রাজধানীর খিলক্ষেতের বরুয়া এলাকার বোয়ালিয়া খালের পাশের আবাসন প্রকল্প থেকে মেছের আলী নামে এক ব্যক্তির লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। শরীরে আঘাতের চিহ্ন না থাকায় তার স্বাভাবিক মৃত্যু হয়েছে বলে ধরে নেয় পরিবার। তবে পুলিশের তদন্ত বেরিয়ে আসে, অজ্ঞান পার্টির খপ্পরে পড়ে তার মৃত্যু হয়। ঘটনাস্থলে পাওয়া এক নারীর জন্ম নিবন্ধন সনদের সূত্র ধরে এই হত্যাকাণ্ডের রহস্য উদঘাটন করা হয়।

পুলিশের গুলশান বিভাগের ক্যান্টনমেন্ট জোনের অতিরিক্ত উপকমিশনার ইফতেখায়রুল ইসলাম সমকালকে বলেন, পেশায় সবজি বিক্রেতা মেছের আলীর মৃত্যুকে স্বাভাবিক মনে হয়নি পুলিশের। এ কারণে অভিযোগ না থাকলেও ঘটনাটি ভালোভাবে তদন্ত করা হয়। এর মধ্যে ঘটনাস্থলে একটি পরিত্যক্ত ব্যাগ পাওয়া যায়। ব্যাগে মিনা নামে এক নারীর জন্মসনদ ও টিকাকার্ড ছিল। পরে স্বামী শাহাবুদ্দিনসহ ওই নারীকে এ ব্যাপারে জিজ্ঞাসাবাদ করে পুলিশ। তাতেই রহস্য সমাধানের সূত্র মেলে। এরপর হত্যাকাণ্ডে জড়িত অজ্ঞান পার্টির সদস্য রমজান আলীকে গত ৪ জুন গাজীপুরের মাওনা থেকে গ্রেপ্তার করা হয়।

তদন্তসংশ্লিষ্টরা জানান, ২০ মে রাতে মেছের আলী বাসা থেকে বের হন। তিনদিন পর ২৩ মে পরিবারের সদস্যরা খবর পান, বোয়ালিয়া খাল সংলগ্ন আশিয়ান হাউজিং প্রজেক্টের বালুর চরে তার মরদেহ পড়ে আছে। এ ঘটনায় তার ছেলে আল আমিন বাদী হয়ে খিলক্ষেত থানায় একটি অস্বাভাবিক মৃত্যু (ইউডি) মামলা করেন।

তদন্তে নেমে পুলিশ ঘটনাস্থলের আশেপাশের সিসিটিভি ফুটেজ পর্যবেক্ষণ করে। পরে মিনা ও তার স্বামী শাহাবুদ্দিন জানান, ঈদুল ফিতরের কয়েকদিন আগে গ্রামের বাড়ি নেত্রকোনায় যাওয়ার সময় অজ্ঞান পার্টির খপ্পড়ে পড়েন শাহাবুদ্দিন। সেদিন সঙ্গে থাকা টাকা ও ব্যাগ হারিয়ে বাসায় ফেরেন তিনি। রমজান তাকে চায়ের সঙ্গে চেতনানাশক মিশিয়ে খাইয়ে অচেতন করেন। তবে বড় কোনো ক্ষতি না হওয়ায় এ বিষয়টি পুলিশকে জানাননি তারা।

পুলিশ জানায়, শাহাবুদ্দিনের জবানবন্দির সূত্র ধরে ফের আশপাশের সিসিটিভি ফুটেজ পর্যালোচনা করা হয়। এর মধ্যে একটি ফুটেজে দেখা যায়, ঘটনার দিন সকালে মেছেরের সঙ্গে এক বয়স্ক ব্যক্তি অটোরিকশায় করে বরুয়া এলাকায় যান। তখন ওই ব্যক্তির কাঁধে রেক্সিনের একটি ব্যাগ ঝুলানো ছিল। সেই ব্যাগে ছিল শাহাবুদ্দিনের কাছ থেকে হাতিয়ে নেওয়া ব্যাগটি। পরে তাকে রমজান হিসেবে শনাক্ত করা হয়।

জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায়, তিনি মেছেরকে একই কায়দায় চায়ের সঙ্গে চেতনানাশক মিশিয়ে খাওয়ান। পরে কথা বলতে বলতে তাকে বালুচরে নিয়ে যান। সেখানে গল্প করার একপর্যায়ে মেছের চেতনা হারান। তখন তার সঙ্গে থাকা টাকা নিয়ে চলে যান রমজান। তবে ভুলবশত ব্যাগটি ঘটনাস্থলে ফেলে যান। এরপর আদালতে ১৬৪ ধারায় দেওয়া স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিতে ঘটনার সঙ্গে জড়িত থাকার কথা স্বীকার করেন তিনি।