- সারাদেশ
- প্লাস দিয়ে নখ তুলে ফেলা হলো দুই ব্যবসায়ীর
শরীয়তপুরে পুলিশি নির্মমতা
প্লাস দিয়ে নখ তুলে ফেলা হলো দুই ব্যবসায়ীর

প্রতিপক্ষের ছিনতাই মামলায় উচ্চ আদালত থেকে জামিন পেয়েছিলেন দুই সহোদর ব্যবসায়ী। সেই কাগজও দেখিয়েছেন নড়িয়া সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার রাসেল মনির ও পদ্মা সেতু দক্ষিণ থানার ওসি শেখ মোহাম্মদ মোস্তাফিজুর রহমানকে। তবে তাঁরা সেই কাগজ ছিঁড়ে ফেলে দেন। এর পর তাঁদের আটক করে টানা দু’দিন পাশবিক নির্যাতন চালান। আদায় করেন ৭২ লাখ টাকা। এ ঘটনায় জড়িত ছিলেন জাজিরা উপজেলা ছাত্রলীগের সভাপতি রুবেল ব্যাপারীও।
এ ঘটনায় লিখিত অভিযোগ দায়ের করার পর ওসি মোস্তাফিজকে ক্লোজ করা হয়েছে। তবে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার রাসেলের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। অবশ্য তিন সদস্য বিশিষ্ট কমিটি গঠন করেছেন পুলিশ সুপার সাইফুল হক।
পুলিশ, ভুক্তভোগী ও লিখিত অভিযোগ সূত্রে জানা যায়, গত ২৩ মে দ্রুত বিচার আইনে পদ্মা সেতু দক্ষিণ থানায় একটি ছিনতাই মামলা হয়। মামলায় শরীয়তপুরের জাজিরা উপজেলার নাওডোবা আহম্মেদ চোকদার কান্দি এলাকার ব্যবসায়ী সাদ্দাম চোকদার ও তাঁর ছোট ভাই বকুল চোকদারসহ ৯ জনকে আসামি করা হয়। সে মামলায় ২৯ মে তিনজন উচ্চ আদালত থেকে জামিন পান। পরদিন সাদ্দাম, বকুলসহ চারজন ঢাকার কেরানীগঞ্জে এক আত্মীয়ের বাসায় বেড়াতে যান। রাতে সেই তথ্য পেয়ে ওই বাসায় হাজির হন অতিরিক্ত পুলিশ সুপার রাসেল, ওসি মোস্তাফিজ, জাজিরা উপজেলা ছাত্রলীগের সভাপতি রুবেল এবং ১০-১২ জন পুলিশ সদস্য।
সাদ্দাম তাঁদের জামিনের কাগজ দেখালে তা ছিঁড়ে ফেলেন অতিরিক্ত পুলিশ সুপার রাসেল। সাদ্দাম ও বকুলকে প্রথমে লাথি, কিল-ঘুসি ও চড়থাপ্পড় এবং পরে পুলিশের লাঠি ও হাতুড়ি দিয়ে বেধড়ক মারধর করতে থাকেন তাঁরা। এক পর্যায়ে প্লাস দিয়ে হাত ও পায়ের নখ তুলে ফেলেন। সাদ্দাম পানি পান করতে চাইলে তার ছোট ভাই বকুলকে দাড় করিয়ে বড় ভাইর মুখে প্রস্রাব করতে বাধ্য করেন। এমন নির্যাতন চলে রাত ১টা থেকে পরদিন সকাল ৮টা পর্যন্ত।
অভিযোগে আরও বলা হয়, কিছুক্ষণ পর সাদ্দাম, বকুলসহ চারজনকে গামছা ও কালো কাপড় দিয়ে চোখ বেঁধে গাড়িতে করে জাজিরা প্রান্তে পদ্মা সেতুর নিচে আনা হয়। পরে সাদ্দাম ও বকুলকে এক স্থানে এবং তাঁদের সঙ্গে আটক সাইদুল ও আনোয়ারকে অন্য স্থানে নিয়ে যাওয়া হয়। অতিরিক্ত পুলিশ সুপার রাসেল ও ওসি এ সময় সাদ্দাম ও বকুলকে বলেন, সাইদুল ও আনোয়ারকে ক্রসফায়ার দিয়েছি। তোরা ৭২ লাখ টাকা দিবি, না হলে তোদেরও ক্রসফায়ার দেওয়া হবে।
এভাবে সারাদিন রেখে রাতে পদ্মা সেতু দক্ষিণ থানায় এনে ৭২ লাখ টাকা চাঁদা চেয়ে বেত ও কাঠ, কোদালের বাট, লাঠি দিয়ে আবার তাঁরা বেধড়ক মারতে থাকেন সাদ্দাম ও বকুলকে। সারারাত চলে এ নির্যাতন। টাকার জন্য বকুলের বাবা, মা, স্ত্রী, দুই বছরের সন্তান ও চাচাতো ভাইকেও থানায় এনে সারারাত আটকে রাখেন এবং নির্যাতন করেন তাঁরা।
পরে আত্মীয়স্বজন অতিরিক্ত পুলিশ সুপার ও ওসির কাছে পাঁচটি চেকের মাধ্যমে ৭২ লাখ টাকা দিলে নির্যাতন থেকে মুক্তি পান তাঁরা। তারপরও তাঁদের জেলে পাঠানো হয়। গত ১ জুন সাদ্দাম, বকুলসহ চারজনকে শরীয়তপুর আদালতের মাধ্যমে জেলহাজতে পাঠানো হয়। পুলিশ তাঁদের পাঁচ দিনের রিমান্ড আবেদন করে। জেলা ও দায়রা জজ আদালতের বিচারক রিমান্ড নামঞ্জুর করেন। গত ৬ জুন চারজনই আদালত থেকে জামিন পান।
অভিযোগের বিষয়ে ছাত্রলীগ নেতা রুবেল সমকালকে বলেন, সাদ্দামদের বিরুদ্ধে ছিনতাই মামলা করা ব্যক্তিরা তাঁর আত্মীয়। সাদ্দাম তাঁদের টাকা ছিনতাই করেছেন। এটা উদ্ধারের জন্য তিনি গিয়েছিলেন।
মন্তব্য করুন