- সারাদেশ
- ‘মানব মঙ্গলে’ সর্বস্বান্ত ৫০০ গ্রাহক
‘মানব মঙ্গলে’ সর্বস্বান্ত ৫০০ গ্রাহক
সমবায় সমিতিটির নাম মানব মঙ্গল মাল্টিপারপাস কো-অপারেটিভ সোসাইটি। এর পাঁচ শতাধিক আমানতকারী গ্রাহক কখনও ভাবেননি এটিই তাঁদের এত বড় অমঙ্গল ঘটিয়ে উধাও হয়ে যাবে। এতে তাঁরা খুইয়েছেন প্রায় ৫ কোটি টাকা।
ঘটনাটি ঘটেছে মানিকগঞ্জের সাটুরিয়ার দরগ্রাম ইউনিয়নের শিমুলিয়া গ্রামে। গত ১০ মে অনেক গ্রাহককে পাস বই নিয়ে টাকা পাওয়ার আশায় সমিতির অফিসের সামনে ভিড় করতে দেখা যায়।
ভুক্তভোগীরা জানান, ঈদের বন্ধের কথা বলে তাঁরা অফিসে তালা ঝুলিয়ে চলে যান। ঈদের পর আর অফিস না খোলায় এবং ঋণ কার্যক্রম বন্ধ থাকায় আমানতকারীদের সন্দেহ হয়। পরে আমানতকারীরা অফিসে এসে জানতে পারেন সমিতির মালিকরা গ্রাহকের টাকা নিয়ে উধাও হয়ে গেছেন। ৬ মে দুপুরে আমানতকারীরা জমা টাকা পাওয়ার আশায় অফিসের সামনে পাস বই নিয়ে হাজির হন। অফিসে তালা ঝুলতে দেখে গ্রাহকরা বিক্ষোভ মিছিল করেন।
এ ঘটনায় আমানতকারী গ্রাহকরা সাটুরিয়ার ইউএনওর কাছে গত ৭ মে মানব মঙ্গল সমবায় সমিতির বিরুদ্ধে লিখিত অভিযোগ করেছেন।
সমবায় সমিতি আইনে বলা হয়েছে, ২০২৩ সালে সংশোধিত আইন অনুযায়ী কোনো মাল্টিপারপাস কো-অপারেটিভ সমবায় সমিতি ব্যাংকিং কার্যক্রম জিপিএস, এফডিআর, সঞ্চয়পত্র ও সেভিং হিসাব খুলে কোনোভাবেই গ্রাহকদের কাছ থেকে আমানত সংগ্রহ করতে পারবে না। অথচ এ আইন না মেনে সমবায় অফিসের কর্মকর্তাদের ম্যানেজ করে চলছে রমরমা ব্যবসা। উপজেলার প্রায় দেড় শতাধিক সমিতির মালিকরা নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করে ক্ষুদ্রঋণের নামে গ্রামের সহজ-সরল মানুষদের অতিমুনাফার লোভনীয় ফাঁদে ফেলে লাখ লাখ টাকা আমানত আদায় করছেন।
সাটুরিয়ার বিভিন্ন গ্রাম ও হাটবাজারে ব্যাঙের ছাতার মতো গড়ে উঠেছে সমবায় সমিতি। এ ধরনের সমবায় সমিতির সাইনবোর্ড লাগিয়ে সুদের ব্যবসাও করছেন অনেকে। উপজেলা সমবায় অফিসে টাকা দিলেই মিলছে রেজিস্ট্রেশন। রেজিস্ট্রেশন নিয়ে গ্রাহকদের কাছ থেকে আমানত সংগ্রহ করে অফিসে তালা ঝুলিয়ে তাঁদের সর্বস্বান্ত করে পালিয়ে যাচ্ছেন সমিতির মালিকরা।
জানা গেছে, সাটুরিয়া উপজেলার দরগ্রাম ইউনিয়নের শিমুলিয়া চৌরাস্তার মোড়ে ২০১১ সালে উপজেলা সমবায় অফিস থেকে নিবন্ধন নিয়ে মানব মঙ্গল মাল্টিপারপাস কো-অপারেটিভ সোসাইটি লিমিটেড নামে একটি সমবায় সমিতি গঠন করেন মো. আলাউদ্দিন ও লুৎফর রহমান পাখি। মাঠকর্মীদের দিয়ে তিনি এলাকায় ঋণ কার্যক্রম কর্মসূচি শুরু করেন। একপর্যায়ে ওই সমিতিতে পাঁচ শতাধিক গ্রাহক সংগ্রহ করেন। শুরুতেই কিছু গ্রাহককে ঋণ দিয়ে লোভের ফাঁদে ফেলেন তাঁরা।
কাকিলাপাড়ার নুরু ব্যাপারী বলেন, মানব মঙ্গল সমিতির ম্যানেজার সিরাজুল ইসলাম তাঁকে একটি এফডিআর করতে বলেন। এফডিআর খুললে যত টাকা আমানত রাখা হবে, তার দ্বিগুণ টাকা দেওয়া হবে বলে জানান সিরাজুল। তাঁর কথায়, ১৪ লাখ টাকা দিয়ে এফডিআর করেন তিনি (নুরু)।
শিমুলিয়া গ্রামের নুরুল ইসলাম বলেন, সমিতিটির মাঠকর্মী আব্দুল হাই তাঁকে জিপিএস করার পরামর্শ দিয়ে বলেন, জিপিএস করলে দ্বিগুণ টাকা পাওয়া যাবে। তিনি এই ফাঁদে পড়ে ৯ লাখ ১০ হাজার টাকা জমা রাখেন।
এ বিষয়ে সমিতির সভাপতি মো. আলাউদ্দিন ও সাধারণ সম্পাদক মোজাম্মেল হকের বক্তব্য জানতে তাঁদের মোবাইল ফোনে কল দিলে বন্ধ পাওয়া যায়। পরে তাঁদের খুদে বার্তা দিলেও সাড়া মেলেনি।
এ বিষয়ে সাটুরিয়া উপজেলা সমবায় কর্মকর্তা ফিরোজ আলম বলেন, তাঁরা ঋণ কার্যক্রম অডিট করে থাকেন। ঋণ কার্যক্রমের আড়ালে ওই সমিতির আমানত সংগ্রহের বিষয়ে তাঁদের জানা নেই। এমনকি কোনো গ্রাহক তাঁদের জানাননি।
সাটুরিয়ার তৎকালীন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) শারমিন আরা ১৫ মে এ নিয়ে দুই পক্ষকে নিয়ে আলোচনায় বসেন। সেখানে দ্রুত সময়ের মধ্যে আমানতকারীদের টাকা ফিরিয়ে দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়। এ ছাড়া তিনি প্রতিটি সমবায় সমিতিকে নিয়মিত হিসাব-নিকাশ জমা দেওয়ার নির্দেশনা দেন। তবে ১৮ মে তিনি সেখান থেকে বদলি হয়ে গেছেন। ইউএনও পদে তাঁর স্থলাভিষিক্ত হয়েছেন শান্তা রহমান। তিনি এখনও বিষয়টি অবগত নন।
মন্তব্য করুন