সিলেটের ওসমানীনগরে গবাদি পশুর মধ্যে ব্যাপক আকারে ছড়িয়ে পড়েছে লাম্পি স্কিন ডিজিজ ভাইরাস (এলএসডিভি)। প্রতিদিনই বাড়ছে এ ভাইরাসে আক্রান্ত গরু-ছাগলের সংখ্যা। কুরবানির ঈদ সামনে রেখে এলএসডিভির প্রকোপ খামারি ও গৃহস্থদের দুশ্চিন্তায় ফেলেছে। তবে ১০-১৫ দিনের মধ্যে ভাইরাসের প্রকোপ কমে যাওয়ার সম্ভাবনার কথা জানিয়েছে প্রাণিসম্পদ সম্প্রসারণ অধিদপ্তর।

জানা যায়, লাম্পি স্কিন ডিজিজ গবাদি পশুর একটি চর্মরোগ। এটি ছাগলের শরীরে দেখা দিলে গট পক্স, ভেড়া আক্রান্ত হলে শিপ পক্স আর গরু আক্রান্ত হলে বলা হয় লাম্পি স্কিন ডিজিজ। এ ভাইরাসে আক্রান্ত হলে প্রাণীর শরীরের তাপমাত্রা বেড়ে গিয়ে ক্ষুধামন্দা দেখা দেয়। প্রাণীর নাক ও মুখ দিয়ে তরল পদার্থ বের হয়। প্রাণীর চামড়ার নিচে ফোসকা বা গুটি দেখা দিয়ে সেই স্থানের লোম উঠে গিয়ে ক্ষতের সৃষ্টি হয়। আক্রান্ত প্রাণীর মুখ ও পায়ে ক্ষত হয় এবং চলাফেরা ও খাদ্য গ্রহণে সমস্যার সৃষ্টি হয়। আক্রান্ত প্রাণীটি দুর্বল হয়ে রক্তশূন্যতা ও অপুষ্টিজনিত সমস্যায় ভোগে। সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, সিলেটের সর্বত্রই এখন গবাদি পশুর মধ্যে এ ভাইরাসের প্রকোপ দেখা দিয়েছে। আক্রান্ত পশুকে ভ্যাকসিন প্রয়োগ করা হচ্ছে। এরই মধ্যে আক্রান্ত অনেক পশু সুস্থ হয়ে উঠেছে এবং আগামী ১৫-২০ দিনে এই রোগের প্রকাপ কমে আসবে। এ রোগে আক্রান্ত হলে যথাসময়ে চিকিৎসা দিতে হবে, খামার বা গোয়ালঘর পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখা, পশুকে মশারির নিচে রাখা এবং সুস্থ গরু থেকে আক্রান্ত গরুকে আলাদা রাখার পরামর্শ দিয়েছেন তাঁরা।

তাজপুর ইউনিয়নের জিয়াফক গ্রামের জগলু মিয়া জানান, তাঁর কয়েকটি গরু আক্রান্ত হওয়ার পর প্রতিষেধক প্রয়োগ করেও সুস্থ হচ্ছে না। গরুর শরীরে পচন ধরেছে। সামনে ঈদ, গরুগুলো সুস্থ না হলে বিক্রি না হওয়ার দুশ্চিন্তায় আছেন তিনি।

গরুর খামারি উপজেলার উমরপুর ইউনিয়নের সোনাফর আলী বলেন, ঈদে বিক্রির জন্য তিনি ১১টি গরু পালন করছেন। তাঁর দুটি গরু আক্রান্ত হলে সঙ্গে সঙ্গে চিকিৎসা করান এবং অন্য গরুগুলোকে ভ্যাকসিন দেওয়ায় সেগুলো সুস্থ রয়েছে। তাঁর এলাকায় অনেকের গরু এই রোগে আক্রান্ত।

গবাদি পশুর ফার্মাসিস্ট মো. আবদুল হেলিম জানান, এলাকায় এখন ব্যাপক হারে পশুর মধ্যে লাম্পি স্কিন ডিজিজের প্রকোপ দেখা দিয়েছে। এ রোগের ওষুধ নিতে প্রতিদিন অনেকেই তাঁর ফার্মেসিতে আসছেন।

ওসমানীনগর উপজেলা প্রাণিসম্পদ সম্প্রসারণ কর্মকর্তা ডা. রাজু আহমেদ বলেন, সিলেটের অন্যান্য এলাকার মতো ওসমানীনগরেও লাম্পি স্কিন ডিজিজ গবাদি পশুতে ছড়িয়ে পড়েছে। আক্রান্ত পশুকে চিকিৎসার আওতায় আনা হচ্ছে। সুস্থ গবাদি পশুকে এই রোগের হাত থেকে রক্ষায় ছাগলের গুটিবসন্তের জন্য যে ভ্যাকসিন রয়েছে তা প্রয়োগ করা হচ্ছে। তিনি জানান, প্রতি সপ্তাহে ২০-২৫টি গবাদি পশুকে এই ভ্যাকসিন প্রয়োগ করা হচ্ছে। আগামী ১৫-২০ দিনের মধ্যে আক্রান্ত সব পশু সুস্থ হয়ে ওঠার আশাবাদ জানান তিনি।