহর আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদকও ছিলেন। সাধারণ সম্পাদকের কমিটিতেও তাঁর নাম নেই। আগের প্রত্যেক কমিটিতে স্থান পেলেও এবার সভাপতি, সাধারণ সম্পাদকের কোনো কমিটিতে স্থান হয়নি দলের সক্রিয় নেতা আরজু রহমান ভূঁইয়ার। আরজু আগের কমিটির সহসভাপতি ছিলেন। তিনি নাজমা-শামীম কমিটির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ছিলেন। এ সম্পর্কে আরজু বলেন, ‘যোগ্যদের মূল্যায়ন না হলে রাজপথের রাজনীতি পিছিয়ে পড়বে। আমি কেন্দ্রীয় নেতাদের সিদ্ধান্তের দিকে তাকিয়ে আছি।’ বিলুপ্ত কমিটির আরেক সহসভাপতি অ্যাডভোকেট আসাদুজ্জামানেরও জায়গা হয়নি দুই কমিটিতে।
সাধারণ সম্পাদকের কমিটিতে সহসভাপতি পদে বিতর্কিতরা স্থান পেয়েছেন বলে নেতাকর্মীর অভিযোগ। সহসভাপতি পদে নাম প্রস্তাব করা রূপগঞ্জের আবুল বাশার টুকুর বিরুদ্ধে ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে নৌকার প্রার্থীর বিরুদ্ধে প্রকাশ্যে অবস্থান নেওয়ার অভিযোগ ওঠে। তাঁকে শোকজও করা হয়। আজ পর্যন্ত তিনি সেই শোকজের জবাব দেননি। সহসভাপতি পদে নাম থাকা কাজী বেনজীর আহমেদ আড়াইহাজারে ইউনিয়ন পর্যায়ের নেতা। জেলার রাজনীতিতে তিনি খুবই অপরিচিত। সহসভাপতি পদে প্রস্তাব করা অনুপ সাহা ৩৭ বছর ধরে সুইজারল্যান্ডে বসবাস করেন। তাঁর দুই মেয়ে ভারতে স্থায়ীভাবে বসবাস করেন। আরেক প্রস্তাবিত সহসভাপতি মাসুদ চৌধুরী মজনু প্রায় ৪০ বছর ধরে সুইডেনে বাস করেন।
২০০১-এ বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের সময় আওয়ামী লীগের দুঃসময়ে জোরালো ভূমিকা পালন করা জেলা আওয়ামী লীগের সদ্য সাবেক যুগ্ম সম্পাদক জাহাঙ্গীর আলমের নাম নেই সাধারণ সম্পাদকের কমিটিতে। ক্ষুব্ধ জাহাঙ্গীর আলম বলেন, ‘সাধারণ সম্পাদক যোগ্যতা বিবেচনা করেননি। কমিটিতে মাই ম্যান বৃদ্ধির বিবেচনায় নাম দিয়েছেন।’ প্রস্তাবিত কমিটিতে সাধারণ সম্পাদকের স্ত্রী নাহিদা হাসনাতের নাম সদস্য পদে রয়েছে। নাহিদা হাসনাত মহিলা লীগের কেন্দ্রীয় কমিটিতেও রয়েছেন। তাই জেলা আওয়ামী লীগের কমিটিতে আসাটা কেন জরুরি– এ নিয়েও প্রশ্ন নেতাকর্মীর।
সভাপতি আবদুল হাই তাঁর ছেলে মো. তানভীর হাইকেও সদস্য পদে তাঁর প্রস্তাবিত কমিটিতে রেখেছেন। তাঁর ছেলে আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে সক্রিয় নন বলে নেতাকর্মীরা জানান। সব অভিযোগের ব্যাপারে আবদুল হাই বলেন, ‘আমার কমিটিতে কোনো অযোগ্য লোক নেই। কম পরিচিত কেউ কেউ থাকতে পারেন। নতুনদের জায়গা করে দিতে গিয়ে অনেকে বাদ পড়েছেন। অযোগ্যদের প্রস্তাব করেছেন সাধারণ সম্পাদক। দেশের বাইরের লোক, জাতীয় পার্টির লোক, বিএনপির ডোনার– এমন অনেকে তাঁর কমিটিতে স্থান পেয়েছেন। যোগ্যদের মধ্যে যাঁরা বাদ পড়েছেন, তাঁদের ব্যাপারে ভাবছি।’
এসব অভিযোগের ব্যাপারে সাধারণ সম্পাদক বাদল বলেন, ‘আওয়ামী লীগ বড় দল। এখানে যোগ্যদের সংখ্যা এত বেশি যে, যোগ্য অনেকে কমিটির বাইরে থাকবেন– এটিই স্বাভাবিক। আমরা সব থানা কমিটি ও দুই এমপির মতামত নিয়ে কমিটি জমা দিয়েছি। তবে সভাপতি আমাদের মতামত না নিয়েই কমিটি জমা দিয়েছেন। আমরা পরে জমা দিয়েছি। কেন্দ্র থেকে যে সিদ্ধান্ত দেবে, তা মেনে নেব।’
মন্তব্য করুন