- সারাদেশ
- নদীর তীর দখলে প্রতিযোগিতা
নদীর তীর দখলে প্রতিযোগিতা

মেরিন ড্রাইভ রোডের মোংলা নদীর পাড় এলাকায় প্রভাবশালীর মার্কেট - সমকাল
জানা গেছে, শহরের পাশ দিয়ে বহমান মোংলা নদী ভরাট হয়ে যাওয়ায় সেখানে চর পড়েছে। এ চরের সরকারি জায়গা দখল করতে প্রভাবশালী একটি মহল মরিয়া। তারা অবাধে নদীরপাড়ের জায়গা দখল করে নানা ধরনের অবৈধ স্থাপনা নির্মাণ করে চলেছে। চরের জায়গা দখল করে কে কত কাঁচা-পাকা স্থাপনা নির্মাণ করতে পারে তা নিয়ে রীতিমতো প্রতিযোগিতা চলছে। মেরিন ড্রাইভ রোডের নদীর পাড় এলাকায় কোনো কোনো প্রভাবশালী ব্যক্তি ইতোমধ্যে মার্কেট পর্যন্ত গড়ে তুলেছেন।
এ এলাকায় গতকাল বৃহস্পতিবার গিয়ে জানা যায়, সপ্তাহখানেক ধরে মোংলা পোর্ট পৌরসভার ১ নম্বর ওয়ার্ডের সাবেক কমিশনার ও আওয়ামী লীগ নেতা হাবিবুর রহমান মেরিন ড্রাইভ রোডের লেবার জেটিসংলগ্ন নদীর পাড় এলাকায় স্থাপনা তৈরি করছেন। রাস্তার পাশে টিনের বেড়া দিয়ে তিনি সেমিপাকা মার্কেট নির্মাণ করছেন। অভিযোগ উঠেছে, তাঁর দেখাদেখি আরও কয়েকজন প্রভাবশালী ব্যক্তি ওই এলাকায় অবৈধ স্থাপনা নির্মাণ শুরু করেছেন। কেউ কেউ নির্মাণের প্রস্তুতি নিচ্ছেন।
তবে সাবেক কমিশনার হাবিবুর রহমানের দাবি, যে জায়গায় তিনি স্থাপনা নির্মাণ করছেন তা জেলা প্রশাসনের নয়, সেটি বন্দর কর্তৃপক্ষের। জরুরি অবস্থায় উচ্ছেদের আগে এ জায়গায় তাঁর স্থাপনা ছিল। এখন অনেকেই নদীর পাড়ে স্থাপনা নির্মাণ করায় তিনিও স্থাপনা তৈরি করছেন। এ জায়গা তাঁর নামে বরাদ্দ না হলেও তিনি বরাদ্দের জন্য আবেদন করেছেন বলে জানান।
অভিযোগ রয়েছে, দিনের পর দিন অবৈধ স্থাপনা তৈরি করা হলেও সাধারণত কেউ বাধা দেয় না। কোনো কোনো সময় সংশ্লিষ্টদের কেউ বাধা দিলেও তাঁকে মোটা অঙ্কের উৎকোচ দিয়ে ম্যানেজ করে নির্মাণকাজ চালানো হয়।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে জরুরি অবস্থা চলাকালে অবৈধ দখল ও স্থাপনার দায়ে স্থানীয় প্রশাসন নদীর পাড়ের বিভিন্ন জায়গায় উচ্ছেদ অভিযান চালায়। এ সময় অধিকাংশ অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ হয়। উচ্ছেদ হওয়া স্থাপনার মধ্যে মোংলা বন্দর কর্তৃপক্ষ থেকে বরাদ্দ নেওয়া কিছু স্থাপনাও এ সময় ভাঙচুর করা হয়। পরে এ নিয়ে উচ্চ আদালতে মামলা হলে আদালত বন্দর কর্তৃপক্ষের বরাদ্দের জায়গা বৈধ বলে রায় দেন। এর পরপরই প্রভাবশালী ব্যক্তিরা বন্দর কর্তৃপক্ষ বা জেলা প্রশাসন থেকে বরাদ্দ না নিয়েও সংশ্লিষ্টদের ম্যানেজ করে নদীপাড়ের জায়গা দখল করে স্থাপনা নির্মাণের মচ্ছব বসিয়েছে।
এ ব্যাপারে মোংলার সহকারী কমিশনার (ভূমি) মো. হাবিবুর রহমান বলেন, নদীপাড়ের জায়গা ভূমি মন্ত্রণালয়ের অধীন। এ জায়গা কারও নামে বরাদ্দ দেওয়া হয়নি। সাবেক কমিশনার হাবিবুর রহমান যে জায়গা দখল করে অবৈধভাবে স্থাপণা নির্মাণ করছেন সেখানে ভূমি অফিস থেকে দু’বার লোক পাঠিয়ে কাজ না করার জন্য নিষেধ করা হয়েছে। নিষেধ উপেক্ষা করে তাঁরা কাজ চালিয়ে যাচ্ছেন। বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানিয়ে আইনি ব্যবস্থা নেওয়ার প্রক্রিয়া চলছে।
অপরদিকে মোংলা বন্দর কর্তৃপক্ষের সহকারী ব্যবস্থাপক (সম্পত্তি) মোস্তফা জামান জানান, পুরাতন বন্দরের নদীর পাড়ের কোনো জায়গা বন্দর থেকে বরাদ্দ দেওয়া হয়নি। কেউ যদি বরাদ্দের আগে বন্দরের জায়গা দখল করে অবৈধভাবে স্থাপনা তৈরি করে তাহলে তা বন্দর কর্তৃপক্ষের পক্ষ থেকে শিগগিরই উচ্ছেদ অভিযান চালিয়ে উদ্ধার করা হবে।
মন্তব্য করুন