- সারাদেশ
- ১৫২ দিনে পাঠদান বন্ধ ১০৩ দিন
১৫২ দিনে পাঠদান বন্ধ ১০৩ দিন

চলতি শিক্ষাবর্ষের শুরুতেই বড় ধাক্কা খেয়েছে শেরপুরের মাধ্যমিক পর্যায়ের ৪৪ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। এর মধ্যে রয়েছে ৩৬টি মাধ্যমিক বিদ্যালয়, ৫টি মাদ্রাসা ও ৩টি টেকনিক্যাল স্কুল। এসব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের প্রায় ৩৫ হাজার শিক্ষার্থীর পাঠদান বন্ধ রয়েছে ১০৩ দিন। এ ছাড়া এসএসসি পরীক্ষার্থীদের ওপর নজর রাখার দায়িত্ব (ইনভিজিলেটর বা তত্ত্বাবধায়ক) পালন করার কারণে জেলার ১৮০টি মাধ্যমিক বিদ্যালয়, ১০৩টি দাখিল ও আলিম মাদ্রাসায়, ৩টি টেকনিক্যাল স্কুলে পাঠদান ব্যাহত হচ্ছে।
বছর শুরুর ১৫২ দিনের মধ্যে ১০৩ দিন পাঠদান বন্ধ থাকায় অপূরণীয় ক্ষতি হচ্ছে শিক্ষার্থীদের। বই পেতে দেরি হওয়ায় জানুয়ারি মাসে পাঠদান করা যায়নি। গত ২৩ মার্চ থেকে উল্লিখিত প্রতিষ্ঠানগুলোতে ছুটি শুরু হয়। আগামী ৪ জুন পর্যন্ত ছুটি অব্যাহত থাকবে। এসএসসির ব্যবহারিক পরীক্ষা শেষ হলে ৫ জুন পাঠদান শুরু হবে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, গত মার্চ থেকে পবিত্র রমজানের ছুটি শুরু হয়। এ ছুটি শেষ হওয়ার পরপরই ৩০ এপ্রিল থেকে এসএসসি পরীক্ষার কারণে বন্ধ ঘোষণা করা হয় জেলার ৪৪টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। অন্যদিকে প্রতিটি মাধ্যমিক বিদ্যালয় থেকে ২৫ জন পরীক্ষার্থীর জন্য একজন করে শিক্ষককে পরীক্ষা হলে তত্ত্বাবধায়ক হিসেবে দায়িত্ব দেওয়া হয়। এ কারণে জেলার ১৩৯টি বিদ্যালয়ের পাঠদানও ব্যাহত হচ্ছে।
শিক্ষক, শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের দাবি, বছরের শুরুতে ১০৩ দিন পাঠদান বন্ধ থাকায় মারাত্মক ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছে শিক্ষার্থীরা। তারা সারাদিন ঘোরাফেরা, মোবাইল ফোন নিয়ে ব্যস্ত থাকছে। ফোন আসক্তি বেড়ে যাচ্ছে।
সরকারি ভিক্টোরিয়া একাডেমির ষষ্ঠ শ্রেণির শিক্ষার্থী সৃজান হোসেন জানায়, বিদ্যালয় বন্ধ থাকায় নতুন কারিকুলামের পড়া শুরু করতে পারেনি। নিজে নিজে কিছু পড়ে, খেলাধুলা করে পার করে দিয়েছে দুই মাস।
সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের অষ্টম শ্রেণির শিক্ষার্থী তনুশ্রী ভট্টাচার্য জানায়, দীর্ঘদিন বিদ্যালয় বন্ধ থাকায় তার পড়ালেখার ইচ্ছা কমে গেছে। স্কুল খোলার পরপরই ৭ জুন থেকে তার অর্ধবার্ষিক পরীক্ষা। পরীক্ষার কথা ভেবে চিন্তিত সে।
শিক্ষক রাবেয়া আক্তার জাহানের ভাষ্য, জানুয়ারি থেকে তো পড়ালেখাই নেই। বই আসতে দেরি হয়েছে এ বছর। এ ছাড়া রয়েছে নানা রকম বন্ধ। তাঁর অভিমত, এসএসসি পরীক্ষার জন্য এমনভাবে কেন্দ্র করা উচিত যাতে পাঠদান বন্ধ না হয়।
কথা হয় ঝিনাইগাতী উপজেলার মালিঝিকান্দা উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক রবিউল ইসলামের সঙ্গে। তাঁর ভাষ্য, বিদ্যালয় বন্ধের কারণে নানা অনিয়মে জড়িয়ে পড়ছে শিক্ষার্থীরা। কেউ মোবাইল ফোনে আসক্ত হয়ে পড়ছে। নানা রকম বাজে ভিডিও, ছবি দেখে পথভ্রষ্ট হচ্ছে। কেউ মাদকে জড়িয়ে পড়ছে।
বছরের শুরুতে দীর্ঘ সময় স্কুল বন্ধের ক্ষতি শিক্ষার্থীদের অনেক পিছিয়ে দেয়। তারা পাঠ্যসূচি শেষ করতে পারে না। এমন দাবি শেরপুর পুলিশ লাইন্স একাডেমি ফর ক্রিয়েটিভ এডুকেশন (প্লেস) স্কুলের প্রধান শিক্ষক আবুল কালাম আজাদের। তিনি বলেন, ‘পবিত্র রমজান মাসে আমরা সহনীয় মাত্রায় পাঠদান করি। ক্লাস পিরিয়ড কমিয়ে দিয়ে সকাল সকাল ছুটি দিয়ে দেই। এতে কারও কষ্ট হয় না।’ সরকারি-বেসরকারি সব প্রতিষ্ঠানে এমন ক্লাস নেওয়ার পরামর্শ তাঁর।
শেরপুর আমির আলী সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক গোলাম মোস্তফা হেলাল বলেন, গ্রীষ্ম ও শীতকালীন ছুটিসহ অন্যান্য ছুটি এক মাসের বেশি। সেটি কমিয়ে আনলে রমজান মাসের ছুটি থাকলেও সমস্যা হবে না। তাঁর ভাষ্য, এসএসসি পরীক্ষার জন্য উপজেলাভিত্তিক আলাদা কেন্দ্র করলে স্কুলের পাঠদান স্বাভাবিক থাকবে।
শেরপুর সরকারি ভিক্টোরিয়া একাডেমির প্রধান শিক্ষক মো. হামিদুজ্জামান জানান, জেলা ও উপজেলাতে পরীক্ষা কেন্দ্র থাকলে পাঠদান বন্ধ হবে না। এ ছাড়া প্রতিটি স্কুলে অতিরিক্ত শিক্ষক নিয়োগ দিলে পাঠদান চালু থাকবে।
অতিরিক্ত বন্ধের কারণে পড়ালেখায় ক্ষতির অভিযোগ স্বীকার করেন জেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মো. রেজুয়ান। তাঁর দাবি, বিদ্যালয় খোলার পর অতিরিক্ত ক্লাস নিয়ে ক্ষতিপূরণের জন্য প্রতিটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের প্রধানদের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। জেলা ও উপজেলা সদরে এসএসসি পরীক্ষার জন্য আলাদা কেন্দ্র স্থাপনের জন্য জেলা প্রশাসকের কাছে প্রস্তাবনা দেওয়া হয়েছে। বিভিন্ন বন্ধের সময় বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে পাঠদানের অভিযোগ সম্পর্কে তিনি বলেন, এটা নীতি পরিপন্থি। কিন্তু বিভিন্ন কারণে কিছুই করার থাকে না তাঁদের।
অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (শিক্ষা ও আইসিটি) মাহমুদুল হাসান বলেন, সরকারের তরফ থেকে চলতি বছর এসএসসি পরীক্ষা ২৩ দিনে শেষ করার সিদ্ধান্ত ছিল। কিন্তু প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে সম্ভব হয়নি।
মন্তব্য করুন