খুলনার শেরেবাংলা সড়কের বাসিন্দাদের ২০২১ সালের জানুয়ারি মাসটি অনেক দিন মনে থাকার কথা। রাস্তাটি প্রশস্ত করতে ওই মাসে দু’পাশের অন্তত আড়াইশ স্থাপনার আংশিক অথবা পুরোটা গুঁড়িয়ে দেয় সড়ক বিভাগ। এর মধ্যে ৬৭টি ছিল দুই থেকে চারতলা ভবনের একাংশ।

ওই বছরই শুরু হওয়া সড়ক প্রশস্ত করার কাজ এখনও চলছে। তবে এর মধ্যেই সড়কের জমি দখল করে নির্মাণ করা হচ্ছে ২৪ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের কার্যালয়। নগরীর জনবহুল নিরালা মোড়ে নতুন সড়কের পাশেই অনেকটুকু এলাকা নিয়ে এ কার্যালয় নির্মাণ শুরু হয় চলতি বছরের এপ্রিলে। যেই সড়কের জমি উদ্ধারে এত তৎপরতা, সেখানেই দলীয় কার্যালয় নির্মাণের ঘটনায় ক্ষুব্ধ নিরালা আবাসিক এলাকার বাসিন্দারা। তবে সরকারি দলের নেতারা জড়িত থাকায় প্রকাশ্যে কেউ প্রতিবাদ করার সাহস পাচ্ছেন না।

সড়ক বিভাগ থেকে জানা গেছে, ২০২০ সালের ৮ এপ্রিল একনেকে অনুমোদন হয় শেরেবাংলা সড়ক চার লেন প্রকল্প। খুলনা-চুকনগর-সাতক্ষীরা মহাসড়কের চার কিলোমিটার এলাকায় এ উন্নয়ন কাজে ব্যয় ধরা হয় প্রায় ১০০ কোটি টাকা। প্রকল্পের আওতায় আগের ২৬ ফুটের সড়ক ৭০ ফুট প্রশস্ত করে চার লেন এবং দু’পাশে ড্রেন ও ফুটপাত নির্মাণ করা হচ্ছে। এ কাজের জন্য দু’পাশে ৮০ ফুট জমি প্রয়োজন ছিল সড়ক বিভাগের। তবে শুরুতেই বাধা হয়ে দাঁড়ায় সড়কের দু’পাশের জমিতে নির্মাণ করা অসংখ্য ভবন ও স্থাপনা। ২০২১ সালের জানুয়ারিতে জমি উদ্ধার অভিযান শুরু করে সড়ক বিভাগ। মাত্র এক মাসের মধ্যে দু’পাশের অসংখ্য ভবনের বর্ধিতাংশসহ ছোট-বড় স্থাপনা ভেঙে দেওয়া হয়।

প্রকল্প কার্যালয় থেকে জানা গেছে, বর্তমানে সড়কটিতে কার্পেটিংয়ের কাজ চলছে। এ ছাড়া উদ্ধার করা জমিতে ড্রেন নির্মাণ চলছে। তবে এরই মধ্যে সড়কের জায়গা দখল করে স্থাপনা নির্মাণ শুরু হয়েছে। সবচেয়ে বেশি অবৈধ স্থাপনা নির্মাণ হয়েছে নিরালা মোড়ে।

সরেজমিন দেখা যায়, নিরালা মোড়ে সড়ক ও ফুটপাতের মাঝ বরাবর প্রায় ৫০ ফুট লম্বা ও ১৫ ফুট চওড়া টিনশেডের ঘর নির্মাণ করা হয়েছে। স্থানীয়রা জানান, ২৪ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের নেতারা দলীয় কার্যালয় বানাতে এ ঘর নির্মাণ করছেন। সড়কের আরেক পাশে অস্থায়ী বাজার তৈরি হয়েছে। বাজার ও দলীয় কার্যালয়ের কারণে পুরো এলাকায় ঘিঞ্জি হয়ে গেছে। তাঁরা আরও জানান, গত এপ্রিলে এই কার্যালয় নির্মাণ শুরু হয়। এর মধ্যে কেসিসি নির্বাচনের তপশিল ঘোষণা হওয়ায় কাজ বন্ধ করে দেওয়া হয়। ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতারা এই কাজ তদারিক করছেন।

২৪ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আতাউর রহমান শিকদার রাজু সমকালকে বলেন, ওই স্থানে আগে ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের কার্যালয় ছিল। সড়কের কাজের জন্য সেটি ভেঙে ফেলা হয়। সবাই বসার জন্য একটি অফিস বানানো হচ্ছে। নির্বাচনের কারণে কাজ বন্ধ রয়েছে।

কেডিএর নির্মিত নিরালা আবাসিক এলাকায় উচ্চবিত্তদের বসবাস। এ ছাড়া এই মোড়েই শেখ হাসিনা মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের অস্থায়ী কার্যালয়সহ অসংখ্য প্রতিষ্ঠান রয়েছে। এলাকার প্রবেশমুখে অবৈধ স্থাপনা নির্মাণে ক্ষুব্ধ তাঁরা। তবে প্রকাশ্যে প্রতিবাদ করতে সাহস পাচ্ছেন না কেউই।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে নিরালা জনকল্যাণ সমিতির এক নেতা বলেন, আগের অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করে সড়ক প্রশস্ত করায় আবাসিকের বাসিন্দারা খুশি হয়েছিলেন। প্রবেশমুখে ফাঁকা জায়গায় সৌন্দর্যবর্ধনের পরিকল্পনাও ছিল। তবে সেই জমিতে সরকারি দলের কার্যালয়ের পাশাপাশি দোকানপাট বসায় সবাই আশাহত হয়েছেন।

সড়ক বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী আনিসুজ্জামান মাসুদ বলেন, সড়ক দখল করে অফিস নির্মাণের বিষয়টি আমার জানা নেই। খোঁজ নিয়ে অপসারণের উদ্যোগ নেওয়া হবে।

বৃহত্তর খুলনা উন্নয়ন সংগ্রাম সমন্বয় কমিটির সভাপতি শেখ আশরাফ উজ জামান সমকালকে বলেন, সরকারি জায়গা দখল করে যদি ক্ষমতাসীন দলের অফিস নির্মাণ হয়, তাহলে সাধারণ মানুষ কী করবে? এ ছাড়া এটা শহরের সৌন্দর্য নষ্ট করেছে। সচেতন নেতাদের উচিত এর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া।