- সারাদেশ
- ‘হাওরে প্রকৃতির ক্ষতি করে আর উন্নয়ন নয়’
সমকাল গোলটেবিলে পরিকল্পনা মন্ত্রী
‘হাওরে প্রকৃতির ক্ষতি করে আর উন্নয়ন নয়’

শনিবার সুনামগঞ্জের শহীদ মুক্তিযোদ্ধা জগৎজ্যোতি পাবলিক লাইব্রেরিতে সমকালের আয়োজনে 'হাওরে আগাম বন্যা রোধে করণীয়' শীর্ষক গোলটেবিল আলোচনায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। সমকালের উপদেষ্টা সম্পাদক আবু সাঈদ খান এতে সভাপতিত্ব করেন। অনুষ্ঠানে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন কবি সৌরভ ভূষণ দেব।
মূল প্রবন্ধে অকাল বন্য রোধে দেওয়া প্রস্তাবনাকে যথার্থ উল্লেখ করে সুনামগঞ্জ-৪ আসনের সংসদ সদস্য ও সংসদের বিরোধী দলীয় হুইপ পীর ফজলুর রহমান মিসবাহ্ বলেন, সুরমা কুশিয়ারার উৎসস্থল বা অমলসিদ থেকে ভৈরব পর্যন্ত নদীর ক্যাপিটাল ড্রেজিংয়ের ব্যবস্থা করতে হবে। এখন যে ড্রেজিং হচ্ছে তা অপরিকল্পিত। মাটি কোথায় ফেলবে, তার কোনো পরিকল্পনা নেই। আর কোন নদী কতটুকু খনন হবে, সেটাও স্পষ্ট করা হয়নি। সাধারণ মানুষ হাইড্রোলিক চার্ট বোঝে না। ফলে নদী কতটুকু খনন হওয়ার কথা, কতটুকু হচ্ছে তাও বোঝা যাচ্ছে না।
সংরক্ষিত নারী আসনের সংসদ সদস্য অ্যাডভোকেট শামীমা আক্তার খানম বললেন, পানির প্রবাহ ও নদীর গভীরতা বাড়ানোর জন্য কার্যকর নদী খনন হচ্ছে কি-না, তা আমাদের জানতে হবে। দেখা যায় ১৬ কিলোমিটার নদী খননের প্রয়োজন, অথচ মাত্র ৪-৫ কিলোমিটার খনন করে কাজ বন্ধ করে দেওয়া হয়। খননকাজ একসঙ্গে করতে হবে।
পরিবেশবিধ্বংসী সকল কাজ বন্ধ করার দাবি জানিয়ে তিনি বলেন, তাহিরপুরের যাদুকাটা নদীতে রাতের আধারে বোমা মেশিন চলে। চার বছর তা বন্ধ ছিল। এখন আবার বোমা মেশিন চালু হয়েছে। ফলে গ্রামের পর গ্রাম বিলীন হয়ে যাচ্ছে। এ ব্যাপারে প্রশাসনকে পদক্ষেপ নিতে হবে।
সুনামগঞ্জ পৌরসভার মেয়র নাদের বখ্ত বললেন, সীমান্তবর্তী জেলা শহর সুনামগঞ্জের লাখো মানুষকে অকাল বন্যা বা অতি বন্যার কষ্ট থেকে বাঁচাতে শহর সংরক্ষণ প্রকল্প জরুরি। নদীর পানি ৭ দশমিক ৮ মিটার হলেই শহরের ঘরবাড়িতে পানি উঠে যায়। অথচ এই সুরমাপাড়েরই শহর সিলেটে নদীর পানি ১০ মিটার উঁচু দিয়ে গেলেও শহরবাসী সমস্যায় পড়েন না।
সভাপতির বক্তব্যে আবু সাঈদ খান বলেন, আপনাদের অঞ্চল, শহর ও জেলাকে বাসযোগ্য রাখতে নাগরিক সমাজের সবাইকে একাট্টা হতে হবে। উন্নয়ন কেবল মেগা প্রকল্প নয়। উন্নয়ন হচ্ছে জীবন মানের উন্নয়ন। উন্নয়ন হচ্ছে সাংস্কৃতিক উন্নয়ন, গণতন্ত্রের উন্নয়ন, নীতি নৈতিকতা উন্নয়ন। উন্নয়নের জন্য অবকাঠামো দরকার। তবে এমন কোনো অবকাঠামো গড়ে তুলবো না, যেটা পরিবেশের জন্য ক্ষতিকর।
তিনি আরও বলেন, আমাদের খেয়াল রাখতে হবে পাখি যেন উড়ে না যায়, মাছের বংশ যেন ধ্বংস না হয়। ছোটও সুন্দর হতে পারে। পরিকল্পিত পরিবেশবান্ধব উন্নয়ন দরকার। প্রকৃতিকে ক্ষেপালে, প্রকৃতি তার জবাব দেবে। উন্নয়ন ও দুর্নীতিবিরোধী অভিযান একইসঙ্গে থাকতে হবে।
সুনামগঞ্জের জেলা প্রশাসক দিদারে আলম মোহাম্মদ মাকসুদ চৌধুরী, পুলিশ সুপার মো. এহসান শাহ্, শিক্ষাবিদ পরিমল কান্তি দে, তাহিরপুর উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান করুণা সিন্ধু চৌধুরী বাবুল, বাংলাদেশ কৃষক সংগ্রাম সমিতির কেন্দ্রীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক শাজাহান কবির, জাতীয়তাবাদী কৃষক দলের জেলা কমিটির সভাপতি ও কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য আনিসুল হক, জেলা সিপিবির সভাপতি অ্যাডভোকেট এনাম আহমদ, হাওর বাঁচাও আন্দোলনের কেন্দ্রীয় কমিটির সহ-সভাপতি সুখেন্দু সেন, পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মামুন হাওলাদার, বিশিষ্ট আইনজীবী অ্যাডভোকেট স্বপন কুমার দাস রায়, কবি মুনমুন চৌধুরী, সমাজকর্মী সাদত মান্নান অভি, রাজনীতিবিদ সেলিম আহমদ, ইউপি চেয়ারম্যান আব্দুল অদুদ, কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির সভাপতি শুভঙ্কর তালুকদার মান্না, সমকালের সিলেট ব্যুরোর প্রধান মুকিত রহমানী, সুনামগঞ্জ জগৎজ্যোতি পাবলিক লাইব্রেরির সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট খলিল রহমান, জেলা পরিষদের সদস্য মুজিবুর রহমান, সদর উপজেলা পরিষদের মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান নিগার সুলতানা কেয়া, কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগের জেলা প্রশিক্ষণ কর্মকর্তা মোস্তফা ইকবাল আাজাদ, নারী উদ্যেক্তা জাহানারা বেগম, সমকাল সুহৃদ সমাবেশের জেলা সভাপতি অ্যাডভোকেট মাহবুবুল হাসান শাহীন প্রমুখ আলোচনায় অংশ নেন।
অনুষ্ঠান শেষে সমকালের গোলটেবিল আলোচনায় উপস্থিত হওয়ার জন্য জেলা প্রতিনিধি পঙ্কজ দে সকলের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানান।
মন্তব্য করুন