বাংলাদেশ চেম্বার অব ইন্ডাস্ট্রিজ (বিসিআই) বলেছে, রাজস্ব আয় প্রধানত বেসরকারি খাত হতে সংগ্রহ করা হয়ে থাকে। কিন্তু বর্তমানে উচ্চ মূল্যস্ফীতি, ডলার সংকট এবং জ্বালানি সমস্যার কারণে মানুষের ক্রয়ক্ষমতা কমছে। ফলে উৎপাদনশীল কারখানাগুলো প্রবৃদ্ধি হারিয়েছে। এদিকে বেসরকারি খাতের ঋণ প্রবদ্ধি নিম্নগামী। রপ্তানি মন্থর এবং রেমিট্যান্সেও তেমন প্রবৃদ্ধি হচ্ছে না। দেশের অর্থনীতিকে টিকিয়ে রাখতে গেলে আমদানি বিকল্প শিল্প এবং কীভাবে কারখানাগুলোর প্রবৃদ্ধির সক্ষমতা ফিরিয়ে আনা যায় সেদিকে লক্ষ্য রাখতে হবে। কিন্তু প্রস্তাবিত বাজেটে এর কোনো দিকনির্দেশনা নেই।

বিসিআই সভাপতি আনোয়ার-উল আলম চৌধুরী (পারভেজ) বলেন, অর্থমন্ত্রী তাঁর বাজেট বক্তৃতায় দেশি-বিদেশি বিনিয়োগ আকর্ষণ, কর্মসংস্থান সৃষ্টি এবং আমদানি বিকল্প পণ্য উৎপাদনে জোর দেওয়ার কথা বলেছেন। কিন্তু দেশীয় শিল্পের সক্ষমতা ও টেকসই করার কোনো নির্দিষ্ট  দিকনির্দেশনা নেই। বিশেষ করে মাইক্রো, কুটির ও ক্ষুদ্র শিল্পের উন্নয়নে দিকনির্দেশনা নেই। মাইক্রো, কুটির ও স্মল শিল্প করোনা এবং রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের প্রভাবে এরই মধ্যে প্রায় ৪৫ শতাংশ ঝরে পড়েছে।

বিসিআই সভাপতি বলেন, শুধু আইএমএফের শর্তের দিকে গুরুত্ব না দিয়ে দেশের অর্থনীতি কীভাবে সামনের দিকে এগিয়ে যাবে সেদিকে গুরুত্বারোপ করতে হবে। এখন স্থানীয় শিল্প, আমদানি বিকল্প শিল্পের সক্ষমতা ফিরিয়ে আনা এবং টেকসই করা এবং কর্মসংস্থান ধরে রাখার দিকে অধিক গুরুত্ব দিতে হবে।

বিসিআই মনে করে, বেসরকারি খাতে জ্বালানি স্বল্পতা, বিদ্যুৎ-গ্যাসের মূল্যবৃদ্ধি এবং নিরবচ্ছিন্ন সাপ্লাই না থাকার কারণে শিল্পকারখানা ৫০ থেকে ৬০ শতাংশের বেশি উৎপাদন ক্ষমতা ধরে রাখতে পারছে না। বাংলাদেশ ব্যাংকের সংকোচনমূলক নীতির  কারণে গত ১০ মাসে শিল্পের মূলধনি যন্ত্রপাতি আমদানির এলসি ৫৬ শতাংশ কমেছে। মধ্যবর্তী কাঁচামালে ৩১ শতাংশ কমেছে। কোনো অবস্থাতেই শিল্পের কাঁচামাল এবং মূলধনি যন্ত্রপাতি আমদানি যাতে বাধাগ্রস্ত না হয় এবং সরকারকে কম মূল্যে নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহ নিশ্চিত করতে হবে। তা না করলে দেশীয় শিল্প তাদের সক্ষমতা ধরে রাখতে পারবে না। উৎপাদন খরচ বেড়ে যাবে। এতে করে মূল্যস্ফীতি কমবে না এবং বেকারত্বের হার বেড়ে যাবে। যার ফলে এনবিআরের কর আহরণ বাধাগ্রস্ত হতে হবে।

তিনি বলেন, বেসরকারি খাত এবং এনবিআরকে একসঙ্গে কাজ করতে হবে। এ ক্ষেত্রে রাজস্ব বোর্ডের চর্চায় পরিবর্তন আনা বাঞ্ছনীয়। ঢাকা ও চট্টগ্রাম থেকে মোট করের হার ৮০ শতাংশের বেশি আসে। অথচ বাংলাদেশের অর্থনীতির প্রায় ৪৫ শতাংশ অন্যান্য জেলায় অবস্থিত। এসব অঞ্চলে প্রয়োজনীয় জনবল নিয়োগ করে ইতিবাচক মনোভাব নিয়ে মানুষের কাছে গেলে কর আদায় বাড়বে এবং করজাল প্রসারিত হবে।