- সারাদেশ
- সিলেট বিএনপিতে চাপা আগুন
সিলেট বিএনপিতে চাপা আগুন
সিটি নির্বাচন নিয়ে আরিফ বলয় উচ্ছ্বসিত, মুক্তাদীরের ঘরে হতাশা

সিলেট সিটি করপোরেশন নির্বাচনে নেই বিএনপি। সিটি মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী নাগরিক সমাবেশ করে নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ান। তাতে উল্লসিত তাঁর অনুসারীরা। বিএনপির কেন্দ্রীয় এই নেতার হাত ধরে আবারও ঘুরে দাঁড়াবে সিলেট বিএনপি– এমনটাই মনে করছেন দলের নেতাকর্মীরা। আরিফ নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ানোয় অনেকটা হতাশা বিরাজ করছে বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা খন্দকার আবদুল মুক্তাদীর বলয়ে। তবে সিটি নির্বাচন ইস্যুতে মুক্তাদীর-আরিফ দু’জনই কৃতিত্ব নিতে মরিয়া।
এ ছাড়া আগামী জাতীয় নির্বাচনে সিলেট-১ আসনে নির্বাচনে প্রার্থী হতে চান মুক্তাদীর। একই আসনে প্রার্থী হওয়ার ইচ্ছা রয়েছে আরিফুল হকেরও। এ নিয়ে সিলেট বিএনপিতে চাপা আগুনের উত্তাপের আঁচ মিলেছে উভয় নেতার কর্মীদের কথাবার্তায়। তবে জাতীয় নির্বাচনের আগে দু’জনের ভুল বোঝাবুঝির অবসান হবে বলে মনে করছেন তাঁদের অনুসারীরা।
বিএনপি নেতাদের সঙ্গে আলাপ করে জানা গেছে, সিলেট বিএনপি দুই বলয়ে বিভক্ত। এক বলয়ের নেতৃত্ব দিচ্ছেন বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা খন্দকার আবদুল মুক্তাদীর। অপর বলয় চলছে দলটির জাতীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য ও সিটি মেয়র আরিফুল হক চৌধুরীর নেতৃত্বে। আরিফ মেয়র পদে ভোটে লড়তে সব রকম চেষ্টা চালিয়েছেন। কিন্তু দলের কঠোর মনোভাব এবং পরামর্শদাতাদের সায় না পেয়ে তিনি ভোটের মিশন থেকে নিজেকে গুটিয়ে ভোট বর্জনের ঘোষণা দেন।
এ অবস্থায় সিটি নির্বাচন ইস্যুতে মুক্তাদীর-আরিফ দু’জনই কৃতিত্ব নিতে মরিয়া। কয়েকজনকে আটকালেও তাঁদের বলয়ের নির্বাচনমুখী অনেক নেতাকে আটকাতে ব্যর্থ হয়েছেন এই দুই নেতা। বিএনপির পক্ষ থেকে ৩৫ জন কাউন্সিলর প্রার্থীকে নির্বাচনে অংশ না নিতে চিঠি দেওয়া হয়। তাতে কোনো কাজ হয়নি। তাঁদের অনেকেই নির্বাচনে প্রার্থী হয়ে জোর প্রচার চালাচ্ছেন। কাউন্সিলর প্রার্থীদের সবাই মুক্তাদীর-আরিফ অনুসারী। এরই মধ্যে মুক্তাদীর-আরিফ বলয়ের বেশ কয়েকজন কাউন্সিলর প্রার্থী নির্বাচন থেকে সরেও দাঁড়ালেও বেশিরভাগ নেতাকর্মী রয়েছেন নির্বাচনের মাঠে।
জানা গেছে, এবার সিটি নির্বাচনে মেয়র আরিফুল হক প্রার্থী হচ্ছেন– এমন ধারণাই ছিল অনেকের। তিনি প্রার্থী হলে রাজনৈতিক ক্যারিয়ার ধ্বংস হয়ে যাবে– এমনটাই মনে করছিলেন তাঁর বিরোধীরা। আরিফ লন্ডন থেকে ফেরার পর বিমানবন্দর থেকে শোডাউন করে নিয়ে যাওয়া হয় বাসায়। তখনও অনেকে মনে করেছিলেন তিনি নির্বাচন করবেন।
এর পর বিভিন্ন সভা-সমাবেশে প্রার্থী হচ্ছেন– এমন ইঙ্গিতও দেন মেয়র আরিফ। এ কারণে তাঁর প্রার্থিতা নিয়ে নানা নাটকীয়তা দেখা দেয়। এ অবস্থায় ২০ মে বিষয়টি খোলাসা করবেন বলে জানিয়ে মুখে কুলুপ আটেন তিনি।
পরে ২০ মে সিলেটের রেজিস্ট্রারি মাঠে নাগরিক সমাবেশ ডেকে নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ানোর ঘোষণা দেন। ওইদিন বিএনপির কেন্দ্রীয় অনেক নেতা সমাবেশে থাকলেও অনুপস্থিত ছিলেন খন্দকার আবদুল মুক্তাদীর।
এ ব্যাপারে আরিফুল হক চৌধুরীর ঘনিষ্ঠজন হিসেবে পরিচিত কেন্দ্রীয় বিএনপির ক্ষুদ্র ঋণ ও কুটিরশিল্প বিষয়ক সহসম্পাদক মুক্তিযোদ্ধা আব্দুর রাজ্জাক সমকালকে বলেন, সিলেট বিএনপি এখন আবার আবার ঘুরে দাঁড়াবে। তার একটাই কারণ, আরিফুল হক জানেন দলীয় নেতাকর্মীকে ঐক্যবদ্ধ করতে। তিনি বলেন, এবারের নির্বাচনে দলের সিদ্ধান্তে মেয়র পদে নির্বাচন না করার যে ত্যাগ সারাদেশের বিএনপি নেতাকর্মীর জন্য একটা জ্বলন্ত উদাহরণ। এ জন্য বিএনপির প্রবীণ এই নেতা শিগগিরই দলের ‘দুঃসময়ে বিশ্বস্ততার’ পুরস্কার পেতে যাচ্ছেন।
মেয়র আরিফের ত্যাগে মুক্তাদীর বলয়ে দেখা দিয়েছে হতাশা। আরিফুল হক বড় পদপদবি নিয়ে ফিরলে তাঁরা কোন দিকে যাবেন, সেটি নিয়েও শুরু হয়েছে আলোচনা।
বিএনপি নেতাকর্মীর মতে, আরিফুল হক মেয়র থাকায় সিলেট বিএনপির রাজনীতি অনেকটা চলে যায় মুক্তাদীরের হাতে। সিলেট জেলা বিএনপি, নগর বিএনপি, ছাত্রদল, যুবদল ও স্বেচ্ছাসেবক দলে ছিল মুক্তাদীর বলয়ের লোকদের প্রাধান্য। এ নিয়ে আরিফ অনুসারীরা অনেকটা ক্ষুব্ধ হয়ে ওঠেন।
এ ব্যাপারে নাম প্রকাশ না করে মুক্তাদীর অনুসারী নগর বিএনপির শীর্ষস্থানীয় এক নেতা সমকালকে বলেন, সিলেটে বিএনপির রাজনীতির প্রেক্ষাপট ভিন্ন। আরিফুল হক দুই মেয়াদে মেয়র ছিলেন। এটি তাঁর জন্য একটি প্লাস পয়েন্ট। এখন নির্বাচন থেকে সরে যাওয়ায় আরও নতুন পয়েন্ট যুক্ত হয়েছে। তাঁর ধারণা, আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগেই মুক্তাদীর-আরিফের ভুল বোঝাবুঝির অবসান হবে। এ নিয়ে তাঁদের ভেতরে শঙ্কা কাজ করছে বলেও জানান ওই নেতা।
মন্তব্য করুন