কক্সবাজারের টেকনাফ উপজেলার জনসাধারণের মধ্যে যেই অপহরণ আতঙ্ক বিরাজ করিতেছে, উহাকে হালকাভাবে লইবার সুযোগ নাই। থানার রেকর্ড ও স্থানীয় অনুসন্ধান ফলের বরাত দিয়া মঙ্গলবার সমকালে প্রকাশিত প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হইয়াছে, গত সাত মাসে উপজেলার শুধু তিন ইউনিয়নেই ৬০ জন স্থানীয় বাসিন্দা ও ১০ জন রোহিঙ্গা কিশোর অপহৃত হইয়াছে। অপহৃতদের মধ্যে ৩৯ জনকে অর্ধকোটি টাকা মুক্তিপণের বিনিময়ে মুক্ত করা হইয়াছে। উপরন্তু পুলিশের এপিবিএন শাখার তথ্য অনুসারে, গত দেড় বৎসরে কক্সবাজারের রোহিঙ্গা শিবিরগুলিতে আড়াই শতাধিক অপহরণ ও মুক্তিপণ আদায়ের ঘটনা ঘটিয়াছে। আর শিবিরের বাহিরে টেকনাফ উপজেলায় আরও দুই শতাধিক মানুষ অপহরণের শিকার হইয়াছে। এইরূপ পরিস্থিতিতে উপজেলার জনজীবন স্বাভাবিক থাকাই অস্বাভাবিক এবং বাস্তবেও উহা ঘটিতেছে।

আমরা মনে করি, আইনশৃঙ্খলা বাহিনী সক্রিয় থাকিলে পরিস্থিতির হয়তো এতটা অবনতি ঘটিত না। স্থানীয়রাও অভিযোগ করিয়াছেন, অপহরণের অভিযোগ পাইবার পরও আইনশৃঙ্খলা বাহিনী দুর্গম পাহাড়ে অভিযানে যাইতে চাহে না। এহেন নিষ্ক্রিয়তার পক্ষে সাফাই গাহিতে যাইয়া টেকনাফ মডেল থানার ওসি বলিয়াছেন, অপহৃত অনেকে ইয়াবা ব্যবসার সহিত জড়িত। কিন্তু পুলিশের প্রাথমিক দায়িত্ব হইল, অপরাধের শিকার যেই কোনো ব্যক্তির পার্শ্বে দাঁড়াইয়া তাহার উপযুক্ত নিরাপত্তা নিশ্চিত করা। উহার পর ভুক্তভোগী নিজেই কোনো অপরাধের সহিত যুক্ত থাকিলে উপযুক্ত সাক্ষ্য-প্রমাণের ভিত্তিতে তাহাকে বিচারের মুখোমুখি করা। পুলিশের নীরব দর্শকের ভূমিকা পালনের অর্থ আইন নহে; অপরাধীকেই নিজের মতো চলিতে সহায়তা করা; যাহা শুধু আইনের শাসনের পরিপন্থি নহে, ঐ সীমান্ত এলাকায় আগত মাদক সমগ্র দেশে ছড়াইয়া পড়িতেও সহায়তা করে।

আলোচ্য প্রসঙ্গে পুলিশের মহাপরিদর্শকের সহিত দ্বিমতের অবকাশ নাই যে, মাদক চোরাচালান নিয়ন্ত্রণ এবং ইয়াবা কারবারিদের আইনের আওতায় আনা সম্ভবপর হইলে অপহরণসহ অপরাপর অপরাধ বন্ধ হইবে। কিন্তু প্রশ্নটা হইতেছে মার্জারের কণ্ঠে ঘণ্টা বাঁধিবার। সেই ক্ষেত্রে পুলিশ তথা আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকেই থাকিতে হইবে সম্মুখভাগে।