- সারাদেশ
- একমাত্র হরিণটিও জবাই করে ভাগ-বাটোয়ারা
মধুটিলা ইকোপার্কের চিড়িয়াখানা
একমাত্র হরিণটিও জবাই করে ভাগ-বাটোয়ারা

ময়মনসিংহ বন বিভাগের আওতাধীন শেরপুরের নালিতাবাড়ী উপজেলার গারো পাহাড়ে অবস্থিত মধুটিলা ইকোপার্ক। এর ভেতরে তৈরি aকরা হয়েছে মিনি চিড়িয়াখানা। বন থেকে অসুস্থ প্রাণী উদ্ধার করে সেখানে সেবা-শুশ্রূষার নামে রেখে বাণিজ্যিক প্রদর্শনীর আয়োজন করা হয়েছে। দর্শনীয় স্থাপনাটি পার্কের নামে ইজারা দেওয়া হলেও সেখানে অনুমোদনহীন চিড়িয়াখানার নামে চলে অন্য কারবার! অবৈধভাবে বন্যপ্রাণী বিক্রি, জবাই করে খেয়ে ফেলাসহ নানা অভিযোগ আছে এর তত্ত্বাবধায়কের বিরুদ্ধে। এবার একমাত্র চিত্রা হরিণটিও জবাই করে ভাগ-বাটোয়ারার ঘটনা ঘটেছে। এ অভিযোগে বাদশা মিয়া নামে এক যুবককে গ্রেপ্তার করে গতকাল মঙ্গলবার আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়েছে।
জানা গেছে, মধুটিলা ইকোপার্ক ও মিনি চিড়িয়াখানা তত্ত্বাবধান করেন মধুটিলা রেঞ্জ কর্মকর্তা রফিকুল ইসলাম। তিনি দর্শনীয় স্থাপনা দুটি লিজ দেন, প্রাণীদের খাবারের জোগান দেন এবং প্রাণী বিক্রি বা নতুন করে আনার বিষয়গুলো দেখভাল করেন। এক ব্যবসায়ীকে পার্ক ও চিড়িয়াখানায় প্রবেশের টিকিট বিক্রির জন্য ইজারা দেওয়া হয়েছে। তাঁরা দিনের নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত টিকিট দিয়ে দর্শনার্থী প্রবেশের ব্যবস্থা করে থাকেন। এর পর তাঁরা সেখান থেকে চলে যান। এর বাইরে সন্ধ্যা থেকে পরদিন সকাল পর্যন্ত এগুলো ব্যবস্থাপনার দায়িত্ব রেঞ্জ কর্মকর্তা রফিকুলের।
পার্কের আশপাশের লোকজনের অভিযোগ, এখানে চিড়িয়াখানা করার অনুমোদন নেই। তার পরও কিছু প্রাণী আটকে রেখে নানা কারবার করা হচ্ছে। মিনি চিড়িয়াখানায় দুটি চিত্রা হরিণ ছিল। কিছুদিন আগে একটির দেহাবশেষ উদ্ধার হয়েছে বলে কর্তৃপক্ষ দাবি করে। আসলে সেটি জবাই করে খাওয়া হয়েছে। গত রোববার অবশিষ্ট হরিণটিও জবাই করে মাংস ভাগ-বাটোয়ারা হয়েছে। অন্তত ৫৫ কেজি ওজন ছিল হরিণটির। এর আগেও সেখান থেকে শকুন, সাপসহ অনেক প্রাণী উধাও হয়ে গেছে। জানতে চাইলে বাইরে বিক্রি করা হয়েছে, বনের মধ্যে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে, মারা গেছে বলে নানা অজুহাত দেওয়া হয়। আবার পার্কের ভেতর থেকে মাটি খুঁড়ে বালু ও নুড়িপাথর তুলে বিক্রি করা হয়। কিন্তু রেঞ্জ কর্মকর্তাদের জবাবদিহির আওতায় আনার কেউ নেই।
গ্রেপ্তার বাদশা মিয়ার বাড়ি মধুটিলা ইকোপার্ক থেকে প্রায় পাঁচ কিলোমিটার দূরে। নালিতাবাড়ীর বাতকুচি নামাপাড়ায় তাঁর বাড়িতে গিয়ে এক বৃদ্ধাকে ঘরে শুয়ে থাকতে দেখা যায়। তাঁর কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘বাদশা আমার ছেলে। কিন্তু তাকে কেন পুলিশ ধরে নিয়ে গেছে, আমি জানি না।’ স্থানীয়রা দাবি করেন, বাদশা অত্যন্ত নিরীহ পরিবারের সন্তান। তিনি অনেক সাহসী, সাপ ধরায় ওস্তাদ। এ জন্য এলাকায় তাঁর বিশেষ পরিচিতি আছে। সম্ভবত বন্যপ্রাণী শিকার ও হরিণের মাংস নিয়ে কারবার করে এমন কোনো সিন্ডিকেট তাঁকে ভাড়ায় রাতের বেলা ওই পার্কে পাঠিয়েছিল, হরিণ ধরে জবাই করার জন্য। বিষয়টির নিরপেক্ষ তদন্ত হলে প্রকৃত সত্য বেরিয়ে আসবে।
মধুটিলা রেঞ্জ কর্মকর্তা রফিকুল বলেন, গত ২৮ মে রাতের আঁধারে কে বা কারা চিড়িয়াখানার একমাত্র হরিণটি জবাই করে মাংস ভাগ করে নিয়ে গেছে। পরদিন ভোরে বিষয়টি টের পেয়ে তদন্ত করা হয়। এ ঘটনায় সাত থেকে আটজনের সম্পৃক্ততা পাওয়া গেছে। তাঁদের মধ্যে একজনকে সোমবার গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তাঁর নামে বন্যপ্রাণী সংরক্ষণ আইনে মামলা করেছি। তাঁর দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে হরিণটির চামড়া উদ্ধার করেছে বন বিভাগ। এ ঘটনায় জড়িত অন্যদের গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে।
তিনটি সুরক্ষিত সীমানাপ্রাচীর ও তিনটি দরজা পেরিয়ে কীভাবে চিড়িয়াখানা থেকে হরিণ উধাও হয়ে গেল, সে বিষয়ে রফিকুল বলেন, দুর্বৃত্তরা সব পারে। তবে আগের হরিণটি হয়তো হিংস্র শেয়াল খেয়ে ফেলেছে। এখান থেকে অবৈধভাবে কোনো প্রাণী বিক্রি করা হয় না। বন বিভাগের কেউ এসব কাজ করেন না।
মন্তব্য করুন