বরিশাল ছাত্রলীগের এক সময়কার সক্রিয় কর্মী নগরীর জর্ডান রোড এলাকার বাসিন্দা শেখ ওয়ালী আসিফ ইনান বর্তমানে সংগঠনটির কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক। সিটি মেয়র সাদিক আবদুল্লাহর সঙ্গে শীতল সম্পর্কের কারণে এর আগে ইনান বরিশালে নিজের বাড়ি এলেও রাজনৈতিক ব্যাপারে খুব একটা জড়াতেন না।

গত বছরের ২০ ডিসেম্বর ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক হওয়ার পরও ইনান অন্তত দুইবার বরিশাল এসেছিলেন। কিন্তু ঘনিষ্ঠজন ও অনুগত গুটিকয়েক ছাত্রলীগ নেতাকর্মী ছাড়া কেউ টের পাননি। এমনকি জেলা ও মহানগর ছাত্রলীগের দায়িত্বশীলরা ইনানের সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎও করেননি।

তবে এখন পরিস্থিতি ভিন্ন। সাদিক আবদুল্লাহকে সরিয়ে এবার বরিশাল সিটি নির্বাচনে মেয়র প্রার্থীর মনোনয়ন পেয়েছেন আবুল খায়ের আবদুল্লাহ। ফলে প্রথমবারের মতো গতকাল বৃহস্পতিবার ইনান নিজ শহরে আসেন সহস্রাধিক মোটরসাইকেল ও ৫ শতাধিক গাড়ির বহর নিয়ে। ছাত্রলীগের স্থানীয় নেতাকর্মীরাও তাঁকে বরণ করে নিয়েছেন রাজকীয় সংবর্ধনায়।

জানা গেছে, সিটি নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মেয়র প্রার্থীর প্রচারণায় অংশ নিতে এরই মধ্যে ছাত্রলীগ সভাপতি সাদ্দাম হোসেন, সাধারণ সম্পাদক ইনানসহ সংগঠনের কেন্দ্রীয় কমিটির বিপুলসংখ্যক নেতা গতকাল বরিশাল এসেছেন। বিকেলে শিল্পকলা একাডেমি মিলনায়তনে ছাত্রলীগের প্রতিনিধি সভায় বক্তৃতা করেন তারা।

ছাত্রলীগ নেতা ইনান বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বরিশালকে নিয়ে স্বপ্ন দেখেন। সেই স্বপ্ন বাস্তবায়নে উন্নয়নের দায়িত্ব আবুল খায়েরকে দিয়ে মেয়র প্রার্থী করে বরিশালে পাঠানো হয়েছে। তিনি আবুল খায়ের আবদুল্লাহকে ভোট দিতে নগরবাসীর প্রতি আহ্বান জানান।

সভায় মেয়র প্রার্থী আবুল খায়ের আবদুল্লাহও বক্তব্য দেন। তিনি বলেন, ছাত্রলীগ গণমানুষের অধিকার আদায়ে লড়াই করছে। স্মার্ট বাংলাদেশ ছাত্রলীগই গড়বে।

বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের কর্মী আবরার জাহিন সামিট জানান, ঢাকা থেকে সংগঠনের সভাপতি-সাধারণ সম্পাদকের নেতৃত্বে কেন্দ্রীয় নেতারা ১৩৭টি গাড়ি নিয়ে বরিশালের উদ্দেশে রওনা হন। পথে আরও অনেক গাড়ি যুক্ত হয়। বিকেল ৩টার দিকে তাঁরা বরিশালে পৌঁছেন দুই শতাধিক গাড়ির বহর নিয়ে। নগরীর প্রবেশমুখ ছয়মাইল মোড়ে আগে অবস্থান করছিল পিরোজপুরের ২৫০টি, পটুয়াখালীর ১৩০টি, বরগুনার ৮০টিসহ বিভিন্ন এলাকা থেকে আসা মাইক্রোবাস ও প্রাইভেটকার এবং সহস্রাধিক মোটরসাইকেল। পরে বিশাল মোটর শোভাযাত্রা করে ছাত্রলীগ নেতাদের নগরীতে নিয়ে আসা হয়।

স্থানীয় সূত্র জানায়, বরিশালে আওয়ামী লীগ ও এর সহযোগী সংগঠনগুলো নিয়ন্ত্রণ করে জেলা সভাপতি আবুল হাসানাত আবদুল্লাহ এমপির পরিবার। তাঁর বড় ছেলে সিটি মেয়র সাদিক আবদুল্লাহ মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক। কিন্তু ইনান কখনই এই পরিবারের নিয়ন্ত্রণাধীন ছিলেন না। ফলে সাদিক আবদুল্লাহর সঙ্গে তাঁর ছিল শীতল সম্পর্ক।

বরিশালে বর্তমান ও সাবেক ছাত্রলীগ নেতাকর্মীরা জানান, ২০১১ সাল পর্যন্ত ইনান বরিশাল ছাত্রলীগের কর্মী ছিলেন। তখন তাঁর যাতায়াত ছিল তৎকালীন মহানগর আওয়ামী লীগ সভাপতি ও সিটি মেয়র প্রয়াত শওকত হোসেন হিরণের বাসায়। ২০১১-১২ শিক্ষবর্ষে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির পর ইনান আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য জাহাঙ্গীর কবীর নানকের স্নেহভাজন হন।

ইনানের পরিবারের আদি নিবাস ঝালকাঠি সদর উপজেলার শেখেরহাট গ্রামে। আওয়ামী লীগের উপদেষ্টামণ্ডলীর সদস্য আমির হোনে আমু এমপির বাড়িও একই গ্রামে। ইনানের বাবা প্রয়াত আব্দুর রব ছিলেন মুক্তিযুদ্ধকালীন বৃহত্তর বরিশাল জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি ও সর্বদলীয় ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের আহ্বায়ক। স্বাধীনতা-পরবর্তী বরিশালের রাজনীতিতে তিনি অমির হোসেন আমু বলয়ে ছিলেন বলে জানা গেছে। এসব কারণে মেয়র সাদিক আবদুল্লাহর দাপটের যুগে ইনান বরিশালে পাত্তা পাননি।