
যমুনা নদীর ভাঙনে স্থানীয়দের মাঝে আতঙ্ক শুরু হয় - সমকাল
উজান থেকে নেমে আসা ঢল ও টানা বৃষ্টিতে জামালপুরের দেওয়ানগঞ্জে বৃদ্ধি পাচ্ছে নদনদীর পানি। পানি বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে শুরু হয়েছে ভাঙন।
বৃহস্পতিবার সকালে বড়খাল, মাঝিপাড়া ও বওলাতলী খানপাড়া এলাকায় যমুনা নদীর ভাঙন শুরু হয়। এক দিনেই যমুনায় বিলীয় হয়েছে অন্তত দশটি বসতভিটা।
পানি উন্নয়ন বোর্ড ২০২১ সালের শুরুতে বড়খাল গ্রামে ভাঙনকবলিত যমুনার ১০০ মিটার তীরে বালুভর্তি জিও ব্যাগ ফেলে। এবারের বর্ষা মৌসুমের প্রথম দিকে তার ভাটিতে আরও ১৫০ মিটার এলাকায় বালুভর্তি জিও ব্যাগ ফেলা হয়। তবে গতকাল বৃহস্পতিবার তীব্র স্রোতে ভেসে যায় বালুভর্তি জিও ব্যাগ। এতেই শুরু হয় আগের মতো ভাঙন। ঝুঁকিতে রয়েছে বড়খাল উচ্চ বিদ্যালয় ও হলকারচর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়সহ বিভিন্ন স্থাপনা। বিদ্যালয় দুটি থেকে যমুনার ভাঙন কবলিত পাড় মাত্র ৩০ মিটার দূরে। কর্তৃপক্ষের দাবি, দ্রুত ভাঙন রোধে স্থায়ী ব্যবস্থা না নিলে এক সপ্তাহের মধ্যে যমুনায় বিলীন হয়ে যাবে প্রতিষ্ঠান দুটি।
ভাঙনের শিকার হোসেন আলী বলেন, ‘এক সময় আবাদি জমি বসতভিটা সবই ছিল। সর্বনাশা যমুনা নদীতে সেসব বিলীন হয়ে গেছে। শেষবার যেখানে আশ্রয় নিয়েছিলাম সেই স্থানটিও যমুনার ভাঙনে বিলীন হয়ে গেল। এখন পরিবার নিয়ে মাথা গোঁজার জায়গা নেই। অন্যের বাড়িতে আশ্রয় নিয়ে কোনো রকমে দিনাতিপাত করছি।’
বড়খাল গ্রামের তোতা মিয়া জানান, দীর্ঘদিন ধরে তাদের এলাকায় যমুনার ভাঙন। পানি উন্নয়ন বোর্ড তড়িঘড়ি করে জিও ব্যাগ ফেলে সাময়িকভাবে ভাঙন রোধের ব্যবস্থা করে। সে চেষ্টাও বিফলে গেল এ বছর। যমুনার তীব্র স্রোতে ভেসে গেছে জিও ব্যাগ।
মাঝিপাড়া গ্রামের বাদল চন্দ্র দাস বলেন, যমুনা নদীতে এই অঞ্চলের হাজার হাজার একর জমি ও শত শত মানুষের বসতভিটা বিলীন হয়েছে। যমুনা যেভাবে ভাঙছে স্থায়ী ব্যবস্থা না নেওয়া হলে অল্প সময়ের মধ্যে বড়খাল, মাঝিপাড়া, বওলাতলী খানপাড়াসহ চরডাকাতিয়া ও খোলাবাড়ী যমুনায় বিলীন হয়ে যাবে। দিনরাত ভাঙন আতঙ্কে কাটছে তাদের।
কথা হয় বড়খাল গ্রামের আলী হায়দার বাবুল ও শফিকুল ইসলামের সঙ্গে। তাদের মতে, পানি উন্নয়ন বোর্ডর বালুভর্তি জিও ব্যাগ যমুনার স্রোতের কাছে তুচ্ছ। দেওয়ানগঞ্জের অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখতে বড়খাল, মাঝিপাড়া ও বওলাতলী খানপাড়া গ্রামকে ভাঙন থেকে রক্ষা করতে হবে।
চিকাজানী ইউপি চেয়ারম্যান আশরাফুল ইসলাম আক্কাস বলেন, জিও ব্যাগ ফেলার পরিবর্তে ইটের ব্লক করে ভাঙনরোধে স্থায়ী ব্যবস্থা না নিলে এই নদীর ভাঙন রোধ করা সম্ভব হবে না। যমুনার ভাঙন কবলিত বড়খাল, মাঝিপাড়া, বওলাতলী খানপাড়া, চরডাকাতিয়া হয়ে খোলাবাড়ি পর্যন্ত ভাঙনরোধে স্থায়ী ব্যবস্থা নিতে পাউবোকে জানানো হয়েছে।
জামালপুর জেলা পানি উন্নয়ন বোর্ডে (পাউবো) নির্বাহী প্রকৌশলী রফিকুল ইসলাম সমকালকে জানান, যমুনার ভাঙন রোধে স্থায়ী ব্যবস্থা নিতে সমীক্ষা চলমান।
মন্তব্য করুন