বাগেরহাট জেলা দায়রা জজ আদালত ও বিশ্ব ঐতিহ্য ষাটগম্বুজ মসজিদের প্রধান ফটকের পাশে নির্মাণ করা হচ্ছে দুটি ফুটওভার ব্রিজ। সড়ক বিভাগের বাস্তবায়নে বাগেরহাট-খুলনা মহাসড়কে এর নির্মাণ ব্যয় ধরা হয়েছে ৬ কোটি টাকা। তবে ব্রিজ দুটির কোনো প্রয়োজনীয়তা নেই বলে দাবি স্থানীয়দের।

পৌর এলাকার বাসিন্দা শহিদুল ইসলাম বলেন, এগুলো নির্মাণ শেষে রাস্তা পারাপারে ব্যবহার না হলেও সন্ধ্যায় গেমের আড্ডা আর রাতে মাদকের আখড়া হবে। দুর্নীতি করতে প্রকল্পের প্রয়োজন। জনগণের জন্য কতটুক প্রয়োজন, তা গুরুত্বপূর্ণ নয়। ৬ কোটি টাকার ওভারব্রিজ ৯০ ভাগ মানুষের কাজে আসবে না। এটি সরকারি টাকার অপচয় ছাড়া কিছু নয়।

সড়ক বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, যানজট নিরসন, দুর্ঘটনা প্রতিরোধ ও পথচারীদের নিরাপদে সড়ক পারাপারে রক্ষণাবেক্ষণ খাতের অর্থায়নে ৬ কোটি টাকায় কংক্রিটবেজড স্টিলের স্ট্রাকচারে নির্মিত হচ্ছে ওভারব্রিজ। ২০ ফুট উচ্চতা ও ৪০ ফুট দৈর্ঘ্যের প্রতিটি ব্রিজে চারটি সিঁড়ি থাকবে। কাজটি করছে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান আমিনুল হক প্রাইভেট লিমিটেড। গত ১৭ এপ্রিল কার্যাদেশ দেওয়া হয়। ৩০ জুনের মধ্যে দুই মাসে এটি শেষ করার কথা রয়েছে।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে সড়ক বিভাগের এক কর্মকর্তা বলেন, ‘এটি আসলে কোনো কাজে আসবে না। আমরা তো চাকরি করি, কিছু বলতে পারব না। এ সড়ক চার লেন হবে, প্রকল্প অনুমোদনের অপেক্ষায় রয়েছে। প্রকল্প অনুমোদন হলে দুই লেনের সড়কে এর উপযোগিতা থাকবে না।’

ইউনেস্কো ঘোষিত বিশ্ব ঐতিহ্য ষাটগম্বুজ মসজিদের সামনে ফুটওভার ব্রিজ নির্মাণে প্রত্ন আইন মানা হয়নি বলেও অভিযোগ উঠেছে। ষাটগম্বুজ ও সিঙ্গাইর মসজিদের মাঝ দিয়ে গেছে সড়কটি। ভারী যানবাহনের কারণে সড়কের কম্পনে ক্ষতি হচ্ছে স্থাপনা দুটির। প্রত্নতত্ত্ব বিভাগ ও ঐতিহ্য সচেতনরা সড়কটি সরিয়ে নেওয়ার দাবি জানিয়ে আসছেন। সেখানেই নির্মাণ করা হচ্ছে ওভারব্রিজ। তবে প্রত্নতত্ত্ব বিভাগের কেউ এটি নিয়ে প্রকাশ্যে কথা বলতে রাজি হননি।

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে রাদিন সরদার নামে একজন লিখেছেন, আদালতের ফুটওভার ব্রিজে মানুষ ভুলেও উঠবে না। ষাটগম্বুজের সামনে জুমার দিনে উঠতে পারে ছবি তোলার জন্য। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক আওয়ামী লীগের এক নেতা বলেন, আধুনিক শহর ও সৌন্দর্য বর্ধনের কথা বলে ওভারব্রিজ বানানো হচ্ছে। অথচ বয়স্ক, প্রতিবন্ধী, অন্তঃসত্ত্বা নারীদের পার হওয়ার ব্যবস্থা নেই। অবস্থা এমন হয়েছে, ‘সরকারি মাল, দরিয়া মে ঢাল’।

নির্মাণ এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, কয়েকটি গাছ কাটা হয়েছে। খোঁড়া হয়েছে গর্ত, চলছে বেজ ঢালাই। একপাশে ইট, পাথর, বালু ও সিমেন্ট রাখা হয়েছে। জেলার প্রয়োজনীয় কাজ না করে এ ওভারব্রিজ নির্মাণকে বিলাসিতা বলছেন অনেকে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমেও প্রতিক্রিয়া দেখাচ্ছেন।

আদালতে সেবা নিতে আসা ষাটোর্ধ্ব আমিনুল ইসলাম বলেন, দীর্ঘদিন ধরে এখানে এলেও কখনও দুর্ঘটনা চোখে পড়েনি। শুনছেন ওপরে হাঁটার রাস্তা হবে। কিন্তু অত উঁচুতে উঠে কে পার হবে? কাজী ইয়াসিন নামের এক আইনজীবী বলেন, ফকিরহাটের নোয়াপাড়া থেকে মোল্লাহাট ব্রিজ পর্যন্ত মহাসড়ক দুর্ঘটনাপ্রবণ। সেখানে ওভারব্রিজ হলে দুর্ঘটনা কমবে। এ টাকায় দুর্ঘটনাপ্রবণ এলাকায় ওভারব্রিজ করা উচিত।

বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশনের (বিএমএ) বাগেরহাট শাখার সাধারণ সম্পাদক মোশাররফ হোসেন বলেন, শহরের রাস্তা ভাঙাচোরা। মানুষ সেতুর অভাবে সাঁকো দিয়ে খাল পার হয়। যেখানে ওভারব্রিজ হচ্ছে, সেটি দুর্ঘটনাপ্রবণ নয়। ট্রাফিক পুলিশ, স্পিডব্রেকার ও জেব্রা ক্রসিংয়ে সব নিয়ন্ত্রণ সম্ভব। কয়েকজন আইনজীবী ও জেলা প্রশাসনের কর্মীরাও একই কথা বলেন।

এ বিষয়ে বাগেরহাট সড়ক বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. ফরিদ উদ্দিন বলেন, স্থানীয় এমপির ডিও লেটারের ভিত্তিতে প্রকল্পটি অনুমোদন হয়েছে। নির্ধারিত সময়ে কাজ শেষ হবে বলে জানান তিনি।