- সারাদেশ
- সনদ পুড়িয়ে চাকরি কাম্য নয়
সনদ পুড়িয়ে চাকরি কাম্য নয়

গত ৩০ মে সমকালে প্রকাশিত একটি সংবাদের শিরোনাম– ‘আইসিটি বিভাগে চাকরি সনদ পোড়ানো মুক্তার’। মূলধারার সংবাদমাধ্যমের পাশাপাশি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমেও বিষয়টি ব্যাপক আলোচনার জন্ম দিয়েছে। এ ঘটনার পর আরও কয়েকজনের ফেসবুক লাইভে এসে সনদ পোড়ানোর ঘটনা ঘটেছে। তবে তাঁদের কারও চাকরি পাওয়ার খবর জানা যায়নি। মুক্তারের চাকরি দেওয়াকে সমর্থন করে বলছি, যোগ্যতাসম্পন্ন সব বেকারের চাকরি নিশ্চিত করা জরুরি। তবে সনদ পোড়ানোর এ সংস্কৃতি ভালো নয়।
আমাদের সমাজে নানা রকম সমস্যা বিদ্যমান। এর মধ্যে বেকার সমস্যা অন্যতম। প্রতি বছর হাজার হাজার শিক্ষার্থী চাকরির বাজারে প্রবেশ করেন। অনেকে চাকরির বাজার থেকে ছিটকে পড়ছেন। আমাদের দেশে সরকারি চাকরিতে আবেদনের বয়সসীমা ৩০ বছর নির্ধারণ করা আছে। সেশনজটসহ নানা প্রতিবন্ধকতায় স্নাতকোত্তর পাস করতে লেগে যায় ২৫-২৬ বছর। চার বছরের মধ্যে চাহিদার তুলনায় পর্যাপ্ত চাকরির বিজ্ঞপ্তি আসে না। আবার একটি পদের বিপরীতে লড়তে হয় অসংখ্য প্রার্থীকে। বিসিএসের কথা বাদই দিলাম; তৃতীয় শ্রেণির একটি সরকারি চাকরির জন্য এক পদের বিপরীতে ৭০-৮০ জন আবেদন করেন। ফলে সেই লড়াইয়ে অনেকেই ছিটকে পড়েন।
বয়স কখনও মানুষের যোগ্যতার মানদণ্ড হতে পারে না। শিক্ষা মানুষের অধিকার। সরকারি চাকরি পাওয়া নাগরিকের রাজনৈতিক অধিকার। তাই বলে সবাই সরকারি চাকরি পাবেন না– এটি মেনে নিতে হবে। সরকারি চাকরিই সবকিছু নয়। চাকরির পেছনে ছুটে ক্লান্তদের উচিত উদ্যোক্তা হিসেবে নিজেকে গড়ে তোলা। একজন সার্টিফিকেট পুড়িয়ে ফেলেছেন সরকারি চাকরি না পাওয়ায় বা বয়স শেষ হয়ে যাওয়ার কারণে। তাঁর চাকরির ব্যবস্থা করেছেন সরকারের একজন প্রতিমন্ত্রী। এ ঘটনা দেখে অত্যুৎসাহী হয়ে আর কারও সনদ পোড়ানো উচিত নয়। কারণ একজনকে এ প্রক্রিয়ায় চাকরি দিলেও, সরকার সবাইকে হয়তো সেই বিবেচনায় নিতে পারবে না। তাই হতাশা মাথা থেকে ঝেড়ে ফেলে বেসরকারি খাতে চাকরির চেষ্টা করতে হবে।
সার্টিফিকেট আর জ্ঞান অর্জন এক কথা নয়। জ্ঞান অর্জন মানেই সরকারি চাকরি করা নয়। জ্ঞান অর্জন মানে সমাজ বা রাষ্ট্রের কল্যাণে কাজ করা। আমাদের চাকরি পাওয়ার মূলমন্ত্র হোক মেধা ও দক্ষতা; সার্টিফিকেট পুড়িয়ে নয়। এ সমস্যা থেকে আমরা বের হয়ে আসতে পারব বেশি বেশি কর্মমুখী শিক্ষার মাধ্যমে। আমাদের জনসংখ্যাকে জনসম্পদে রূপান্তর করতে হবে। এই গুরুদায়িত্ব সরকারকেই নিতে হবে। প্রশিক্ষিত জনবল যত সৃষ্টি করা যাবে, দেশ তত উপকৃত হবে।
ঢাকা
মন্তব্য করুন