ঢাকা বুধবার, ০৬ ডিসেম্বর ২০২৩

২ কোটির ওয়ার্ডে আলো জ্বলেনি দেড় বছরেও

২ কোটির ওয়ার্ডে আলো জ্বলেনি দেড় বছরেও

আহমেদ কুতুব, চট্টগ্রাম

প্রকাশ: ০১ জুলাই ২০২৩ | ১৮:০০

চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালে তৈরি করা হয়েছে বিভাগীয় ‘প্রিজন সেল ওয়ার্ড’। পাঁচ জেলার অসুস্থ কারাবন্দিদের উন্নত চিকিৎসার জন্য এটি নির্মাণ করা হয়। কিন্তু গত বছরের ১ ফেব্রুয়ারি উদ্বোধনের পর খোলা হয়নি এর তালা। অযত্ন-অবহেলায় নষ্ট হচ্ছে ২ কোটি টাকায় প্রস্তুত করা বিশেষ সেলটির আসবাব ও মেশিনারিজ। বন্দিদের সাধারণ ওয়ার্ডে ভর্তি করে চিকিৎসা দেওয়ায় সৃষ্টি হচ্ছে বাড়তি চাপ, তৈরি হচ্ছে নিরাপত্তা ঝুঁকি। ফোনে কথা বলিয়ে দেওয়া, বাসার খাবার সরবরাহ, স্বজনের সঙ্গে সময় কাটানোর সুযোগ দেওয়াসহ অর্থের বিনিময়ে নানা অবৈধ সুবিধা দিয়ে চলছে অবাধ বাণিজ্য। বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক নিয়োগ না দেওয়ায় ওয়ার্ডটি চালু করা যাচ্ছে না বলে দাবি কর্তৃপক্ষের।

কারা কর্মকর্তাদের অভিযোগ, চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় কারাগার, কক্সবাজার, রাঙামাটি, খাগড়াছড়ি ও বান্দরবান জেলা কারাগারের কয়েদি ও হাজতি বন্দিদের উন্নত চিকিৎসার জন্য চমেক হাসপাতালে একটি স্বতন্ত্র প্রিজন সেল ওয়ার্ড তৈরি করা হয়। বিশেষ এই সেলে চিকিৎসা দেওয়ার জন্য প্রতিদিন ১২ থেকে ১৫ জন গুরুতর অসুস্থ রোগী পাঠানো হয়। তাদের অন্যান্য ওয়ার্ডে ভর্তি করায় হাসপাতালের দ্বিতীয় তলায় ২০ শয্যার বিশেষ ওয়ার্ডটি পড়ে আছে খালি। সেখানে গিয়ে চিকিৎসা দিতে চিকিৎসকদের অনীহার কারণেই বিপুল টাকা জলে গেছে।

জানা গেছে, আধুনিক প্রিজন সেল ওয়ার্ডের ১৬টি শয্যায় পুরুষ এবং বাকি চারটি নারী বন্দিদের জন্য সংরক্ষিত। নিরাপত্তাসহ নানা কারণে সাধারণ রোগীদের থেকে বন্দিদের আলাদা রাখার জন্যই এ ব্যবস্থা করা হয়। এটি চালু হলে মাত্র ১২ কারারক্ষী দিয়ে পুরো কক্ষটি পাহারা দেওয়া হতো। কিন্তু এখন প্রতি বন্দির জন্য এক শিফটে তিনজন করে তিনবারে অন্তত ৩৬ কারারক্ষীকে দায়িত্ব পালন করতে হচ্ছে। এর পরও সাধারণ রোগীদের জানমালের ঝুঁকি থেকে যায়। কারণ, সেখানে অনেক দাগি আসামি ও ভয়ংকর সন্ত্রাসীদেরও ভর্তি করা হয়।

অন্য রোগীদের সঙ্গে থাকলে বন্দিদেরও কিছু সুবিধা মেলে; তারা অর্থের বিনিময়ে পরিবার ও বন্ধুবান্ধবের সঙ্গে ফোনে কথা বলতে পারে। স্বজনের সঙ্গে দেখা-সাক্ষাৎ থেকে খোশ গল্পও করা যায়। বাসা থেকে সরবরাহ করা খাবারও খাওয়ার সুযোগ হয়। কারণ, চমেক হাসপাতালে সার্বক্ষণিক রোগীর চাপ থাকায় সাধারণ রোগীদের থেকে আসামিদের আলাদা করার সুযোগ সব সময় থাকে না। তবে বন্দিদের প্রিজন সেল ওয়ার্ডে রেখে চিকিৎসা নিশ্চিত করতে পারলে এসব সমস্যার মুখোমুখি হতে হতো না কারা কর্তৃপক্ষকে।

চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় কারা হাসপাতালের সহকারী সার্জন ডা. শামীম রেজা বলেন, বন্দিদের সাধারণ রোগের জন্য ১০০ শয্যার কারা হাসপাতালে চিকিৎসা দেওয়া হয়। তবে যাদের উন্নত চিকিৎসা প্রয়োজন, তাদের চমেক হাসপাতালে পাঠানো হয়। কিন্তু উদ্বোধনের দেড় বছরেও প্রিজন সেল ওয়ার্ডটি চালু না হওয়ায় সরকারের সুন্দর একটি উদ্যোগ জলে গেছে।

চমেক হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল শামীম আহসান বলেন, প্রিজন সেল ওয়ার্ড চালু করতে বেশ কিছু সমস্যা আছে। কারাগার থেকে উন্নত চিকিৎসা নিতে চমেকে আসা রোগীদের দ্রুত চিকিৎসা দিতে হয়। তাই অবস্থা বিবেচনায় তাৎক্ষণিক বিভিন্ন ওয়ার্ডে ভর্তি করা হয়। আছে স্টাফ সংকট। প্রিজন ওয়ার্ডের জন্য আলাদা করে চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যকর্মী নিয়োগ দেওয়ার সুযোগ নেই। তা ছাড়া সাধারণ রোগীদের দেখার পর বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা ওই ওয়ার্ডে গিয়ে সেবা দেওয়ার জন্য সময় পান না।

আরও পড়ুন