- সারাদেশ
- ওয়ান ম্যান আর্মি
ওয়ান ম্যান আর্মি

নাদিম ইকবাল
স্বপ্ন দেখতেন সিনেমা বানানোর। সিনেমার ভাষা রপ্ত করতে পাড়ি দিতে চেয়েছিলেন পাশের দেশ ভারতের পুনেতে। সেই পরিকল্পনা বাস্তবায়ন হয়নি। ভাগ্যচক্রে পাড়ি জমান কানাডায়। তারপরই যেন ভাগ্যদেবী সুপ্রসন্ন হলো। বলছি প্রবাসী নির্মাতা নাদিম ইকবালের কথা। তিনি একাধারে চলচ্চিত্রের পরিচালক, ক্যামেরাম্যান, সম্পাদক এবং প্রযোজক। তাই তো তাকে বলা যায় ওয়ান ম্যান আর্মি।
নাদিম বললেন, ‘ছোটবেলা থেকে প্রচুর সিনেমা দেখতাম। ভারতের পুনেতেও যেতে চেয়েছিলাম। যাওয়া হয়নি। ২০১৩তে কানাডায় যাওয়ার পর সেনেকা কলেজে ফটোগ্রাফির কোর্সে ভর্তি হই। দুই বছরের কোর্সটা করতে গিয়ে সিনেমা নির্মাণের আগ্রহ বেড়ে যায়। ফলে ডকুমেন্টারি ফিল্ম নিয়ে পড়া শুরু করলাম। ফিল্ম মেকিংয়ের প্রথম ক্লাসে ইন্সট্রাক্টর বলেন, কোর্স শেষে সবাইকে একটি করে সিনেমা ফাইনাল প্রজেক্ট হিসেবে জমা দিতে হবে। তখনই মাতৃভাষা নিয়ে একটি সিনেমার চিত্রকল্প তৈরি করি। ক্লাসে বসেই ছবির প্রথম ও শেষ দৃশ্য কল্পনা করি। আমার ভাবনায় ছিল– প্রথিতযশা কবি আসাদ চৌধুরীর কানাডায় আসা ও দেশে ফিরে যাওয়ার দৃশ্যই হবে আমার সিনেমার প্রথম ও শেষ দৃশ্য। কিন্তু মূল ছবিতে তাঁর বিমানবন্দরে নামার দৃশ্যটি নেই। কারণ তিনি যেদিন এলেন সেদিনের ফ্লাইটটি নির্দিষ্ট সময়ের ৪৫ মিনিট আগে এসে পৌঁছায়। তাঁকে যেখান থেকে ধরতে পারি, সেখান থেকেই ছবিটির শুরু।’
নাদিম তাঁর প্রথম প্রামাণ্য চলচ্চিত্র ‘মাদার টাং’ নির্মাণ করেন ২০১৬ সালে। মাত্র ১১ মিনিটের এই সিনেমাটি দেশে-বিদেশে আলোচিত ও প্রশংসিত হয়। নাদিমের ঝুলিতে যোগ হয় কয়েকটি আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি। এরপর তিনি নির্মাণ করলেন স্বপ্নবাজ যুবক মামুনকে নিয়ে ‘বিদ্যাভুবন’। ২৬ মিনিট ১৬ সেকেন্ডের এ প্রামাণ্যচিত্র নির্মাণের অভিজ্ঞতা জানিয়ে নাদিম ইকবাল বলেন, ‘সহজ-সুন্দর মন আর সদিচ্ছাই মানুষের অসম্ভব ক্ষমতার কথা বলে। ২০১৭ সালে এক বন্ধুর মাধ্যমে মামুন ও তাঁর স্কুলের কথা জানতে পারি। জানতে পারি স্কুলের জন্য মামুন তাঁর কিডনি বিক্রি করতে যাচ্ছেন। সেই অর্থ দিয়ে তাঁর গ্রামে তিনি গড়ে তুলবেন বিদ্যাভুবন নামে স্কুল। মনে হলো তাঁকে নিয়ে কাজ করার। এরপর কাছিয়াকান্দি গ্রামে গেলাম। প্রথমে আমাদের পরিকল্পনা ছিল দুদিন শুটিং করার। পরে ঘটনার ভেতরে এতটাই ডুবে গেলাম যে, টানা ১০ দিন শুট করেছিলাম।’ এরপর নাদিম নির্মাণ করলেন একজন শহীদ মুক্তিযোদ্ধাকে নিয়ে প্রামাণ্য চলচ্চিত্র ‘নওফেল নেভার ডাইজ’ বা ‘মৃত্যুহীন প্রাণ’। ৪৫ মিনিটের এই প্রামাণ্য চলচ্চিত্রে নাদিম ইকবাল মুক্তিযুদ্ধের কথা খুবই দক্ষ ও সচেতনভাবে বুনেছেন তাঁর ক্যানভাসে।
প্রায় এক দশক ধরে নাদিম টরন্টোতে থাকলেও, অন্যদের মতো তিনি প্রবাসজীবনে অভ্যস্ত হয়ে পড়েননি। সময় পেলেই তিনি ছুটে আসেন বাংলাদেশে। ক্যামেরায় তুলে ধরেন মাটি, মানুষ আর জীবনের কথা। নাদিম বললেন, ‘আমি এখনও পর্যন্ত যতগুলো কাজ করেছি, তার কোনোটাই পূর্বনির্ধারিত কোনো চিত্রনাট্য নিয়ে নয়।’ ২০১৬ সাল থেকে এ পর্যন্ত যতগুলো কাজ করেছেন, তার সবগুলোর বিষয় নির্বাচন দেখে মনে হয় তিনি কত বেশি মানবিক ও সংবেদনশীল। নাদিম ইকবালের সামনে এখন এক প্রশস্ত পথ। সংবেদনশীল এই চলচ্চিত্র নির্মাতা সেই পথ দিয়ে আরও সামনে এগিয়ে যাবেন দীপ্ত পায়ে।
বিষয় : নাদিম ইকবাল প্রবাসী নির্মাতা
মন্তব্য করুন