নির্বাচন সামনে রেখে বিভিন্ন দাবি-দাওয়া আদায়ে কর্মসূচি দেবে হেফাজতে ইসলামের নতুন কমিটি– এমনটিই কথা ছিল। তবে কমিটি ঘোষণা করার পর দুই সপ্তাহের বেশি সময় পার হয়ে গেলেও এখন পর্যন্ত কোনো সভাই করতে পারেনি তারা। নতুন কমিটি ঘোষণার পর তাদের পুরোনো বিরোধ এখন আবার নতুন করে চাঙ্গা হয়ে উঠছে।

নতুন কমিটির বিরুদ্ধে ভেতরে ভেতরে সংগঠিত হচ্ছেন সংগঠনটির প্রতিষ্ঠাতা প্রয়াত শাহ আহমদ শফির অনুসারীরা। এর নেতৃত্ব দিচ্ছেন শফিপুত্র মাওলানা আনাস মাদানী।

সংগঠনটির পক্ষ থেকে বলার চেষ্টা করা হচ্ছে, নতুন কমিটিতে বাদ পড়া পুরোনোদেরও মূল্যায়ন করা হয়েছে। ফলে হেফাজতে ইসলামে এখন আর কোনো বিরোধ নেই। সবকিছু ঠিকঠাক চলছে।

তবে বাস্তব চিত্র ভিন্ন। সংগঠনটিতে ভেতরে ভেতরে গৃহদাহ তৈরি হয়েছে। কমিটিতে আহমদ শফির অনুসারী-সমর্থকদের স্থান না দেওয়ায় বিষয়টি নতুন নেতৃত্বের অনেকেও মেনে নিতে পারছেন না। আহমদ শফির বড় ছেলে ইউসুফ মাদানীকে কমিটিতে রাখা হলেও তিনি এর আগে হেফাজতের কোনো কার্যক্রমের সঙ্গে জড়িত ছিলেন না। শারীরিকভাবে অসুস্থ তিনি। ভালোভাবে চলাফেরা করতে পারেন না। তাঁকে কমিটিতে নায়েবে আমির করা হলেও এটাকে ‘লোক দেখানো’ বলে মনে করা হচ্ছে।

আহমদ শফি বেঁচে থাকা অবস্থায় তাঁর ছোট ছেলে আনাস মাদানীই ছিলেন হেফাজতের অন্যতম নেতা। আহমদ শফির মৃত্যুর পর বরাবরই তাঁকে হেফাজতের বাইরে রাখা হচ্ছে। তিনি সংগঠনটির সাবেক শিক্ষা ও প্রশিক্ষণবিষয়ক সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেন। অবশ্য হেফাজতে তাঁকে নিয়ে বিতর্কও কম নয়।

আহমদ শফির আস্থাভাজন ছিলেন হেফাজতে ইসলামের সাবেক যুগ্ম মহাসচিব মাওলানা মঈনুদ্দিন রুহী, মুফতি ফয়জুল্লাহ ও মাওলানা সলিমউল্লাহ। তারা মাওলানা আনাসের সঙ্গে রয়েছেন। মাওলানা সলিমউল্লাহ এর আগে হেফাজতের বিভিন্ন অনিয়ম ও বিতর্কিত কর্মকাণ্ড নিয়ে বেশ সোচ্চারও ছিলেন।

মাওলানা আনাস মাদানী সমকালকে বলেন, ‘এখন আগের সেই হেফাজত নেই। হেফাজতের লক্ষ্য-উদ্দেশ্যের সঙ্গে বর্তমান নেতৃত্বের কর্মকাণ্ডের মিল নেই। কিছু নিমকহারাম হেফাজতে ইসলামকে কুক্ষিগত করে রেখেছেন। নতুন কমিটি একটি তাঁবেদার কমিটি। তারা কোনো লক্ষ্য-উদ্দেশ্য পূরণ করতে পারবে না।’

তিনি বলেন, বেশিদিন এভাবে চলবে না। আহমদ শফির প্রকৃত অনুসারীরা পুনরায় সংগঠনের সুদিন ফিরিয়ে আনবেন। কমিটিতে বড় ভাইকে পদ দেওয়াকে লোক দেখানো বলে মন্তব্য করেন তিনি।

হেফাজতের নায়েবে আমির মাওলানা ইউসুফ মাদানী সমকালকে বলেন, ‘আমি সংগঠনের সঙ্গে তেমন একটা জড়িত ছিলাম না। নতুন কমিটি করার সময় আমাকে থাকার অনুরোধ করা হয়। আমি তাদের চাপাচাপিতে রাজি হয়ে যাই। তবে সক্রিয় নই।’

সংগঠনটির নেতাকর্মীর সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, হেফাজতে ইসলামে বড় ধরনের বিভক্তি রয়েছে। মাঠ পর্যায়ে কওমিদের বড় অংশটি এখনও প্রয়াত আহমদ শফির পদাঙ্ক অনুসরণ করেন। এখন জেলায় জেলায় একেকজনকে দায়িত্ব দিয়ে তাদের সংগঠিত করার চেষ্টা করছেন মাওলানা আনাস মাদানী।

হেফাজতে ইসলামের আগের কমিটিতে সাংগঠনিক সম্পাদক ছিলেন আজিজুল হক ইসলামাবাদী। তিনি বেশ কিছুদিন জেলও খেটেছেন। নতুন কমিটিতে তাঁকে যুগ্ম মহাসচিব করা হয়েছে। তিনি সমকালকে বলেন, ‘হেফাজতে এখন আর তেমন কোনো বিরোধ নেই। কমিটি হয়েছে বেশিদিন হয়নি। তাই সভাও করা যায়নি। শিগগির কমিটির সভা ডাকা হবে। সেই সভায় সংগঠনের কর্মসূচি ঘোষণা করা হবে।’

গত ৩১ আগস্ট হেফাজতে ইসলামের ৫৩ সদস্যের উপদেষ্টা পরিষদ ও ২১১ সদস্যবিশিষ্ট কেন্দ্রীয় কমিটি ঘোষণা করা হয়। সংগঠনের আমির শাহ মুহিবুল্লাহ বাবুনগরী কমিটি অনুমোদন দেন।