
কক্সবাজারের পেকুয়ায় সাংবাদিক হেনস্থার ঘটনায় ইয়াবা পাচারকারী ও জড়িতদের ধরতে আদেশ দিয়েছেন আদালত। এ ঘটনার সঙ্গে সম্পৃক্ত ইয়াবা পাচারকারীদের মোবাইল ও মোটরসাইকেল জব্দের ঘটনায় মামলার পরিবর্তে জিডি রুজু করে মাদক কারবারীদের সুবিধা দেওয়ার ব্যাপারেও জানতে চেয়েছেন আদালত।
গত ৪ জুন চকরিয়া সিনিয়র ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের বিচারক মোহাম্মদ জাহিদ হোসাইন এ আদেশ দেন। বৃহস্পতিবার বিকেলে গণমাধ্যমকে বিষয়টি জানান আদালত কর্তৃপক্ষ।
আদেশে বলা হয়, গত ৮ মে কক্সবাজার থেকে প্রকাশিত স্থানীয় দৈনিক 'আজকের কক্সবাজার বার্তা' পত্রিকার প্রথম পৃষ্ঠায় 'ইয়াবা উদ্ধারের ঘটনায় প্রশ্নবিদ্ধ ভূমিকায় পুলিশ' শিরোনামে প্রকাশিত সংবাদটি আদালতের দৃষ্টিগোচর হয়। সংবাদটি আদ্যোপান্ত মনোযোগ সহকারে পাঠ ও পর্যালোচনা করে আদালত জানতে পারে যে, পেকুয়া থানাধীন টৈটং ইউনিয়নের পন্ডিত বাড়ি এলাকার নির্মাণাধীন নতুন ওয়াসা ভবনের সামনে রাস্তার উপর হতে স্থানীয় লোকজন ও চৌকিদারের নিকট সন্দেহজনক মনে হওয়ায় একটি মোটরসাইকেলকে থামানোর সংকেত দেয়। ওইসময় মোটরসাইকেল আরোহী ও চালক গাড়িটি থামিয়ে রাস্তার ওপর রেখে ঘটনাস্থল থেকে কৌশলে পালিয়ে যায়। উক্ত সংবাদের ভিত্তিতে পেকুয়া থানার উপ পরিদর্শক (এসআই) মোহাম্মদ ইব্রাহিম বিধিমতে সঙ্গীয় ফোর্সসহ ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়। জিডিতে বর্ণিত সাক্ষীদের সম্মুখে লাল রঙের একটি মোটরসাইকেল এর মিটারের ওপর থেকে সচল একটি মোবাইল, ডানপাশের লুকিং গ্লাসের সাথে ঝুলানো একটি হেলমেট ও মোটরসাইকেলের সিট খুলে এর নীচে বিশেষ কায়দায় লুকিয়ে রাখা দুই হাজার পিস ইয়াবা উদ্ধার করে পুলিশ। পরে পরিত্যক্ত উল্লেখ করে জব্দ তালিকা মূলে থানায় জিডি দায়ের করেন।
আদেশে আরও বলা হয়, আদালতের বিবেচনায় উক্ত ঘটনা একটি আমলযোগ্য ও ঘৃণ্য মাদক পরিবহন সংশ্লিষ্ট ঘটনা। এ ঘটনায় জব্দকৃত মোটরসাইকেল ও মোবাইল সিম রেজিষ্ট্রেশন যুক্ত। যেহেতু মোটরসাইকেলের মালিকানা যাচাই করে ও তথ্যপ্রযুক্তির সহায়তায় জব্দকৃত মোবাইল সিমের মালিকানা যাচাই করে মাদক বহনকারী পলাতক আসামির নাম-ঠিকানা সহজে বের করা সম্ভব ছিলো। সেহেতু মাদক পরিবহনের মতো ঘৃণ্য আমলযোগ্য ঘটনার আসামিকে আইনের আওতায় আনা সমীচীন। এতে আলোচ্য ঘটনার পলাতক অজ্ঞাত আসামি দিয়ে নিয়মিত জিআর মামলা দায়ের করে তদন্ত করার আইনগত ব্যবস্থা ও সুযোগ ছিলো। এমতাবস্থায় বর্ণিত সংবাদটি অত্র আদালতের জ্ঞান ও অবগতিতে এবং সামগ্রিক বিবেচনায় সংবাদের বর্ণিত ঘটনায় দুই হাজার পিস ইয়াবা উদ্ধারের অপরাধ মাদকদ্রব্য আইনে ফৌজদারি কার্যবিধি ধারা মোতাবেক আমলে নেয়া হলো। সংবাদে বর্ণিত ও সংগঠিত অপরাধ বিচার নিষ্পত্তির সুবিধার্থে স্বতন্ত্র নথি (৩/২০২৩) খোলা হলো। উক্ত ঘটনার জড়িত আসামি, সহযোগী ও পৃষ্ঠপোষকদের চিহ্নিত করে ৩০ (ত্রিশ) দিনের মধ্যে প্রতিবেদন দাখিলের জন্য পেকুয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে নির্দেশ দেয়া হলো। এক্ষেত্রে তদন্তকারী কর্মকর্তা সন্দেহভাজন যে কাউকে গ্রেপ্তার করতে পারবে।
ওই আদেশে সংবাদ পরিবেশনকারী সাহসী ও দেশপ্রেমিক সাংবাদিক উল্লেখ করে তাকে সব ধরনের নিরাপত্তা দেওয়ার জন্য পেকুয়া থানার ওসিকে নির্দেশ দেয়া হয়।
চকরিয়া সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের সিএসআই শফিকুল ইসলাম বলেন, এসব আদেশ প্রতিপালন করে আগামী দুই কার্যদিবসের মধ্যে আদালতলে অবহিত করার জন্য পেকুয়া থানার ওসিকে নির্দেশ দেয়া হয়েছে।
সংবাদ পরিবেশনকারী সাংবাদিক ইমরান হোসাইন বলেন, স্বপ্রণোদিত হয়ে দেয়া আদালতের আদেশ আমি পেয়েছি। তবে সংবাদটি পরিবেশনের পরে মাদক কারবারিরা আমার ওপর একদফা হামলা চালিয়েছে। অফিসে এসে হুমকি দিয়ে গেছে। সবকিছু মিলিয়ে আমি আমার প্রাণনাশের আশঙ্কা করছি। পুলিশের পক্ষ থেকে আমার সাথে যোগাযোগ করা হয়নি। প্রথম থেকে আমার মনে হয়েছে পুলিশের অবস্থান মাদক পাচারকারীদের পক্ষে।
প্রসঙ্গত গত ২২ মে প্রকাশিত সংবাদের ফলোআপ রিপোর্ট তৈরির জন্য তথ্য সংগ্রহ করতে গিয়ে মাদক কারবারীর পরিবারের সদস্যদের হামলার শিকার হন দৈনিক সময়ের আলো পত্রিকার চকরিয়া প্রতিনিধি ও আজকের কক্সবাজার বার্তা পত্রিকার নিজস্ব প্রতিবেদক ইমরান হোসাইন, দৈনিক মোহনা টিভির পেকুয়া প্রতিনিধি হারুনুর রশিদ, দৈনিক বাঁকখালীর আজিজুল হক ও সমুদ্র বার্তা পত্রিকার পেকুয়া প্রতিনিধি সাইফুল ইসলাম। ওই ঘটনার পর সংবাদকর্মী সাইফুল ইসলাম থানায় এজাহার দায়ের করলেও পুলিশ আইনগত কোন ব্যবস্থা নেয়নি বলেন জানান সংবাদকর্মীরা।
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে পেকুয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) ওমর হায়দার বলেন, আদালতের আদেশ হাতে পেয়েছি। মূলত আদালত আমাদের জব্দ তালিকার ব্যাপারে জানতে চেয়েছে। আমরা ঘটনাটি পুনরায় তদন্ত করে প্রতিবেদন আদালতে দাখিল করবো।
মন্তব্য করুন