পদ্মা নদীর একটি শাখা কুমার নদ। ফরিদপুর শহরের টেপাখোলা মদনখালী থেকে উৎপত্তি হয়ে শহরের মধ্য দিয়ে এই নদ বয়ে গেছে। তবে গোটা নদের বুক কচুরিপানায় ঢাকা পড়ার কারণে এর পানি এখন আর ব্যবহার করা যায় না। এ ছাড়াও দখল আর দূষণেও ভুগছে এই নদ। স্থানীয়রা বলছেন, শহরের বিভিন্ন ধরনের বর্জ্য এসে প্রতিনিয়ত পড়ছে কুমার নদে। ফলে এ নদ এখন ময়লা-আবর্জনার ভাগাড়ে পরিণত হয়েছে।

নাব্য ফিরিয়ে আনতে পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) ২০১৮ সালে কুমার নদ পুনর্খনন ও ৬১টি পাকা ঘাটলা নির্মাণকাজ শুরু করে। এ প্রকল্পের মাধ্যমে নদে ১০ কোটি ঘনমিটার পানিপ্রবাহের মাধ্যমে ২৩ হাজার ৫৪০ হেক্টর জমিতে সেচ সুবিধা দিয়ে ৩৪ হাজার ১০৪ টন অতিরিক্ত ফসল উৎপাদনের আশা করা হয়েছিল। কিন্তু শহরের বুকে দুই পাড় থেকে অবৈধ স্থাপনা অপসারণ করতে না পারায় কুমার নদ পুনর্খনন করা যায়নি।

সরেজমিন দেখা যায়, কুমার নদের বুকে ভেসে বেড়াচ্ছে কচুরিপানা আর নানা জঞ্জাল। শহরের সব ড্রেন এসে মিশেছে নদে। ফলে পানি দূষিত ও বিষাক্ত হয়ে গেছে। নদে গোসল ও কাপড় কাচার কাজে আসা লোকজন জানান, নিতান্ত বাধ্য হয়ে তাঁরা এ পানি ব্যবহার করেন। এই পানিতে গোসল করলে শরীরে খুজলি পাঁচড়া হয়। নগরীর রথখোলার বাসিন্দা সুকুমার নাথ বলেন, ছোটবেলায় দেখেছি, সারাদেশ থেকে কুমার নদ হয়ে বড় বড় নৌকা ও স্টিমার ফরিদপুর আসত। অথচ এখন আমরা নদে গোসলও করতে পারি না।

শহরের দুটি বেসরকারি হাসপাতালের মেডিকেল বর্জ্য ড্রেন ও পাইপের মাধ্যমে পড়ছে নদে। অম্বিকাপুরে নতুন একটি ঘাটলার বিপরীত পাড়ে দেখা গেল, নদের জায়গা দখল করে পোলট্রি ফার্ম করার জন্য তৈরি হচ্ছে ঘর। স্থানীয়রা জানান, অন্য এলাকায়ও প্রভাবশালীদের ছত্রছায়ায় বাড়ছে নদের পাড় দখলের প্রতিযোগিতা।

ফরিদপুর পৌরসভার প্যানেল মেয়র মনিরুল ইসলাম বলেন, কুমার নদে বর্জ্য না ফেলতে আমরা এর পাড়ে সাইনবোর্ড টানিয়ে সবাইকে সতর্ক করেছি। কিন্তু কেউ তা মানছে না। শহরের ড্রেনের মুখগুলোর বিকল্প পথ খুঁজে বের করার বিষয়ে আমাদের চিন্তাভাবনা রয়েছে।

ফরিদপুর পাউবোর নির্বাহী প্রকৌশলী পার্থ প্রতিম সাহা বলেন, কুমার নদের পাড়ে বিভিন্ন অবকাঠামো থাকায় শহরের মধ্যকার দুই কিলোমিটার পুনর্খনন করা সম্ভব হয়নি। তবে এখানে যে নাব্য থাকার কথা, তা রয়েছে। নদে পানিদূষণের ব্যাপারে কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলে এ ব্যাপারে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেব।

এদিকে গত ১ জুন কুমার নদসহ ফরিদপুরের সব নদীনালার কচুরিপানা পরিষ্কারের লক্ষ্যে এক প্রস্তুতি সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভায় জানানো হয়, আগামী ১৭ জুন থেকে জেলা প্রশাসক কামরুল আহসান তালুকদারের নেতৃত্বে কুমার নদে স্বেচ্ছাশ্রমের ভিত্তিতে কচুরিপানা পরিষ্কার অভিযান শুরু হবে। নদ সম্পূর্ণরূপে পরিষ্কার না হওয়া পর্যন্ত এ কার্যক্রম চলবে।