- সারাদেশ
- ৯ মাস ধরে বেতন পান না চিকিৎসকরা
৯ মাস ধরে বেতন পান না চিকিৎসকরা

ধুঁকে ধুঁকে চলছে সৈয়দপুর ফাইলেরিয়া হাসপাতাল। বিদেশি সাহায্য বন্ধ, পরিচালনা কমিটি নিয়ে দ্বন্দ্ব, কর্মকর্তা-কর্মচারীদের জামানতের টাকা আত্মসাৎ, বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্নসহ নানা কারণে হাসপাতালটি এখন বন্ধের উপক্রম। টানা ৯ মাস বেতন-ভাতা পাচ্ছেন না কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। এ পরিস্থিতিতে বিপাকে পড়েছেন উত্তরাঞ্চলের প্রায় ৭০০ গোদ রোগী।
হাসপাতালের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, চিকিৎসকসহ ৩৫ জন কর্মচারীর কাছে ফেরতযোগ্য জামানতের কথা বলে ৫০ লাখ টাকা নিয়ে উধাও হয়েছেন হাসপাতালের পরিচালক। কর্মচারীরা বেতন-ভাতা পাচ্ছেন না। বকেয়া বেতনের দাবিতে সম্প্রতি তাঁরা কর্মবিরতি পালন করলেও টনক নড়েনি কর্তৃপক্ষের। বেতনের অপেক্ষায় থাকতে থাকতে অনেকেই চলে গেছেন। পরিচালনা কমিটির সদস্যরাও এখন আর হাসপাতালে যান না। বিদ্যুৎ বিল বকেয়া পড়ায় সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দিয়েছে নেসকো কর্তৃপক্ষ। হাসপাতালটি তিন মাস ধরে বিদ্যুৎবিহীন।
১৫ দিন আগে জেনারেটর দিয়ে চিকিৎসা সেবা দিলেও এখন সেটিও বন্ধ হয়ে গেছে। ফলে চিকিৎসকরাও যাওয়া-আসা বন্ধ করে দিয়েছেন। রোগী বহনের অ্যাম্বুলেন্সটি পরিচালনা কমিটির এক সদস্য ব্যক্তিগত কাজে ব্যবহার করছেন। সম্প্রতি অর্থ নিয়ে দ্বন্দ্বে পরিচালনা কমিটির সাধারণ সম্পাদক ও হাসপাতালের সমন্বয়কারী পদত্যাগ করেছেন। দৈনিক আয়ের অর্থ প্রতিষ্ঠানের ব্যাংক হিসাবের পরিবর্তে জমা হয়েছে পরিচালকের ব্যক্তিগত ব্যাংক হিসাবে।
উত্তর জনপদের বৃহত্তর রংপুর অঞ্চলে ফাইলেরিয়া বা গোদ রোগ সবচেয়ে বেশি দেখা যায়। কয়েক প্রজাতির মশার কামড়ে রোগটির উৎপত্তি। এটি সংক্রামকও। এই পরজীবীতে আক্রান্ত হলে রোগীর হাত-পাসহ স্পর্শকাতর স্থানগুলো অস্বাভাবিক ফুলে যায়। অতীতে এ রোগের কোনো চিকিৎসা ছিল না। ২০০০ সালে ৭০ শতক জমিতে কোটি টাকা ব্যয়ে বেসরকারি প্রতিষ্ঠান ইনস্টিটিউট অব অ্যালার্জি অ্যান্ড ক্লিনিক্যাল ইম্যুনোলজি (আইএসিআইবি) উপজেলার কামারপুকুর ইউনিয়নের ধলাগাছ এলাকায় হাসপাতালটি প্রতিষ্ঠা করে। স্থানীয় কবির উদ্দিন সর্দার হাসপাতালটি নির্মাণে জমি দিয়ে এগিয়ে আসেন। সে সময় স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের ডা. মোয়াজ্জেম হোসেনের তত্ত্বাবধানে গড়ে ওঠে হাসপাতালটি।
জাপান, কানাডা ও বাংলাদেশ সরকারের আর্থিক সহায়তায় দুটি বহুতল ভবন নিয়ে হাসপাতালের কার্যক্রম শুরু হয়। জাপান ও অন্যান্য দেশ থেকেও গবেষণা কর্মীরা আসেন এখানে। ২০১২ সালে হাসপাতালটিকে ঘিরে স্থানীয়ভাবে সংকট সৃষ্টি হয়। পরিচালনা কমিটির দ্বন্দ্বে ভেঙে পড়ে সেবা কার্যক্রম। মুখ ফিরিয়ে নেন দাতা সংস্থাগুলো। ২০২১ সালে এক চুক্তিপত্রের মাধ্যমে হাসপাতালটির ব্যবস্থাপনার দায়িত্বে আসে বাংলাদেশ প্যারামেডিকেল ডাক্তার অ্যাসোসিয়েশন (বিপিডিএ)। নাম পরিবর্তন করে রাখা হয় সৈয়দপুর ফাইলেরিয়া অ্যান্ড জেনারেল হাসপাতাল ও ল্যাব। এ সংগঠনের মহাসচিব রাকিবুল ইসলাম তুহিন বর্তমানে পরিচালক হিসেবে হাসপাতালটি পরিচালনা করছেন। এরপর বিভিন্ন জেলা থেকে নতুন করে প্রায় ৩৫ জন কর্মকর্তা-কর্মচারী নিয়োগ দেওয়া হয়। প্রত্যেকের কাছে ফেরতযোগ্য জামানতের কথা বলে নেওয়া হয়েছে ৫০ হাজার থেকে ৩ লাখ টাকা পর্যন্ত। এভাবে প্রায় ৫০ লাখ টাকা নিয়ে গা ঢাকা দিয়েছেন পরিচালক। এরপর থেকে বেতন-ভাতা পাচ্ছেন না কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। জামানতের টাকা ও বেতন পরিশোধের দাবি জানালে বিভিন্ন অজুহাতে তা দেওয়া হচ্ছে না।
হাসপাতালের প্রধান হিসাবরক্ষক মোস্তাফিজুর রহমান মিলন জানান, কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বেতন-ভাতা আগে হাসপাতালের আয় থেকে পরিশোধ করা হতো। কিন্তু এক বছর ধরে আয়ের টাকা পরিচালক নিজের ব্যক্তিগত ব্যাংক হিসাবে জমা করছেন। বিভিন্ন অজুহাত দেখিয়ে বেতন-ভাতা দিচ্ছেন না। আমরা বকেয়া বেতন-ভাতার দাবিতে কর্মবিরতি পালন করেছি। এরপরও দাবি না মানলে কঠোর কর্মসূচি পালন করা হবে।
এ বিষয়ে কথা বলতে হাসপাতালের পরিচালক রাকিবুল ইসলাম তুহিনের মোবাইল ফোনে কল দেওয়া হয়। কিন্তু তিনি কথা বলতে অপারগতা প্রকাশ করেছেন।
মন্তব্য করুন