সমুদ্রে তেল ও গ্যাস অনুসন্ধানে আন্তর্জাতিক কোম্পানিগুলোকে (আইওসি) আকৃষ্ট করার উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। এ জন্য মডেল উৎপাদন ও বণ্টন চুক্তি (পিএসসি) ২০২৩ সংশোধন করা হয়েছে। এরই মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রের কোম্পানি এক্সন মবিলসহ একাধিক আইওসি দেশে তেল-গ্যাস অনুসন্ধানে আগ্রহ প্রকাশ করেছে। তাই সরকার দ্রুত মডেল পিএসসি অনুমোদন করতে চায়।
জ্বালানি বিভাগ সূত্র জানায়, সংশোধিত মডেল পিএসসির খসড়া আজ বুধবার প্রধানমন্ত্রীর কাছে উপস্থাপন করা হবে। প্রধানমন্ত্রীর অনুমোদন পেলে তা তোলা হবে মন্ত্রিসভার বৈঠকে। আগামী জুন মাসের মধ্যে পিএসসি চূড়ান্ত করে আন্তর্জাতিক দরপত্র আহ্বান করা হবে। পাশাপাশি আগ্রহী কোম্পানিগুলোকে বিদ্যুৎ ও জ্বালানি সরবরাহ বিশেষ বিধানের আওতায় সমঝোতার মাধ্যমে কাজ দেওয়া হতে পারে।

বঙ্গোপসাগরের বাংলাদেশ অংশকে ২৬টি ব্লকে ভাগ করা হয়। এর মধ্যে অগভীর সমুদ্রে রয়েছে ১১টি ও গভীর সমুদ্রে ১৫টি ব্লক। মাত্র দুটি ব্লকে ভারতীয় কোম্পানি ওএনজিসি কাজ করছে। চলমান পিএসসিতে গ্যাসের দাম নিয়ে আন্তর্জাতিক কোম্পানিগুলোর আপত্তি থাকায় সরকার তা সংশোধনের উদ্যোগ নেয়। ২০২২ সালের মে মাসে সিঙ্গাপুরের প্রতিষ্ঠান উড ম্যাকেঞ্জিকে পিএসসি সংশোধনে পরামর্শদাতা নিয়োগ দেয় সরকার। প্রায় চার মাস কাজ শেষে তারা প্রতিবেদন জমা দেয়। সে অনুসারে পিএসসি পর্যালোচনা করে খসড়া জ্বালানি বিভাগে পাঠায় পেট্রোবাংলা। এর পর আইন মন্ত্রণালয়ের মতামত নিয়ে তা প্রধানমন্ত্রীর কাছে পাঠানো হয়।

২০১৯ সালের মডেল পিএসসি অনুযায়ী, অগভীর ও গভীর সমুদ্রের প্রতি হাজার ঘনফুট গ্যাসের দাম যথাক্রমে ৫ দশমিক ৬ এবং ৭ দশমিক ২৫ ডলার। সংশোধিত পিএসসিতে প্রতি হাজার ঘনফুট গ্যাসের দাম ধরা হয়েছে ব্রেন্ড ক্রুডের ১০ শতাংশ দরের সমান, অর্থাৎ বিশ্ববাজারে ক্রুডের দাম ১০০ ডলার হলে গ্যাসের দাম হবে ১০ ডলার।
বর্তমান পিএসসি অনুসারে অগভীর সমুদ্রে প্রাপ্ত গ্যাসে বাংলাদেশের হিস্যা ৫০ থেকে ৮০ শতাংশ এবং গভীর সমুদ্রে ৫০ থেকে ৭৫ শতাংশ রয়েছে। সংশোধিত পিএসসির খসড়ায় বাংলাদেশের হিস্যার অংশ অগভীর সমুদ্রে ৪০ থেকে ৬৫ শতাংশ এবং গভীর সমুদ্রে ৩৫ থেকে ৬০ শতাংশের প্রস্তাব রাখা হয়েছে।

এদিকে তেল-গ্যাস অনুসন্ধানে সমুদ্রের বেশ কিছু ব্লক এক্সন মবিলকে দেওয়ার বিষয়ে বাংলাদেশের ইতিবাচক মনোভাব রয়েছে বলে জানিয়েছে একাধিক সূত্র। সম্প্রতি এক্সন মবিল গভীর সমুদ্রের ১৫টি ব্লকে তেল ও গ্যাস অনুসন্ধানে আগ্রহ দেখিয়ে পেট্রোবাংলায় প্রস্তাব জমা দেয়। পেট্রোবাংলা তা জ্বালানি বিভাগে পাঠায়। এর পর সরকারের উচ্চ পর্যায়ে এই প্রস্তাবনা নিয়ে আলোচনা হয়। এক্সনও সরকারের বিভিন্ন পর্যায়ে যোগাযোগ করে।

সূত্র জানিয়েছে, এক্সন মবিলের প্রস্তাবকে ইতিবাচক হিসেবে দেখছে সরকার। ফলে সাগরের একাধিক ব্লকের ইজারা পেতে পারে মার্কিন কোম্পানিটি।