সিলেটের দক্ষিণ সুরমার ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের নাজিরবাজার কুতুবপুর এলাকায় গতকাল বুধবার ভোরে ভয়াবহ সড়ক দুর্ঘটনায় ১৪ নির্মাণ শ্রমিক নিহত হয়েছেন। তাঁদের মধ্যে ১২ জনই সুনামগঞ্জের। নিহতের মধ্যে একজন নারীও রয়েছেন। আহত হয়েছেন আরও ১০ জন। বিপরীত দিক থেকে আসা একটি মালবোঝাই ট্রাক পিকআপের ওপর উঠিয়ে দিলে এ হতাহতের ঘটনা ঘটে।

নিহতরা হলেন– সুনামগঞ্জের আলীনগরের হারিছ মিয়া, দিরাই উপজেলার ভাটিপাড়ার সিরাজ মিয়ার ছেলে মো. সৈয়ব আলী, একই গ্রামের সিরাজ মিয়ার ছেলে সৌরভ মিয়া, সাজেদুর, রশিদ মিয়া, মধুপুর গ্রামের সোনা মিয়ার ছেলে বাদশা মিয়া, সুনাই মিয়ার ছেলে সাধু মিয়া, পাতাইয়া কাইম গ্রামের একলিম মিয়া, গছিয়া গ্রামের সিজিল মিয়া, শান্তিগঞ্জ উপজেলার বাবনগাঁওয়ের ওয়াহাব আলীর ছেলে শাহীন মিয়া, মুরাদপুরের হারুন মিয়ার ছেলে দুলাল মিয়া, তলেরবন গ্রামের আওলাদ হোসেন তালুকদার ও হবিগঞ্জের চুনারুঘাটের হলদিউড়া গ্রামের আবদুর রহিমের স্ত্রী আনোয়ারা বেগম এবং নেত্রকোনার বারহাট্টা উপজেলার মৃত ইসলাম উদ্দিনের ছেলে আওলাদ হোসেন।

জানা যায়, অন্যান্য দিনের মতো গতকাল ভোর ৫টার দিকে পিকআপে করে ৩০ শ্রমিক শহরের আম্বরখানা থেকে ওসমানীনগরের গোয়ালাবাজারে যাত্রা শুরু করেন। আহত শ্রমিকদের একজন ভাটিপাড়ার পল্লব আহমদ দুর্ঘটনার বর্ণনা দিতে গিয়ে জানিয়েছেন, বিপরীত দিকের ট্রাকটি বাঁ দিকে না গিয়ে ডান পাশে এগিয়ে আসে। তাঁদের বহনকারী পিকআপকে জোরে ধাক্কা দিলে তা উল্টে যায়। চালকের ট্রাক চালানো দেখে মনে হয়েছে, সে ঘুমিয়ে গিয়েছিল। তার ভুলের কারণে দুর্ঘটনা ঘটেছে। ঘটনার পরই পালিয়ে যায় ট্রাকচালক ও তার সহকারী।

দুর্ঘটনায় ঘটনাস্থলেই প্রাণ হারান ১১ জন। হাসপাতালে মারা যান আরও তিনজন। হতাহতদের উদ্ধার করে ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়। সকালে এক নারী শ্রমিকসহ ১৪ জনের লাশ হাসপাতাল মর্গের পাশে রাখা হয়। স্বজনহারাদের আর্তনাদে ভারি হয়ে ওঠে হাসপাতাল এলাকা। তাঁদের কেউ হারিয়েছেন স্বামী, কেউ বা ভাই, আবার কেউ সন্তান।
নিহত আবদুল হারিছের ছেলে মিজান হাসপাতালে জানান, সংঘর্ষের পর ট্রাক উল্টে যায়। ট্রাকের নিচে পড়ে মারা যান অনেকেই। সকালে ওসমানী হাসপাতালে আহতদের দেখা গেছে কারও পায়ে, কারও বা হাতে ব্যান্ডেজ করা হয়েছে।
দুর্ঘটনার পর ফায়ার সার্ভিসের সাতটি ইউনিট ও পুলিশের টিম উদ্ধারকাজে অংশ নেয়। হতাহতদের উদ্ধার করে ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয় বলে জানান সিলেট ফায়ার সার্ভিসের সহকারী পরিচালক সফিকুল ইসলাম ভূঁইয়া।

হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ পরিবারের কাছে লাশ হস্তান্তরের পর স্থানীয় ওসমানী হাসপাতাল অ্যাম্বুলেন্স মাইক্রোবাস উপকমিটির চালকরা ভাড়া ছাড়াই বাড়িতে পৌঁছে দেন। উপকমিটির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ইমরান আহমদ জানান, ১৪টি অ্যাম্বুলেন্স লাশ বহনের জন্য দেওয়া হয়। মানবিক কারণেই এ সহায়তা করা হয়েছে।
এদিকে, ট্রাক ও পিকআপ সংঘর্ষে হতাহতদের অনুদান দেওয়া হয়েছে। বুধবার সকালে ওসমানী হাসপাতালে হতাহতদের এ অনুদান দেওয়া হয়। এর মধ্যে জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে প্রত্যেক নিহতের পরিবারকে ২০ হাজার টাকা করে ও আহতদের ১০ হাজার টাকা করে অনুদান দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া সিলেট সিটি নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মেয়র প্রার্থী আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরী নিহত প্রত্যেকের পরিবারকে ২৫ হাজার টাকা করে অনুদান দেন।

এ ছাড়া দুর্ঘটনার খবর পেয়ে হাসপাতালে ছুটে যান সিলেট সফররত নৌপরিবহন প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরী। তিনি আহতদের চিকিৎসার খবর নেন এবং নিহতদের পরিবারকে সান্ত্বনা দেন।
সিলেট ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মাহবুবুর রহমান ভুঁইয়া বলেন, দুপুরের পর ময়নাতদন্ত ছাড়াই তাঁদের লাশ স্বজনের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে।