- সারাদেশ
- ৪০ টাকার পাখা ১০০, উধাও চার্জার ফ্যান
৪০ টাকার পাখা ১০০, উধাও চার্জার ফ্যান

পরিবারের সদস্যদের জন্য আলফাডাঙ্গা সদর বাজারে চার্জার ফ্যান কিনতে এসেছিলেন আমেনা বেগম। তবে ইলেকট্রনিক সামগ্রীর একাধিক দোকান ঘুরেও পাননি। বাধ্য হয়ে ছুটে যান হাতপাখার দোকানে। সেখানে গিয়েও চোখ ছানাবড়া তাঁর। কয়েকদিন আগে ৪০ টাকায় বিক্রি হওয়া তালপাখা এখন ১০০ টাকা। বাধ্য হয়ে চড়া দামে দুটি হাতপাখা কেনেন তিনি।
আমেনার মতো আলফাডাঙ্গা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের কর্মচারী জহুরুল ইসলাম সদর বাজারের একটি মুচি দোকান থেকে দরদাম করে দুটি হাতপাখা কিনেছেন ৯০ টাকা করে। তিনি বলেন, ঘন ঘন লোডশেডিংয়ে রাতে ঘুমাতে পারছি না। বাজারে চার্জার ফ্যানের অনেক দাম। তাই তালপাতার পাখা কিনেছি। তবে দাম আগের চেয়ে কয়েকগুণ বেশি।
ঘন ঘন লোডশেডিংয়ে সারাদেশের মতো ফরিদপুরের আলফাডাঙ্গাতেও বেড়েছে চার্জার ফ্যানের দাম। তাও মিলছে না। সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে তালপাখার দামও। ফলে আমেনা ও জহুরুলের মতো অনেকে বাজারে গিয়ে চার্জার ফ্যান না পেয়ে চড়া দামে কিনছেন হাতপাখা। লোডশেডিংয়ে এখন অতিষ্ঠ সাধারণ মানুষ। ব্যবসা-বাণিজ্যসহ সব ক্ষেত্রে স্থবির অবস্থা।
গ্রাহকদের অভিযোগ, উপজেলার ছয়টি ইউনিয়নের প্রত্যন্ত গ্রামগুলোয় প্রতি ঘণ্টায় তিন-চারবার বা তারও বেশি লোডশেডিং হচ্ছে। এতে অফিস-আদালত ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের স্বাভাবিক কার্যক্রমে স্থবিরতা নেমে এসেছে। তীব্র গরমের মধ্যে কৃষকরা দিনভর পরিশ্রম করে রাতে ঠিকমতো ঘুমাতে পারছেন না।
মুদি ব্যবসায়ীদের গরমে ফ্রিজের ঠান্ডা পানীয় ও আইসক্রিম বিক্রি বন্ধ হওয়ার উপক্রম। দোকানে বিস্কুট, চানাচুর ও চিপসসহ অন্যান্য সামগ্রী বিক্রি করে ব্যবসা টিকিয়ে রাখতে হচ্ছে। অনেক ব্যবসায়ীর ফ্রিজে রাখা আইসক্রিম ঠান্ডা না হওয়ায় নষ্ট হয়ে যাচ্ছে।
উপজেলার টাবনী বাজারের মুদি ব্যবসায়ী মিজানুর রহমান বলেন, গ্রাহকরা দোকানে এসে আইসক্রিম চান। তাঁদের কথা চিন্তা করে ফ্রিজ খুলে আইসক্রিম বের করে দিই। কিন্তু ঠিকমতো বিদ্যুৎ না থাকায় ফ্রিজের আইসক্রিম তরল হয়ে নষ্ট হচ্ছে।
পাখার দাম বৃদ্ধির কারণ হিসেবে ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন, দু’সপ্তাহ আগে ১০০টি হাতপাখা ৪ হাজার টাকায় কিনেছেন। এখন সে পাখা ৬-৭ হাজার টাকায় কিনতে হচ্ছে। সঙ্গে যাতায়াত খরচ আছে। আলফাডাঙ্গা সদর বাজারের ব্যবসায়ী লিটন অধিকারী জানান, আগে এ জাতীয় তালপাখা প্রতিটি ৩০-৪০ টাকায় বিক্রি করেছেন। এখন প্রতিটি ৮০-১০০ টাকায় বিক্রি করতে হচ্ছে। চাহিদা বেশি থাকায় মোকামে দাম বেড়েছে। সোমবার এক বেলায় ১০০টি পাখা শেষ হয়ে গেছে।
বাজারে চার্জার ফ্যানের দামও বেড়েছে অনেক। ব্যবসায়ীরা গত মাসে যে ফ্যান সাড়ে ৩ থেকে ৪ হাজার টাকায় বিক্রি করেছেন, এখন তা বিক্রি হচ্ছে সাড়ে ৪ থেকে সাড়ে ৫ হাজার বা তারও বেশি টাকায়। এর পরও দিতে পারছেন না। অনেক গ্রাহক অগ্রিম টাকা দিয়ে ফ্যানের জন্য অপেক্ষা করছেন। কোম্পানিগুলো পর্যাপ্ত চার্জার ফ্যান সরবরাহ করতে পারছে না।
সদর বাজারের মুকুল ইলেকট্রিকের মালিক মুকুল কুমার কুণ্ডু বলেন, প্রতিদিন গড়ে ১০০ জন চার্জার ফ্যান কিনতে আসেন। তাঁদের চাহিদা অনুযায়ী দিতে পারি না। সোমবার একটি কোম্পানিতে কয়েকশ পিস চাহিদা দিয়ে মাত্র পাঁচটি মিলেছে। দামের ব্যবধানও অনেক।
লোডশেডিংয়ের বিষয়ে আলফাডাঙ্গা পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির সাব-জোনাল অফিসের এজিএম ফাহিম হোসেন ইভান বলেন, ঘন ঘন লোডশেডিং সারাদেশেই হচ্ছে। উপজেলায় প্রতিদিন ৯ মেগাওয়াট বিদ্যুতের চাহিদা রয়েছে। কিন্তু পাওয়া যাচ্ছে গড়ে চার মেগাওয়াট। এ জন্য ঘন ঘন লোডশেডিং দিতে হচ্ছে।
লোডশেডিংয়ের সুযোগ কাজে লাগিয়ে দ্বিগুণ দামে ফ্যান ও পাখা বিক্রির বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) রফিকুল হক বলেন, বাজার তদারকি করে দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়া হবে।
মন্তব্য করুন