পাবনার সাঁথিয়ার দক্ষিণ বোয়াইলমারী গ্রামের খামারি আব্দুল লতিফ। এক বছর আগেও তাঁর খামারে ১১টি গাভি ছিল। বর্তমানে একই সুযোগ-সুবিধা থাকলেও মাত্র একটি গাভি পালন করছেন তিনি। অন্যগুলো বিক্রি করে দিয়েছেন। সিরাজগঞ্জের বাঘাবাড়ির খামারি জাকির হোসেনের দু’বছর আগে শতাধিক গাভি ছিল। তবে এখন তিনি মাত্র চারটি গাভি পালন করছেন। দুই খামারি বলছেন, দুধের উৎপাদন খরচ বেশি; কিন্তু দাম কম। অব্যাহত লোকসানে গাভি বিক্রি করে দিয়েছেন।

অনেকের অভিযোগ, খোলা বাজারে এক লিটার দুধ ৬০ থেকে ৬৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। অথচ প্রক্রিয়াজাতকারী প্রতিষ্ঠান ৪৫-৪৮ টাকার বেশি দিচ্ছে না। ফলে খামারিরা মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছেন গরু পালন থেকে। দুধের দাম না বাড়ালে দুধ উৎপাদন আরও হ্রাস পাবে। প্রাণিসম্পদ কার্যালয়ের হিসাব অনুযায়ী, এলাকার ২৫ হাজারের বেশি খামারে দিনে প্রায় ১০ লাখ লিটার দুধ উৎপাদিত হয়।

বাঘাবাড়ী মিল্ক ভিটার আওতাধীন সাঁথিয়া পৌরসভার বোয়ইলমারী প্রাথমিক দুগ্ধ উৎপাদনকারী সমবায় সমিতির সভাপতি বেলায়েত হোসেন জানান, আগে সমিতির মাধ্যমে ১২২ জন খামারি দিনে প্রায় ৬০০ লিটার দুধ সরবরাহ করতেন। বর্তমানে ৭০ জন ৪৫০ লিটার দুধ দিচ্ছেন। আগে উপজেলায় ১৬১টি সমিতি থাকলেও এখন আছে ১২৪টি। মিল্ক ভিটা কোটা বেঁধে দেওয়ায় বেশি দুধ নেয় না।

পাবনা ও সিরাজগঞ্জের ছোট-বড় ৪০০ বাথানের গোচারণভূমিতে লক্ষাধিক গরু পালন করেন খামারিরা। এর আয়ে নির্ভরশীল প্রায় দেড় লাখ পরিবারের ১৫ লাখ মানুষ। তাঁদের উৎপাদিত প্রায় দুই লাখ লিটার তরল দুধ মিল্ক ভিটাসহ বিভিন্ন কোম্পানি নিজেদের নির্ধারিত দামে কেনে।

খামারিদের অভিযোগ, গোখাদ্যের উচ্চমূল্যসহ ব্যয় বৃদ্ধি বিবেচনায় না নিয়ে ন্যায্যমূল্য থেকে বঞ্চিত করছে প্রতিষ্ঠানগুলো। শাহজাদপুরের চরাচিথুলিয়া গ্রামের খামারি টিক্কা খান জানান, প্রক্রিয়াজাতকারী প্রতিষ্ঠান চার দশমিক শূন্য স্ট্যান্ডার্ড ননিযুক্ত তরল দুধ ৪৩-৪৮ টাকায় কেনে। আংশিক ননি তুলে সাড়ে তিন স্ট্যান্ডার্ডের দুধ প্যাকেটজাত করে ৮৫ টাকায় বাজারজাত করে।

প্রতি লিটার দুধের শূন্য দশমিক ৫০ স্ট্যান্ডার্ড ননির ঘি তৈরি করে লাভ হয় ৩৫ টাকা। সব মিলিয়ে তারা প্রতি লিটার দুধে লাভ করছে ৮৫ টাকা। ঘোষভিত্তিক সমিতির কাছেও খামারিরা জিম্মি।

খামারিরা জানান, এক বছরের ব্যবধানে গোখাদ্যের দাম দ্বিগুণ হয়েছে। দুই সপ্তাহ আগে আরেক দফা বেড়েছে দাম। এক বছর আগে গম, খেসারি ও অ্যাংকর ডালের ভুসি ২৫ থেকে ২৬ টাকা কেজি ছিল। এখন ৫৩ টাকা। ২৯ টাকার চিটাগুড় ৬০ এবং ১৯ টাকার চালের খুদ হয়েছে ৩৭ টাকা। ৩৫০ টাকা মণের খড় এখন ৫৫০ টাকা।

সাঁথিয়ার আমোষ পূর্বপাড়া প্রাথমিক দুগ্ধ উৎপাদনকারী সমবায় সমিতির ব্যবস্থাপক ছমির উদ্দিন বলেন, তাঁর সমিতি থেকে দিনে প্রায় ২০০ লিটার দুধ মিল্ক ভিটায় যেত। ন্যায্য দাম না পেয়ে সরবরাহ বন্ধ করে দিয়েছেন। সাতবিলা গ্রামের ওহাব আলীর ভাষ্য, প্রতি লিটার দুধে খরচ ৭০ টাকা। ৪৫-৫০ টাকায় বিক্রি করে লোকসান হচ্ছে।

খামারিরা কম মূল্য পাচ্ছেন স্বীকার করে আমাইকোলা গ্রামের বেসরকারি দুগ্ধ প্রক্রিয়াজাত প্রতিষ্ঠান ইছামতি ডেইরি অ্যান্ড ফুড প্রোডাক্টের (পিউরা মিল্ক) ব্যবস্থাপনা পরিচালক আব্দুর রউফ বলেন, করোনাকালে ছোট কোম্পানি বাজার হারানোয় বড় কোম্পানিগুলো বাজার নিয়ন্ত্রণ করছে।

প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ফারুক মিয়া বলেন, খরচ কমাতে খৈল, ভুসির বিকল্প হিসেবে কাঁচা ঘাসের আবাদ করতে হবে। গাভি পালন কমার তথ্য নেই।

মিল্ক ভিটার বাঘাবাড়ীঘাট দুগ্ধ এলাকার উপমহাব্যবস্থাপক (সমিতি বিভাগ) অমিয় কুমার মণ্ডল বলেন, খামারিদের জন্য কিছু পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। গত বছরের তুলনায় এবার দুধের সংগ্রহ দাম ১০ টাকা বাড়িয়ে ৫০ টাকা করা হয়েছে।
বাংলাদেশ ডেইরি ফারমার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি ইমরান হোসেন বলেন, সুষ্ঠু বাজার ব্যবস্থাপনা ও গোখাদ্যের দাম নাগালের মধ্যে রাখা জরুরি।