আলোকসজ্জায় বিয়েবাড়ির সাজ। ব্যানারে লেখা ‘চ্যাম্পিয়ন’। মোহামেডান স্পোর্টিং ক্লাবটি কত বছর পরই না এমন উৎসবের রঙে রঙিন হলো। মঙ্গলবার কুমিল্লায় ফেডারেশন কাপের ফাইনালে চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী ঢাকা আবাহনীকে হারিয়ে ৯ বছর পর ফুটবলের কোনো প্রতিযোগিতায় চ্যাম্পিয়ন হয়েছে সাদা-কালো শিবির। আর ১৪ বছর পর ফেডারেশন কাপে চ্যাম্পিয়ন হওয়ায় রাতভর আনন্দে বুঁদ হয়ে ছিলেন সুলেমান দিয়াবাতে-আহসান হাবিব বিপুরা।

ক্লাবের এই আনন্দকে মাটি করে দেওয়ার মতো একটি দুঃসংবাদও রয়েছে। লাইসেন্স না করায় ফেডারেশন কাপের চ্যাম্পিয়ন হয়েও খেলা হবে না এএফসির ক্লাব কাপে। নিজেদের অভ্যন্তরীণ সমস্যার কারণে এএফসি ক্লাব লাইসেন্স করা হয়নি সাদা-কালো শিবিরের। সে কারণে ফেডারেশন কাপে চ্যাম্পিয়ন হয়েও আন্তর্জাতিক এ ক্লাব প্রতিযোগিতায় খেলা হচ্ছে না। কর্মকর্তাদের উদাসীনতার বলি হচ্ছেন খেলোয়াড়রা। এএফসি কাপে খেলতে না পারার সংবাদটি শোনার পর ফুটবলারদের মধ্যে হতাশা কাজ করছে। আর চিরপ্রতিদ্বন্দ্বীদের কাছে হেরেও আবাহনীর স্বস্তি এএফসি কাপের টিকিট পাওয়াতে। প্রিমিয়ার লিগে রানার্সআপ হওয়া ছাড়াও ক্লাব লাইসেন্সের শর্তপূরণ করায় আকাশি-নীল জার্সিধারীরা খেলবে এএফসি ক্লাব কাপের প্লে-অফে।

মহাদেশীয় প্রতিযোগিতায় দু’ভাবে অংশ নেয় এএফসির অধিভুক্ত দেশের ক্লাবগুলো। একটি এএফসি চ্যাম্পিয়ন্স লিগ, অন্যটি এএফসি কাপ। এশিয়ান ফুটবল কনফেডারেশনের নতুন নিয়ম অনুযায়ী এবার এই মহাদেশীয় প্রতিযোগিতায় খেলার জন্য তিনটি স্লট পেয়েছে বাংলাদেশ। প্রিমিয়ার লিগে চ্যাম্পিয়ন হওয়া ছাড়াও ক্লাব লাইসেন্স থাকায় বসুন্ধরা কিংস সরাসরি এএফসি কাপে খেলবে। চ্যাম্পিয়ন হওয়ার সুবাদে আরেকটি স্লট এএফসি চ্যাম্পিয়ন্স লিগের প্লে-অফে খেলবে তারা।

এবারের তিনটি স্লটে বসুন্ধরা আর আবাহনীই থাকছে। প্রতিবছরই ক্লাব লাইসেন্সের জন্য আবেদন করতে হয়। তারই ধারাবাহিকতায় লাইসেন্স পাওয়ার জন্য এবার আবেদন করে বসুন্ধরা, আবাহনী, শেখ জামাল ও শেখ রাসেল। এর মধ্যে লাইসেন্স পাওয়ার সব শর্ত পূরণ করেছে বসুন্ধরা আর আবাহনী। এএফসির কাছে পাঠানো কাগজপত্রে সব শর্ত পূরণ না করায় লাইসেন্স পায়নি শেখ জামাল ও শেখ রাসেল। অবাক করা বিষয় হলো, ঐতিহ্যবাহী মোহামেডান স্পোর্টিং ক্লাব লাইসেন্সের জন্য আবেদন করেও মার্চের মাঝামাঝি তা প্রত্যাহার করে নেয়।

এজন্য ক্লাবের দুরবস্থাকে সামনে এনেছেন মোহামেডান স্পোর্টিং ক্লাবের টিম লিডার আবু হাসান চৌধুরী প্রিন্স, ‘আমরা আবেদন করেছিলাম ঠিকই; কিন্তু ক্লাবের অবস্থা খারাপ দেখে পরে ফেডারেশনে চিঠি দিয়ে সেই আবেদন প্রত্যাহার করেছি। এবার আর এএফসি কাপে খেলা হচ্ছে না। এই জন্য খারাপ লাগছে। সবার মন খারাপ। চেষ্টা করব আগামীতে যেন খেলতে পারি।’ সুযোগ নেই জানা সত্ত্বেও বাফুফের সঙ্গে লাইসেন্স নিয়ে আলোচনা করতে চান প্রিন্স, ‘বাফুফের সঙ্গে আমরা বসব, কোনো উপায় খুঁজে বের করা যায় কিনা।’

আসলে বাফুফের সঙ্গে আলোচনা করে কোনো লাভ হবে না। কারণ, লাইসেন্স পাওয়ার জন্য আবেদনের যে সময় শেষ হয়ে গেছে আগেই। একটা ঐতিহ্যবাহী ক্লাব হয়ে এতদিনেও কেন ক্লাব লাইসেন্সের শর্ত পূরণ করতে পারেননি কর্তারা, তা নিয়ে হতাশ মোহামেডান সমর্থকরা। বাস্তবে বেশ কয়েক বছর ধরে সাদামাটা দল গঠন করে আসছে মোহামেডান। এএফসির লাইসেন্স পাওয়ার জন্য যে শর্তগুলো পূরণ করতে হয়, তার বেশিরভাগই নেই তাদের।

এএফসি কাপের লাইসেন্স পেতে একটি ক্লাবকে ‘এ’ লাইসেন্সধারী হেড কোচ, যুবদল, যুবদলের কোচ এবং তাদের খেলায় অংশগ্রহণ, দলের চিকিৎসক বা ফিজিওকে দায়িত্ব দেওয়ার প্রমাণপত্র, খেলোয়াড়দের সঙ্গে চুক্তি, নিজস্ব হোম ভেন্যু এবং অনুশীলন মাঠ থাকা বাধ্যতামূলক। এর সঙ্গে ক্লাবের সাধারণ সম্পাদক, পূর্ণ সময়ের জন্য অর্থ কর্মকর্তা নিয়োগ, নিরাপত্তা কর্মকর্তা, মিডিয়া কর্মকর্তা, ক্লাবের আইনগত ভিত্তি, ক্লাবের মালিকানা, বার্ষিক বাজেট এবং অডিটকৃত সেই বার্ষিক বাজেটের কপি এএফসিতে জমা দিতে হয়।

এর বেশিরভাগই নেই মোহামেডানের। এবার যেহেতু ৯ বছর পর শিরোপা খরা ঘুচেছে, ভবিষ্যতে এসব শর্ত পূরণের সব চেষ্টা করা হবে বলে জানান প্রিন্স। কিন্তু আগামীতে যে ফেডারেশন কাপ আর লিগে চ্যাম্পিয়ন হবে মোহামেডান তার তো নিশ্চয়তা নেই। তাই তো অনেক বছর পর উৎসবের উপলক্ষ্য পেয়েও এএফসি কাপে খেলতে না পারার হতাশা মোহামেডানের।

/এমএইচ/