তিনি পেশায় রিকশাচালক। দিন আনেন দিন খান অবস্থা। এই দরিদ্র মানুষটিই সততার দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন। ১ লাখ টাকা কুড়িয়ে পেয়ে এর প্রকৃত মালিককে খুঁজে বের করেছেন। তাঁর হাতে তুলে দিয়েছেন টাকাগুলো।

এই নির্লোভ, সৎ মানুষটির নাম আব্দুল গফুর (৫৫)। তিনি ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলার আউলিয়াপুর ইউনিয়নের শাসলা পিয়ালা এলাকার মৃত আব্দুর রাজ্জাকের ছেলে। গত বুধবার ঠাকুরগাঁও-দিনাজপুর মহাসড়কের জগন্নাথপুর ইউনিয়নের ট্রাক টার্মিনাল এলাকায় ১ লাখ টাকা কুড়িয়ে পান তিনি। পরে পুলিশের মাধ্যমে টাকা প্রকৃত মালিকের হাতে তুলে দেন।

আব্দুল গফুর আউলিয়াপুর ইউনিয়নের শাসলা পিয়ালার বাসিন্দা হলেও শহরের আর্টগ্যালারি পৌর পুকুর এলাকায় ভাড়া বাড়িতে বসবাস করছেন। কথা হয় তাঁর সঙ্গে। তিনি জানান, ওই দিন তিনি সকালে মহাসড়কের টার্মিনাল এলাকায় রিকশা নিয়ে ফিরে আসার সময় রাস্তার উত্তর পাশে টাকার তোড়া পড়ে থাকতে দেখতে পান। টাকাগুলো পাওয়ার পর এক ব্যক্তি তাঁর কাছ থেকে জোর করে ছিনিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করছিল। আশপাশে লোকজন চলে আসায় সে সফল হতে পারেনি। এর পর টাকার প্রকৃত মালিককে খুঁজতে থাকেন গফুর। ঘটনাটি লোকমুখে ছড়িয়ে পড়ে। বিকেল প্রকৃত মালিক রেজাউল ইসলামক খুঁজে পান তিনি। রেজাউল এলে থানা পুলিশের মাধ্যমে তাঁর হাতে টাকা হস্তান্তর করেন।

তিনি আরও জানান, রেজাউল তাঁকে কিছু টাকা বকশিস হিসেবে দিতে চেয়েছিলেন। কিন্তু তিনি তা নিতে রাজি হননি। তবে সারাদিনে যে ভাড়া পেতেন সেই টাকাটুকু চেয়েছেন। কারণ সকালে টাকা পাওয়ার পর রেজাউলের হাতে টাকা পৌঁছাতে বিকেল হয়ে যায়। কিন্তু রেজাউল তাঁকে জোর করে ২ হাজার টাকা দেন। সেই ২ হাজার টাকা রেখে দিয়েছেন গফুর।

টাকার প্রকৃত মালিক রেজাউল ইসলাম একটি মাদ্রাসার শিক্ষক। তিনি বলেন, ব্যাংক থেকে টাকা উত্তোলন করে ফেরার পথে রাস্তায় পড়ে যায়। তাঁর শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে গিয়ে দেখেন টাকাগুলো তাঁর পকেটে নেই। এর পর বিকেলের দিকে লোকমুখে শোনেন একজন রিকশাচালক টাকাগুলো পেয়েছেন। পরে তিনি এসে কিছু প্রমাণ দেন। তখন তাঁর টাকা তাঁকে ফেরত দেওয়া হয়। তিনি বিস্ময় প্রকাশ করে বলেন, ‘আমি ভাবতে পারিনি যে, টাকাটা ফেরত পাব। আমি সেই রিকশাচালক ভাইয়ের প্রতি কৃতজ্ঞ। আব্দুল গফুর ভাইয়ের ধন না থাকলেও তিনি একজন বড় মনের মানুষ।’

আব্দুল গফুরের দুই ছেলে হোটেলে কাজ করে। একমাত্র মেয়েটিকে বিয়ে দিয়েছেন। আগে গ্রামে অন্যের জমিতে থাকতেন। সেখানে তেমন আয় রোজগার না হওয়ায় পরিবার নিয়ে শহরে ভাড়া বাড়িতে বসবাস করছেন।

ঠাকুরগাঁও সদরের ইউএনও আবু তাহের এটি সমাজের জন্য একটি দৃষ্টান্ত। আব্দুল গফুরের থাকার নিজস্ব জায়গা বা ঘর নেই বলে তিনি শুনেছেন। তাঁকে সরকারি ঘর দেওয়ার জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে জানান তিনি।