এক পাশে পাটখড়ি, অন্য পাশে টিনের জোড়াতালি বেড়া। একচালা টিনের ঘর। ভেতরে রাখা হয়েছে রান্নার খড় ও হাঁড়িপাতিল। রয়েছে ছোট্ট একটি শোয়ার চৌকিও। মেঝেতে বসার মতো তেমন কোনো জায়গা নেই। জরাজীর্ণ এই ঘরে মানসিক ভারসাম্যহীন স্বামী ইব্রাহিম, শিশুসন্তান সাজেদুল ইসলাম, সাজু মিয়া ও ফাতেমা খাতুনকে নিয়ে বসবাস সাহিদা খাতুনের। সামান্য বৃষ্টি হলেই চাল বেয়ে আসা পানিতে ভিজে যায় ঘর। এ সময় দুর্ভোগে পড়তে হয় তাঁদের। সংসারে অভাবের কারণে ৪১ দিন বয়সী সন্তানকে দত্তক দিতে হয়েছে।

সাহিদা খাতুন (৩০) কুড়িগ্রামের রাজীবপুর উপজেলার কোদালকাটি ইউনিয়নের শুক্কুর মেম্বারপাড়া এলাকায় খালাতো ভাই জহিরুলের ভিটায় ঠাঁই নিয়েছেন। চরে অন্যের ধান শুকানো ও ওড়ানোর কাজ করে জীবিকা নির্বাহ করেন তিনি। মজুরি হিসাবে পান ৪-৫ কেজি ধান। তা দিয়ে খাবারটুকু জুটলেও সংসার চলে না। তাঁর সংসারে মানসিক ভারসাম্যহীন স্বামী, দুই ছেলে, এক মেয়ে ও বৃদ্ধ মা আয়শা খাতুন। বড় মেয়ে জোসনা খাতুনের (১৩) পঞ্চম শ্রেণিতে পড়া অবস্থায় বিয়ে হয়ে যায়। জোসনার ছেলে জুনাইদের বয়স দেড় বছর। বড় ছেলে সাজেদুল ইসলাম (১২) অভাবের কারণে লেখাপড়া বাদ দিয়েছে। আগে ভিজিডির ৩০ কেজি করে চাল পেতেন, এখন তা বন্ধ।

সাহিদা বলেন, ‘আমগোরে কেউ দেহে না। খুব কষ্টে আছি। হুনছি, ভূমিহীনদের বাড়িঘর কইরা দ্যায় সরকার। কিন্তু আমগোরে ক্যাই (কেউ) দ্যায় না।’ মেম্বার-চেয়ারম্যানরা নিজেদের পছন্দের লোকজনকে শুধু সুযোগ-সুবিধা দিয়ে থাকেন বলে আক্ষেপ তাঁর।

অভাবের তাড়নায় সন্তান দত্তক সাহিদা খাতুনের দেড় বছর বয়সী আরেকটি শিশুসন্তান রয়েছে। নাম তার কুলসুম। সংসারে অভাব-অনটনের কারণে জন্মের ৪১ দিন পর তাকে দত্তক দিয়েছেন। শিশুটিকে নিয়েছেন রৌমারী উপজেলার বকবান্ধা এলাকার নূর হোসেন-রাবেকা দম্পতি। এখন কুলসুমের নাম রাখা হয়েছে নাদিয়া।

সাহিদা বলেন, ‘ছয়-সাতজন মানুষকে একসঙ্গে পালতে হয়। বাচ্চা হইল, ইনকাম (আয়) করে খাওয়াইনোর ক্যাউ (কেউ) নেই। সেই জন্য বাচ্চাটারে মানুষরে দিছি। কুলসুম তাঁদের কাছে ভালো আছে।’

দত্তক নেওয়া নূর হোসেন জানান, তাঁদের (সাহিদাদের) সংসারে অভাবের কারণে নাদিয়াকে আমাদের কাছে দত্তক দিয়েছেন। মাঝে মধ্যে সাহিদা দেখতেও আসেন।

প্রতিবেশী শামিমা আক্তার বলেন, এক সংসারে অনেক মানুষকে ভরণপোষণ দিতে হয় সাহিদাকে। অন্যের বাড়িতে কাজ করেন তিনি। এতে যা আয় হয়, তা দিয়েই কোনোমতে চলে তাঁদের সংসার। তাঁরা খুব কষ্টে আছেন।

ইউপি সদস্য মাসুদ আহমেদের ভাষ্য, তাঁর ওয়ার্ডের ৩০০ খানার মধ্যে ২০০টির চিত্র কমবেশি সাহিদাদের মতো।

রাজীবপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (অতিরিক্ত) এ বি এম সরোয়ার রাব্বী বলেন, বিষয়টি তাঁর জানা নেই। আবেদন করলে দেখা যাবে। বর্তমানে ঘরের বরাদ্দ নেই। বরাদ্দ পেলে তাঁদের ঘরের ব্যবস্থা করা হবে।