- সারাদেশ
- আ’লীগ প্রার্থীর পক্ষে কাজ করবে ১৪ দলের শরিকরা
সিটি নির্বাচন
আ’লীগ প্রার্থীর পক্ষে কাজ করবে ১৪ দলের শরিকরা
জোটের বৈঠকে দ্রব্যমূল্য নিয়ে অসন্তোষ

আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য এবং ১৪ দলের সমন্বয়ক-মুখপাত্র আমির হোসেন আমুর রাজধানীর ইস্কাটনের বাসভবনে বৈঠকে শরিক দলের নেতারা নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি, তেল-গ্যাস-বিদ্যুতের দাম বৃদ্ধি, বিদ্যুৎ সংকট, লোডশেডিংসহ জনজীবনের সংকট নিয়ে অসন্তোষের কথা তুলে ধরেছেন। একই সঙ্গে এসব বিষয়ে সরকারের ত্বরিত পদক্ষেপ কামনা করেন তাঁরা।
বৈঠক সূত্র জানিয়েছে, চলমান সিটি করপোরেশন নির্বাচনে আওয়ামী লীগের এককভাবে অংশগ্রহণ প্রশ্নে শরিকদের কোনো আপত্তি নেই বলে জানিয়ে দেওয়া হয়। শরিক নেতারা বলেছেন, সদ্য সমাপ্ত গাজীপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচন, আসন্ন বরিশাল, রাজশাহী, সিলেট ও খুলনা সিটি করপোরেশন নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মেয়র প্রার্থীদের স্থানীয় ১৪ দলের পক্ষ থেকে সর্বাত্মক সমর্থন জানানো হয়েছে। শরিক দলগুলোর স্থানীয় নেতারা মেয়র প্রার্থীর পক্ষে প্রচারে অংশ নিচ্ছেন।
১৪ দল নেতারা দ্রুত বাজার পরিস্থিতি স্বাভাবিক করার জন্য সরকারের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের প্রতি আহ্বান জানিয়ে বলেন, এসব সংকট নিয়ে দেশের মানুষের মধ্যে ক্ষোভ ও অসন্তোষ রয়েছে। দ্রুত পদক্ষেপ না নিলে আগামী জাতীয় নির্বাচনে এর বিরূপ প্রভাব পড়তে পারে।
বৈঠকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নতুন ভিসা নীতির সমালোচনা করে ১৪ দল নেতারা বলেন, দেশের জাতীয় নির্বাচন সামনে রেখে যুক্তরাষ্ট্রের এই নীতি দুরভিসন্ধিমূলক ও অনাকাঙ্ক্ষিত। এটি কারও পক্ষে ব্যবহার করা হচ্ছে।
প্রস্তাবিত বাজেট নিয়ে আলোচনায় জোট নেতারা কয়েকটি ক্ষেত্রে মূল্যবৃদ্ধির সমালোচনা করেন। বিশেষ করে বাজেটে শিক্ষা উপকরণ কাগজ ও কলমের দাম বৃদ্ধির প্রস্তাবের সমালোচনা করে কয়েকজন নেতা বলেন, সরকার শিক্ষা খাতে বিশেষ গুরুত্ব দিচ্ছে। এ অবস্থায় কাগজ ও কলমের দাম বৃদ্ধি শিক্ষাক্ষেত্রে ব্যাঘাত সৃষ্টি করতে পারে। কাগজের দাম বৃদ্ধিতে সংবাদপত্রের প্রকাশনাও ব্যাহত হতে পারে। এ কারণে কাগজ ও কলমের ওপর আরোপিত কর প্রত্যাহার করে দাম কমানো উচিত।
বৈঠকে ১৪ দল থেকে নির্বাচিত সংসদ সদস্যরা বাজেটের নেতিবাচক দিকগুলো জাতীয় সংসদে তুলে ধরবেন বলে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। একই সঙ্গে দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি ও জনজীবনের সংকটের বিষয়ে সংসদ ও সংসদের বাইরে বিবৃতি দিয়ে ১৪ দলের অবস্থান তুলে ধরার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। দেশের সার্বিক পরিস্থিতি নিয়ে আগামীকাল মঙ্গলবার বিকেলে ১৪ দলের ব্যানারে রাজধানীর বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউর আওয়ামী লীগ কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে জনসভা আয়োজনের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।
বৈঠক শেষে প্রেস ব্রিফিংয়ে বৈঠকের আলোচনা ও সিদ্ধান্তগুলো তুলে ধরেন ১৪ দলীয় জোটের সমন্বয়ক-মুখপাত্র আমির হোসেন আমু। যুক্তরাষ্ট্রের ভিসা নীতির সমালোচনা করে তিনি বলেন, যারা বিভিন্ন অজুহাত দিয়ে নির্বাচন বানচাল ও প্রশ্নবিদ্ধ করতে চায়– তাদের জন্য এই ভিসা নীতি সহায়ক হতে পারে। কিন্তু দেশে সাংবিধানিক ধারা অব্যাহত রাখতে সংবিধানের ভিত্তিতে নির্বাচন হতে হবে। সংবিধানে ব্যাঘাত সৃষ্টি বা অন্য কোনো উপায়ে আঘাত আসুক– সেটা আমরা চাই না।
তিনি বলেন, ১৪ দল মনে করে, সংবিধানের প্রতিটি প্রক্রিয়া সমুন্নত রাখতে গোটা জাতি ঐক্যবদ্ধ থাকবে। আমরা একটি সুষ্ঠু ও অবাধ নির্বাচন উপহার দেওয়ার জন্য অঙ্গীকারবদ্ধ। এ ক্ষেত্রে অন্য কারও কোনো ধরনের হস্তক্ষেপ চাই না।
১৪ দল ভিসা নীতির সমালোচনা করলেও আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের দাবি করেছেন, ‘তাদের টার্গেট করে এই ভিসা নীতি করা হয়নি।’ এ বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে আমু বলেন, ‘আমরা ভিসা নীতিকে অনাকাঙ্ক্ষিত বলেই মনে করি। এটা তো ১৪ দলের বৈঠক, আওয়ামী লীগের নয়। এখানে আওয়ামী লীগ ছাড়াও ১৩টি দল আছে। ১৪ দল যখন যেটা সঠিক মনে করবে সেটাই বলবে।’
সব দলের অংশগ্রহণে নির্বাচনের জন্য ১৪ দলীয় জোট কোনো আলোচনার উদ্যোগ নেবে কিনা– এ প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, জনগণ ও সংবিধানভিত্তিক নির্বাচনে আস্থা রেখে সবারই নির্বাচনে অংশগ্রহণ করা উচিত। তাই সুষ্ঠু নির্বাচনের স্বার্থে সব দলকে নির্বাচনে অংশ নেওয়ার আহ্বান জানাই। বিদ্যুৎ পরিস্থিতি দ্রুত স্বাভাবিক পর্যায়ে আনতে সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়ে আমু বলেন, প্রধানমন্ত্রী বিদ্যুৎ পরিস্থিতি স্বাভাবিক করতে সবরকম চেষ্টা করছেন।
আমির হোসেন আমুর সভাপতিত্বে বৈঠকে আরও উপস্থিত ছিলেন ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেনন, সাম্যবাদী দলের সাধারণ সম্পাদক দিলীপ বড়ুয়া, তরীকত ফেডারেশনের চেয়ারম্যান নজিবুল বশর মাইজভান্ডারী, কমিউনিস্ট কেন্দ্রের আহ্বায়ক ডা. ওয়াজেদুল ইসলাম খান, গণআজাদী লীগের সভাপতি অ্যাডভোকেট এসকে সিকদার, বাসদের আহ্বায়ক রেজাউর রশিদ খান, গণতান্ত্রিক মজদুর পার্টির সভাপতি জাকির হোসেন, জাতীয় পার্টি-জেপির সাধারণ সম্পাদক শেখ শহীদুল ইসলাম, গণতন্ত্রী পার্টির সাধারণ সম্পাদক ডা. শাহাদাৎ হোসেন, ন্যাপের সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ আলী ফারুক, আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া বীরবিক্রম, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুবউল-আলম হানিফ, মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক সম্পাদক অ্যাডভোকেট মৃণাল কান্তি দাস, জাতীয় পার্টি-জেপির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট এনামুল হক রুবেল, জাসদের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক নাদের চৌধুরী প্রমুখ।
মন্তব্য করুন