খুলনা সিটির ২০১৮ সালের নির্বাচনের আগে আওয়ামী লীগের মেয়র প্রার্থী তালুকদার আবদুল খালেকের ইশতেহারের প্রধান প্রতিশ্রুতি ছিল জলাবদ্ধতা নিরসন ও পরিচ্ছন্ন নগরী গড়ে তোলা। তবে জলাবদ্ধতা নিরসনে গত পাঁচ বছরে ৩৪২ কোটি টাকা খরচ হলেও কাজের কাজ কিছুই হয়নি। তাঁর এবারের নির্বাচনী ইশতেহারের ৩ নম্বরে আছে জলাবদ্ধতা দূর করার প্রতিশ্রুতি।

গত নির্বাচনের সময় তিনি ৩১ দফা ইশতেহার ঘোষণা করেছিলেন। এর ১ নম্বরে ছিল ‘সিটি গভর্নমেন্ট’ ব্যবস্থা প্রবর্তনের উদ্যোগ। এটি ছাড়া বাকি ৩০টি প্রতিশ্রুতি অন্তর্ভুক্ত হয়েছে এবারের ইশতেহারেও। এবারের ইশতেহারে কয়েকটি বিষয় যুক্ত হলেও নতুন কোনো চমক নেই।
তালুকদার খালেক মঙ্গলবার দুপুরে খুলনা প্রেস ক্লাবের ব্যাংকুয়েট হলে পরিচ্ছন্ন, জলাবদ্ধতামুক্ত ও স্মার্ট খুলনা গড়ে তোলাসহ ৪০ দফা নির্বাচনী ইশতেহার ঘোষণা করেন।

ইশতেহার ঘোষণার আগে গত পাঁচ বছরে বাস্তবায়ন করা উন্নয়ন প্রকল্পের ফিরিস্তি তুলে ধরেন খালেক। তিনি বলেন, করোনার কারণে দেশের সব কার্যক্রম স্থবির হয়ে পড়ে, যা প্রায় তিন বছর স্থায়ী ছিল। সে কারণে ইচ্ছা থাকার পরও যথাসময়ে বিশাল কর্মযজ্ঞ শেষ করা যায়নি। ফলে নগরবাসীকে হয়তো কিছুটা দুর্ভোগ পোহাতে হয়েছে। অনাকাক্ষিত এ বিলম্বের জন্য নগরবাসীর কাছে তিনি দুঃখ প্রকাশ করেন।

মেয়র প্রার্থী বলেন, চলমান উন্নয়ন কাজ শেষ হলে খুলনা আধুনিক সুযোগ-সুবিধা সংবলিত একটি স্বাস্থ্যকর নগরীতে পরিণত হবে। গত নির্বাচনে আমার ইশতেহারে ৩১ দফা পরিকল্পনা তুলে ধরেছিলাম। এর মধ্যে বেশ কিছু পরিকল্পনা বাস্তবায়ন হয়েছে।
তিনি বলেন, আমার আগের কার্যক্রমের মূল্যায়ন করে আপনারা যদি আমাকে আবারও মেয়র হিসেবে দায়িত্ব পালনের সুযোগ দেন, তাহলে সবার সহযোগিতায় খুলনাকে একটি উন্নত, সুন্দর, পরিচ্ছন্ন ও পরিকল্পিত আধুনিক নগর হিসেবে গড়ে তুলতে পারব।

তালুকদার খালেকের ৪০ দফা ইশতেহারের মধ্যে রয়েছে– পরিচ্ছন্ন, সবুজ ও পরিবেশবান্ধব খুলনা, পার্ক-উদ্যান নির্মাণ ও বনায়ন, বিদ্যমান পার্ক ও উদ্যানগুলোর প্রয়োজনীয় সংস্কার ও উন্নয়ন, উন্মুক্ত সুবিধাজনক স্থানে একটি বড় পার্ক, লেডিস পার্ক ও দুটি শিশু পার্ক নির্মাণের উদ্যোগ, নদীর পাড়ে ভ্রমণের জন্য ওয়াকওয়ে নির্মাণ, ময়ূর নদীসহ নগরীর ২২টি খাল খনন ও সংস্কার করে এর পাশে বনায়নের মাধ্যমে মনোরম পরিবেশ সৃষ্টি করা।

ইশতেহারে প্রতিশ্রুতির মধ্যে রয়েছে– জলবদ্ধতা দূরীকরণে বিশেষ ব্যবস্থা, স্বয়ংক্রিয় পদ্ধতিতে ড্রেন পরিষ্কার, আধুনিক বর্জ্য ব্যবস্থাপনার উদ্যোগ, বৃক্ষ পরিচর্যা ও সংরক্ষণ, স্বাস্থ্যসেবার মানোন্নয়ন ও নিরাপদ স্বাস্থ্যকর খুলনা, সুলভ মূল্যের চিকিৎসা ও স্বাস্থ্যসেবা, সূর্যোদয়ের আগেই পরিছন্নতা কার্যক্রম, মাদকমুক্ত নগর গড়ে তোলা, সড়কে পর্যাপ্ত আলোর ব্যবস্থা, ফুটপাত, মানবিক উন্নয়ন কার্যক্রম, বিনিয়োগ ও কর্মসংস্থান উপযোগী নগরী গড়ে তোলা, সিভিক সেন্টার গড়ে তোলা, অনুদান তহবিল চালু, কবরস্থান ও শ্মশান ঘাটের উন্নয়ন।

মাদ্রাসার শিক্ষার্থীদের জন্য প্রতিবছর প্রতিযোগিতার আয়োজন, স্মার্ট ও ডিজিটাল খুলনা গড়ে তোলা, নগরীর গুরুত্বপূর্ণ স্থানে মানচিত্র প্রদর্শন, ওয়ানস্টপ ক্রাইসিস মিটিগেশন সেল স্থাপন, সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডের উন্নয়ন, জলাশয় ও পুকুরগুলো সংরক্ষণ, শিশুদের সাঁতার শেখানোর বিশেষ উদ্যোগ, বাজারগুলো আধুনিকায়ন, হোল্ডিং ট্যাক্স না বাড়িয়ে সেবার মান বাড়ানোর কথাও ইশতেহারে তুলে ধরা হয়েছে।

মুক্তিযোদ্ধা ও বিশিষ্ট ব্যক্তিদের নামে রাস্তার নামকরণ, বধ্যভূমি সংরক্ষণ, ট্রাফিক ব্যবস্থার উন্নয়ন, শিক্ষা ব্যবস্থার উন্নয়ন, কেসিসিতে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহি নিশ্চিত করা, খুলনা মহানগরীর এলাকা সম্প্রসারণের প্রতিশ্রুতিও দিয়েছেন তালুকদার আবদুল খালেক।
ইশতেহার ঘোষণা অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক বি এম মোজাম্মেল হক ও এস এম কামাল হোসেন, কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্য পারভীন জাহান কল্পনা, কেসিসি নির্বাচন পরিচালনা কমিটির আহ্বায়ক কাজী আমিনুল হক, মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এম ডি এ বাবুল রানা, জেলা সাধারণ সম্পাদক সুজিত কুমার অধিকারী, সাবেক সংসদ সদস্য মিজানুর রহমান মিজান, আশরাফুল ইসলাম, শহিদুল হক মিন্টু, মুন্সী মাহাবুব আলম সোহাগ, অ্যাডভোকেট সাইফুল ইসলাম, রুনু রেজা প্রমুখ।


বিষয় : খুলনা সিটি নির্বাচন

মন্তব্য করুন