পাবনার ঈশ্বরদীর বোম্বাই লিচু দেশজুড়ে পরিচিত। এরই মধ্যে ঈশ্বরদীর বাজারে উঠতে শুরু করেছে বোম্বাই লিচু। চলতি সপ্তাহের শেষ নাগাদ এই লিচু পুরোদমে বাজারে আসবে। গত বছর ভেজাল সার ও কীটনাশক প্রয়োগের কারণে এ অঞ্চলের লিচু চাষিরা লোকসানের মুখে পড়েছিলেন। সেই শিক্ষা থেকে এবার গাছে সার ও কীটনাশক প্রয়োগে সচেতন ছিলেন চাষিরা। আশা ছিল, লিচুর ফলন ও ব্যবসা দুটিই আশানুরূপ হবে। কিন্তু তাঁদের সেই আশা পূরণে বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে বৈরী আবহাওয়া।

কৃষকরা বলছেন, লিচু আবাদে দুর্ভোগ তাঁদের পিছু ছাড়ছে না। গাছে মুকুল আসা থেকে শুরু করে পেকে ওঠা পর্যন্ত দফায় দফায় লিচু ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ফলে বোম্বাই লিচুর আকার, ফলন ও স্বাদের ক্ষেত্রে এবার যে তারতম্য হবে, তা আগেই অনুমান করা যাচ্ছে। আর এর প্রভাব পড়বে বাজারে দামে।

ঈশ্বরদীর জয়নগর, সাহাপুর, মানিকনগর, বরইচরায়সহ বিভিন্ন গ্রামের চাষি ও উপজেলা কৃষি বিভাগ জানায়, এবার মোট লিচু গাছের প্রায় অর্ধেকেই মুকুল আসেনি। যেটুকু মুকুল এসেছে, সেগুলোও সাম্প্রতিক তাপদাহে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। তাপদাহের কারণে পরিপূর্ণ আকার ধারণ করার সময় ১০ থেকে ১৫ শতাংশ লিচুর গুটি গাছ থেকে ঝরে পড়েছে। যখন ফল আকার ধারণ করেছে, তখন আরও প্রায় ১৫ শতাংশ গাছেই লিচু ফেটে ও পচে নষ্ট হয়েছে। যখন পেকে লাল আকার ধারণ করা শুরু করল, তখন শুরু হলো কালবৈশাখী ও বৃষ্টি। ফলে গাছ উপড়ে, ডালপালা ভেঙে এবং গাছের গোড়ায় পানি জমে পোকার আক্রমণে প্রচুর লিচু নষ্ট হয়েছে। তাই এ বছর লিচুর ফলন অর্ধেকে নেমে গেছে। উপজেলা কৃষি বিভাগ সূত্র জানায়, এ বছর ঈশ্বরদীর ৩ হাজার ২০০ হেক্টর জমিতে আবাদ হয়েছে লিচু। এসব জমিতে গাছ রয়েছে ৫ লক্ষাধিক। ৮ হাজার ৪০০ চাষি লিচু আবাদে এ বছর বিনিয়োগ করেছেন অন্তত ১২৫ কোটি টাকা। এবার ৪৫০ কোটি টাকার বেশি লিচু বিক্রির লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছে।

উপজেলার সলিমপুর ইউনিয়নের মানিকনগর গ্রামের চাষি আমিরুল ইসলাম সরদার বলেন, এ বছর লিচুর জন্য দুঃসময়। গাছে মুকুল এসেছে বিগত বছরগুলোর তুলনায় অনেক কম। লিচু কড়ি বা গুটি অবস্থায় টানা তাপদাহে ঝরে পড়েছে প্রায় ১৫ শতাংশ।

রূপপুর গ্রামের চাষি জালাল উদ্দিন বলেন, এ বছর আমার বাগানের অর্ধেক গাছে লিচুই ধরেনি। গ্রামে গ্রামে লিচু চাষিদের মধ্যে হতাশা বিরাজ করছে। যেসব ব্যবসায়ী আগাম টাকা দিয়ে লিচুর বাগান কিনে রেখেছিলেন, তাঁদের এবার বড় অঙ্কের লোকসান গুনতে হবে।

ঈশ্বরদীর জয়নগর শিমুলতলায় লিচুর হাটে গত শুক্রবার খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বোম্বাই লিচু প্রতি হাজার বিক্রি হচ্ছে আড়াই থেকে তিন হাজার টাকা দামে। পাইকারি দাম শ হিসাবে ২৫০ থেকে ৩০০ টাকা। হাট ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি লিটন প্রামাণিক জানান, দু-চার দিন পর লিচুর দাম বেড়ে প্রতি হাজার ৪ হাজার টাকায় উঠবে। আওতাপাড়া, সাহাপুর ও জয়নগর হাটসহ ঈশ্বরদীতে এক থেকে সোয়া কোটি টাকার লিচু বিক্রি হচ্ছে প্রতিদিন। দু-চার দিন পর পুরোপুরি লিচু এলে বিক্রির পরিমাণ কয়েক গুণ বৃদ্ধি পাবে।

ঈশ্বরদী উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মিতা সরকার জানান, লিচু ঈশ্বরদী এলাকার প্রধান অর্থকরী ফল। কিন্তু এবার গাছে মুকুল ও ফলন কম হয়েছে। প্রচণ্ড গরমে ১০ থেকে ১৫ শতাংশ লিচুর গুটি ঝরে পড়েছে। গাছেই ফেটে নষ্ট হয়েছে কিছু লিচু। এর পরও এবার দাম বেশি হওয়ায় ৪০০ থেকে ৪৫০ কোটি টাকার লিচু বিক্রি হবে বলে আমরা আশা করছি।