উলিপুরে জাইকার অর্থায়নে ৯ কোটি টাকার তিনটি গ্রামীণ সড়কের কাজে অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে আওয়ামী লীগের এক নেতার বিরুদ্ধে। মাটির বদলে বালু দিয়ে কাজ করায় বৃষ্টিতে অনেক স্থান ব্যবহারের অনুপযোগী হয়ে গেছে। ফলে বেড়েছে দুর্ভোগ। কাজটি একাধিক হাত বদল হওয়ায় এক বছর পর বর্ধিত সময়েও কাজ শেষ হচ্ছে না। এতে বরাদ্দের টাকা ফেরত যাওয়ার শঙ্কা দেখা দিয়েছে।

২০২১-২২ অর্থবছরে জাইকার অর্থায়নে দুর্যোগ ঝুঁকি হ্রাস বর্ধিতকরণ ব্যবস্থাপনা প্রকল্পের অধীনে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদপ্তর তিনটি সড়কে মাটি ভরাট, প্রশস্ত ও এইচবিবি করার প্রক্রিয়া শুরু করে। ধরনীবাড়ী, হাতিয়া ও সাহেবের আলগা ইউনিয়নে এ কাজে বরাদ্দ দেওয়া হয় ৯ কোটি টাকা।

রাঙ্গামাটির ছালেহা এন্টারপ্রাইজ, চট্টগ্রামের শাহ জব্বারিয়া কনস্ট্রাকশন ও নোয়াখালীর মোস্তফা অ্যান্ড সন্স এক বছরে শেষ করার শর্তে গত বছরের ২১ এপ্রিল কার্যাদেশ পায়। তবে তারা কাজ না করে উপজেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক রন্জন কুমার ভোলার কাছে বিক্রি করে। তিনি মাটির কাজ ধরনীবাড়ী ইউপি চেয়ারম্যান এরশাদুল হক ও সাহেবের আলগার চেয়ারম্যান মোজাফ্ফর রহমানকে দেন।

নির্দিষ্ট সময়ে কাজ শেষ না হওয়ায় আগামী ৩০ জুন পর্যন্ত সময় বাড়ানো হয়েছে। তবে নকশাবহির্ভূত অনিয়ম, দুর্নীতি ও মান নিয়ে জাইকার সঙ্গে মতবিরোধ দেখা দিয়েছে। মধুপুর গ্রামের শফিকুল ইসলাম ছক্কু বলেন, মাটির বদলে বালু দেওয়ায় প্রতিবাদ করেছেন স্থানীয়রা। ফলে তাঁদের সঙ্গে চেয়ারম্যানের লোকজনের সংঘর্ষ হয়েছে। এ ঘটনায় স্থানীয়রা মামলা করেছেন।

ধরনীবাড়ী ইউপি চেয়ারম্যান এরশাদুল হক বলেন, তাঁকে মাটির কাজ দেওয়া হয়েছে। তবে বালু ফেলা নিয়ে স্থানীয়দের সঙ্গে শ্রমিকদের সংঘর্ষ হয়। কোনো বিল পাননি তিনি। সাহেবের আলগার ইউপি চেয়ারম্যান মোজাফ্ফর রহমান জানান, চরে মাটি না থাকায় বালু ফেলা হয়েছে। বালুর রাস্তা টিকবে কিনা তা ঠিকাদার ও জাইকা বলতে পারবে।

ডিডের মাধ্যমে কাজ কেনার কথা স্বীকার করেছেন প্রকল্পের সাব কন্ট্রাকটর রন্জন কুমার মজুমদার। তিনি বলেন, কালভার্ট, প্যারাসাইড ও গাইড ওয়ালের কাজ চলছে। শুরুতে কিছু ত্রুটি হলেও ঠিকমতো কাজ হচ্ছে। বিল না পাওয়ায় কাজ করা যাচ্ছে না।
ছালেহা এন্টারপ্রাইজের মালিক জাহাগীর কামাল বলেন, শুরুতে আওয়ামী লীগ নেতা রন্‌জন কুমার প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করায় বাধ্য হয়ে তাঁকে কাজ দিয়েছেন। অনিয়ম ও নিম্নমানের কাজের কথা স্বীকার করে তিনি বলেন, ফান্ড না থাকায় বিল দেওয়া যাচ্ছে না। ৩০ জুন মেয়াদ শেষ হতে যাওয়ায় বিল পাওয়া নিয়ে সংশয়ে আছেন তিনি।

জাইকার প্রকৌশলী এ কাজের তদারকি করেন জানিয়ে উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা সিরাজদৌলা বলেন, ৫০-৬০ ভাগ কাজ হয়েছে। বিল দেওয়া হয়েছে কিনা তা তিনি জানেন না। ইউএনও শোভন রাংসা বলেন, তিনি কিছু জানেন না। খোঁজ নিয়ে ব্যবস্থা নেবেন।

এ বিষয়ে জাইকার দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রকৌশলী হারুনুর রশিদ বলেন, প্রকৃত ঠিকাদারকে তিনি চেনেন না। সড়কে মাটির বদলে বালু, পাথরের স্থলে খোয়া এবং নিম্নমানের রড, সিমেন্ট ও বালু ব্যবহার হয়েছে। নকশা পরিবর্তন করায় বিল দেওয়া হয়নি। মাটির কাজের ৬০ লাখ টাকা দেওয়া হয়েছে।
প্রকল্পের ডেপুটি পরিচালক মোস্তাফিজার রহমান বলেন, ভালো কাজ না হলে বিল পাবে না। মেয়াদের মধ্যে কাজ না হলে টাকা ফেরত যাবে। সাব কন্ট্রাক্ট দেওয়ার বিধান নেই।