- সারাদেশ
- জেলায় জেলায় বিদ্যুৎ অফিসের সামনে বিএনপির অবস্থান, পুলিশি বাধা
জেলায় জেলায় বিদ্যুৎ অফিসের সামনে বিএনপির অবস্থান, পুলিশি বাধা

বগুড়ায় পুলিশি বাধার সম্মুখীন হন বিএনপি নেতাকর্মীরা। ছবি: সমকাল
‘অসহনীয় লোডশেডিং ও বিদ্যুৎ খাতে ব্যাপক দুর্নীতির প্রতিবাদে’ দেশজুড়ে বিদ্যুৎ অফিসের সামনে অবস্থান কর্মসূচি পালন করছে বিএনপি। বৃহস্পতিবার সকাল থেকেই দেশের বিভিন্ন জেলায় বিদ্যুৎ অফিসের সামনে অবস্থান নেন এবং বিদ্যুৎ অফিসে স্মারকলিপিও দেন বিএনপি নেতারা।
সমকাল ব্যুরো, অফিস ও প্রতিনিধিদের পাঠানো খবর-
বগুড়া ব্যুরো: পুলিশি বাধায় বগুড়ায় বিএনপির বিদুৎ অফিসের সামনের অবস্থান কর্মসূচি পণ্ড হয়ে গেছে। বাধা পেয়ে বিএনপির নেতাকর্মীরা শহরের শহীদ খোকন পার্কের সামনে অবস্থান নেন। বৃহস্পতিবার সকাল সাড়ে ১১টার দিকে শহরের নববাবাড়ী সড়কে বিএনপি কার্যালয় থেকে সংগঠনটির নেতাকর্মীরা বিক্ষোভ মিছিল নিয়ে ফুলপট্টি এলাকার নর্দার্ন ইলেকট্রিসিটি সাপ্লাই কোম্পানি (নেসকো) পিসিএলসির দিকে এগিয়ে আসেন।
বগুড়া জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক আলী আজগর তালুকদার হেনা এ মিছিলের নেতৃত্ব দেন। পরে ফুলপট্টি এলাকায় প্রবেশের আগে পুলিশ বিক্ষোভকারীদের বাধা দেয়। এই সময় উভয়পক্ষের মধ্যে উত্তেজনা দেখা দিলে শহরজুড়ে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। একপর্যায়ে বিএনপির নেতাকর্মীরা পুলিশের বাধার মুখে পিছু হটে ও শহীদ খোকন পার্কের সামনে গিয়ে শহরের সাতমাথা-জলেশ্বরীতলা সড়ক অবরোধ করে অবস্থান নেন। পরে ঘটনাস্থলে উপস্থিত পুলিশের উর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সঙ্গে আলোচনা করে বিএনপির সিনিয়র নেতাদের একটি দল বগুড়া নেসকোর কর্যালয়ে গিয়ে বিদ্যুৎ খাতে সরবারহ নিশ্চিতে স্মারকলিপি জমা দেন। নেসকো বগুড়ার নির্বাহী প্রকৌশলী আব্দুল মুন্নাফ স্মারকলিপি গ্রহণ করেন।
স্মারকলিপি জমা দেওয়া শেষে ওই সড়ক অবরোধ রেখেই বিএনপি নেতাকর্মীরা সংক্ষিপ্ত সমাবেশ করেন। বগুড়া জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক আলী আজগর তালুকদার হেনা বলেন, ‘অবৈধ সরকার ভোট লুটপাটের পাশাপাশি বিদুৎ খাতেও লুটপাট করেছে। শতভাগ বিদুতের খাতে কথা বলে দেশের মানুষের সঙ্গে হাস্যকর এক প্রতারণা করেছেন শেখ হাসিনা। বাজারে দ্রব্যেমূল্য সাধারণ মানুষের নাগালের বাইরে। বিএনপি যখন সাধারণ মানুষের বিদুৎ ও অধিকার নিশ্চিতের জন্য কর্মসূচি দিচ্ছে পুলিশ দিয়ে সেখানে বাধা দিচ্ছে এই অবৈধ সরকার। বগুড়া বিএনপির শান্তিপূর্ণ কর্মসূচিতে কারণ ছাড়াই পুলিশ বাধা দিয়েছে। এর সবকিছুর জবাব সবার থেকে সময়মতো নেওয়া হবে।’
বগুড়ার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার শরাফত ইসলাম বলেন, ‘বিদুৎ অফিস সরকারি গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা। কোন সংগঠনেরই তার সামনে সমাবেশ করার অধিকার নেই। পুলিশ বিএনপির কর্মসূচিতে বাধা দেয়নি, বরং শান্তিপূর্ণভাবে কর্মসূচি পালনে সহযোগিতা করেছে।’
পাবনা অফিস: অবস্থান ও বিক্ষোভ মিছিল শেষে ফেরার পথে বিএনপি নেতাকর্মীদের ওপর হামলা চালিয়েছেন স্বেচ্ছাসেবক লীগ ও ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা। এতে জেলা বিএনপির আহ্বায়ক হাবিবুর রহমান হাবিবসহ অন্তত ১০ জন আহত হন। বৃহস্পতিবার (৮ জুন) দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে পাবনা শহরের বড় ব্রিজের পাশে লতিফ টাওয়ার সামনে এ ঘটনা ঘটে।

বিএনপির নেতাকর্মী ও প্রত্যেক্ষদর্শীরা জানায়, জেলা বিএনপির নেতাকর্মীরা একটি বিক্ষোভ মিছিল নিয়ে শহরের গোপালপুরের পাওয়ার হাউজ পাড়ায় বিদ্যুৎ অফিসের দিকে রওনা হয়। কিন্তু পথে বড় ব্রিজের মাথায় পুলিশ বাধা দেয়, এসময় পুলিশের সঙ্গে নেতাকর্মীদের বাকবিতণ্ডা হয়। পরে জ্যেষ্ঠ নেতাদের হস্তক্ষেপে উত্তেজিত নেতাকর্মীরা শান্ত হয়। পরে বড় ব্রিজের পাশে ঘোড়া স্ট্যান্ডে সংক্ষিপ্ত সমাবেশ করে।
এদিকে একই সময়ে পাবনা জেলা পরিষদের সদস্য নজরুল ইসলাম সোহেলের নেতৃত্বে স্বেচ্ছাসেবক লীগ ও ছাত্রলীগ স্বেচ্ছাসেবক লীগের নেতাকর্মীরা ট্রাফিক মোড়ে অবস্থান নেন। বিএনপির নেতাকর্মীরা সমাবেশ শেষে ফেরার পথে লতিফ টাওয়ার সামনে আসলে ট্রাফিক মোড়ে অবস্থান নেওয়া যুবলীগ-ছাত্রলীগ ও স্বেচ্ছাসেবক লীগের নেতাকর্মীরা তাদের ওপর হামলা চালায়। এসময় জেলা বিএনপির আহ্বায়ক হাবিবুর রহমান হাবিবসহ ১০ জন আহত হয়।
হামলার অভিযোগ অস্বীকার করে জেলা পরিষদ সদস্য নজরুল ইসলাম সোহেল বলেন, ‘আমরা শান্তি মিছিল করেছি, কারও উপর হামলা চালাইনি।’
ফরিদপুর অফিস: ফরিদপুরে বিদ্যুৎ অফিসের সামনে বিএনপির অবস্থান কর্মসূচি পুলিশি বাধায় পণ্ড হয়েছে। এদিকে, বিএনপির অবস্থান কর্মসূচির প্রতিবাদে মিছিল ও সমাবেশ করেছে শহর আওয়ামী লীগ। বৃহস্পতিবার বেলা ১১টার দিকে ফরিদপুর জেলা বিএনপির কার্যালয়ের সামনে থেকে মিছিল নিয়ে বিদ্যুৎ ভবনের সামনে যাওয়ার চেষ্টা করেন দলটির নেতাকর্মীরা। তবে শহরের কাঠপট্টি তিন রাস্তার মোড় এলাকায় পুলিশ বিএনপির মিছিলে বাধা দেয়। পরে সেখানে তারা অবস্থান নিয়ে প্রতিবাদ জানান। এ সময় বক্তব্য দেন জেলা বিএনপির আহ্বায়ক সৈয়দ মোদরেস আলী ইছা ও সদস্যসচিব একে কিবরিয়া স্বপন। পরে ফরিদপুর শহরের ঝিলটুলিতে অবস্থিত বিদ্যুৎ অফিসের কর্মকর্তাদের কাছে স্মারকলিপি দেয় জেলা বিএনপির ৫ সদস্যের প্রতিনিধি দল।
অন্যদিকে বিএনপির অবস্থান কর্মসূচির প্রতিবাদে মিছিল করেছে শহর আওয়ামী লীগ। মিছিলটি জনতা ব্যাংক মোড় থেকে শুরু হয়ে ফরিদপুর প্রেসক্লাবে গিয়ে শেষ হয়।
নিজস্ব প্রতিবেদক, ময়মনসিংহ: ময়মনসিংহে হারিকেন ও মোমবাতি জ্বালিয়ে শহরের বাতিরকল বিদ্যু অফিসের সামনে অবস্থান কর্মসূচি পালন করতে মিছিল করেন বিএনপি নেতাকর্মীরা। বৃহস্পতিবার দুপুর ১২টার দিকে দলীয় কার্যালয় থেকে মিছিলটি বের হয়। মিছিলে নেতৃত্ব দেন কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক সৈয়দ এমরান সালেহ প্রিন্স। তবে বাতিরকল মোড়ে পুলিশের বাধার মুখে পড়েন বিএনপি নেতাকর্মীরা। ফলে সেখানেই সমাবেশ করেন দলটির নেতাকর্মীরা।
সমাবেশে বক্তব্য দেন কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক সৈয়দ এমরান সালেহ প্রিন্স। সমাবেশ শেষে বাতিরকলে অবস্থিত পিডিবির ময়মনসিংহ দক্ষিণ কার্যালয়ের উপকেন্দ্রে স্মারকরিপি দেয় বিএনপির প্রতিনিধি দল। উত্তর জেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক মোতাহার হোসেন তালুকদারের সঞ্চালনায় সমাবেশে বক্তব্য দেন মহানগর বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক আবু ওয়াহাব আকন্দ, অধ্যাপক সেকান্দর আলী, দক্ষিণ জেলা বিএনপির আহ্বায়ক ডা. মাহবুবুর রহমান লিটন, যুগ্ম আহ্বায়ক আলমগীর মাহমুদ আলম, উত্তর জেলা বিএনপির আহ্বায়ক অধ্যাপক এনায়েতুল্লাহ কালাম প্রমুখ।

চুয়াডাঙ্গা প্রতিনিধি: চুয়াডাঙ্গায় অবস্থান কর্মসূচি ও স্মারকলিপি প্রদান করেছে বিএনপি। দেশে লোডশেডিং ও বিদ্যুৎ খাতে দুর্নীতির বন্ধের দাবি জানান বিএনপি নেতারা। বৃহস্পতিবার বেলা ১১টা থেকে চুয়াডাঙ্গা জেলা বিএনপির আয়োজনে রেলবাজারে ওয়েস্ট জোন পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেড (ওজোপাডিকো) অফিসের সামনে এ কর্মসূচি পালন করেন তারা।
জেলা বিএনপি এবং এর অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীরা শান্তিপূর্ণভাবে এক ঘণ্টা অবস্থান কর্মসূচি পালন করে। পরে ওজোপাডিকোর নির্বাহী প্রকৌশলী পলাশ কুমার ঘোষের কাছে স্মারকলিপি প্রদান করেন বিএনপির নেতারা। অবস্থান কর্মসূচি ও স্মারকলিপি প্রদানে উপস্থিত ছিলেন সদর উপজেলা বিএনপির সভাপতি নজরুল ইসলাম, পৌর বিএনপরি সভাপতি সিরাজুল ইসলাম মনি, জেলা বিএনপির সদস্য আবু বক্কর সিদ্দিক প্রমুখ।
/ওয়াইএ/
মন্তব্য করুন