সকালে পরিবারের জন্য নাশতা আনতে বেরিয়েছিলেন আজাদুর রহমান। কিন্তু প্রতিপক্ষের লোকজন বাড়ির সামনে আগে থেকেই ওত পেতে ছিল। আজাদ বের হওয়া মাত্র পেটে ছুরিকাঘাত করে পালিয়ে যায় তারা। পরে তাকে উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হলে চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন।

নগরের পাহাড়তলী থানার সরাইপাড়া নয়াবাজার মুজিবুর রহমান প্লাজার সামনে রোববার সকালে এ ঘটনা ঘটে। নিহত আজাদ পাহাড়তলী থানার সরাইপাড়া নাজির বাড়ির মৃত হাবিবুর রহমানের ছেলে।

তবে পরিবারের অভিযোগ, ছোট ভাই মফিজুর রহমানের চড়ের প্রতিশোধ নিতে বড় ভাই আজাদকে খুন করা হয়েছে। অন্যদিকে স্থানীয়দের অভিযোগ, নগরের নয়াবাজার মোড়ের চাঁদাবাজি নিয়ে আজাদের সঙ্গে ফয়সালের পূর্ববিরোধ রয়েছে। এর জেরে ফয়সাল ও তার অনুসারীরা আজাদকে খুন করেছে।

নিহতের পরিবার জানায়, আজাদ ও তার বড় ভাই মফিজ নয়াবাজার মোড়ে রহিম কন্ট্রাক্টরের মালিকানাধীন একটি খালি জায়গার কেয়ার টেকার হিসেবে চাকরি করতেন। শনিবার রাত সাড়ে ১২টার দিকে জায়গাটির গেটের সামনে এক যুবককে প্রস্রাব করতে দেখে মফিজ বাঁধা দেন। এ সময় ওই যুবকের সঙ্গে তার বাকবিতণ্ডা হয়। একপর্যায়ে মফিজ ওই যুবককে চড় দেন। এ ঘটনায় ওই যুবক ক্ষিপ্ত হয়ে ফয়সালসহ কয়েকজনকে ডেকে নিয়ে আসে।

এদিকে ভাইয়ের সঙ্গে বাকবিতণ্ডার খবর পেয়ে এগিয়ে আসেন আজাদ। তার সঙ্গেও ওই যুবকদের বাকবিতণ্ডা ও ধাক্কাধাক্কি হয়। একপর্যায়ে তাদের দেখে নেওয়ার হুমকি দিয়ে তারা চলে যান। আজ ভোরে আজাদ নাশতা আনতে বের হলে বাড়ির সামনে আগে থেকে ওত পেতে থাকা সন্ত্রাসীরা তাকে ছুরিকাঘাত করে পালিয়ে যায়।

আজাদের পরিবারের দাবি, মৃত্যুর আগে তিনি তার ওপর হামলাকারী ওসমান ও আবুল হাসান রাজু, ফয়সাল আহম্মদ চৌধুরী ওরফে রিহান ফয়সাল চৌধুরী ও মো. আবু তাহের রাজীব নামে চার যুবকের নাম বলে যান। চারজনই স্থানীয় চাঁদাবাজ ও সন্ত্রাসী হিসেবে পরিচিত। তাদের মধ্যে ফয়সালের বিরুদ্ধে একাধিক মামলা রয়েছে। তারা সবাই ২৫ নং রামপুর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর ও প্যানেল মেয়র আব্দুস সবুর লিটনের অনুসারী হিসেবেও পরিচিত।

স্বামীর মৃত্যুতে শোকে ভেঙে পড়েছেন আজাদের স্ত্রী নাজমা আক্তার। তাদের ৮ ও ৪ বছর বয়সী দুটি কন্যা রয়েছে। তিনি সমকালকে বলেন, ওসমান, রাজু, রাজীব ও ফয়সাল আমার স্বামীকে খুন করেছে। আমার স্বামী মৃত্যুর আগে সবার নাম বলে গেছে। তাদের সবাই কাউন্সিলরের লোকজন। আমি খুনিদের ফাঁসি চাই। 

নিহত আজাদের বড় ভাই মফিজ সমকালকে বলেন, নয়াবাজারে ভ্যানগাড়ি থেকে টাকা তোলা নিয়ে আজাদের সঙ্গে ফয়সালের আগে একবার ঝামেলা হয়েছিল। সেটা মীমাংসাও হয়েছে। শনিবার রাতে গেটে প্রস্রাব করা নিয়ে তাদের সঙ্গে আজাদের ঝামেলা হয়েছিল। এ সময় তারা দেখে নেওয়ার হুমকি দিয়ে চলে যায়। সকালে আমার ভাইকে খুন করে ফেলেছে।

এদিকে স্থানীয় সূত্র জানায়, নগরের পোর্ট কানেক্টিং সড়কের নয়াবাজার মোড়ের উভয় পাশে কয়েকশ ভাসমান দোকান বসে। এসব দোকান থেকে চাঁদা নিতো আজাদ ও তার পরিবারের সদস্যরা। বিনিময়ে তারা রাতে নৈশপ্রহরী হিসেবে পাহারা দিত। কয়েক মাস আগে স্থানীয় সন্ত্রাসী রিহান ফয়সাল চৌধুরী ও তার অনুসারীরা সেখান থেকে চাঁদা তোলা শুরু করেন। তাতে বাঁধা দেন আজাদ। এ নিয়ে আজাদের সঙ্গে ফয়সালের বিরোধ তৈরি হয়। এরপর স্থানীয় বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয়, ফয়সাল ও তার অনুসারীরা ২৫ নম্বর রামপুর ওয়ার্ডের অংশের চাঁদা নেবে। আর আজাদ ১২ নম্বর সরাইপাড়া অংশের চাঁদা নেবে।

পাহাড়তলী থানার ওসি মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, নিহত আজাদ মৃত্যুর আগে যাদের নাম বলে গেছে তারাসহ পরিবারের সদস্যরা যাদের আসামি করেছে তাদের সবার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এ ছাড়া তদন্তে যাদের নাম পাওয়া যাবে তাদেরও আইনের আওতায় আনা হবে। আসামিদের গ্রেপ্তার করতে পারলে হত্যাকাণ্ডের কারণ জানা যাবে।