- সারাদেশ
- সরকার পতনের মধ্য দিয়ে রোডমার্চ শেষ হবে
রংপুরে মির্জা ফখরুল
সরকার পতনের মধ্য দিয়ে রোডমার্চ শেষ হবে

নগরীর গ্র্যান্ড হোটেল মোড়ের দলীয় কার্যালয়ের সামনে তারুণ্যের রোডমার্চের পথসভায় বক্তব্য দেন মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। ছবি: সমকাল
বিএনপির তারুণ্যের রোডমার্চ কর্মসূচির শুরুতে দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, অন্যায়ের বিরুদ্ধে তরুণরা দেশের মানুষকে ডাক দিয়েছেন। বর্তমান ফ্যাসিবাদ ও লুটেরার বিরুদ্ধে তারুণ্যের রোডমার্চ শুরু হয়েছে। এটি শেষ হবে সেদিন, যেদিন তারা এই সরকারের পতন ঘটাতে পারবেন। এ সরকারের পতন না হওয়া পর্যন্ত তারা ঘরে ফিরে যাবেন না। দেশে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠিত করতে সরকারকে পদত্যাগ বাধ্য করতে হবে।
শনিবার সকালে রংপুর নগরীর গ্র্যান্ড হোটেল মোড়ের দলীয় কার্যালয়ের সামনে তারুণ্যের রোডমার্চের উদ্বোধনী পথসভায় তিনি এসব কথা বলেন।
সরকার পদত্যাগের এক দফা দাবির পক্ষে জনমত গড়ে তুলতে সারাদেশে তারুণ্যের রোডমার্চ কর্মসূচি শুরু করেছে বিএনপির গুরুত্বপূর্ণ তিন অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠন ছাত্রদল, যুবদল ও স্বেচ্ছাসেবক দল। কর্মসূচির প্রথম দিন গতকাল রংপুর থেকে দিনাজপুর পর্যন্ত ১০০ কিলোমিটারের বেশি দীর্ঘ পথে রোডমার্চ অনুষ্ঠিত হয়। শুরুতে দুই কিলোমিটারের মতো গাড়িবহরের ব্যাপ্তি থাকলেও তা পরে পাঁচ থেকে ছয় কিলোমিটার পর্যন্ত বিস্তার লাভ করে। পথে পথে উৎসুক জনতা ও নেতাকর্মী এ রোডমার্চকে স্বাগত জানিয়ে রাস্তার দুই পাশে অবস্থান নেন এবং করতালি দিয়ে অভিনন্দন জানান। যাত্রাপথে নীলফামারীর সৈয়দপুর ও দিনাজপুরের বিভিন্ন স্থানে পথসভার আয়োজন করা হয়।
ধারাবাহিক কর্মসূচির অংশ হিসেবে আজ রোববার বগুড়া থেকে সান্তাহার-নওগাঁও হয়ে রাজশাহী পর্যন্ত ১২৫ কিলোমিটারের ওপর রোডমার্চ করবে ওই তিন সংগঠন। কর্মসূচি ঘিরে সকাল থেকে বৃহত্তর রংপুরের নীলফামারী, গাইবান্ধা, কুড়িগ্রাম ও লালমনিরহাট জেলার নেতাকর্মী রংপুরের দলীয় কার্যালয়ের সামনে জড়ো হতে থাকেন। সকাল ৯টা থেকে জাতীয়তাবাদী সামাজিক সাংস্কৃতিক সংস্থার (জাসাস) শিল্পীরা দেশাত্মবোধক ও দলীয় সংগীত পরিবেশন শুরু করেন। বেলা ১১টায় যখন সমাবেশ শুরু হয়, তখন ওই এলাকা জনসমুদ্রে পরিণত হয়। এ সময়ে নেতাকর্মীরা সরকারের বিভিন্ন অন্যায়-অত্যাচারের বিরুদ্ধে এবং ভোটাধিকার ফিরিয়ে দেওয়ার দাবিতে মিছিলে স্লোগানে পুরো এলাকা প্রকম্পিত করেন।
সমাবেশে মির্জা ফখরুল বলেন, আওয়ামী লীগ সরকার নানা কলাকৌশলে জোর করে ক্ষমতায় টিকে আছে। তারা অত্যন্ত পরিকল্পিতভাবে গণতন্ত্রকে নির্বাসিত করার চেষ্টা করে যাচ্ছে। আজকে বাংলাদেশের মানুষ ভোট দিয়ে তাদের প্রতিনিধি নির্বাচন করতে পারে না। মানুষ অসহায়-অতিষ্ঠ হয়ে গেছে দ্রব্যমূল্য নিয়ে। চাল, তেল, লবণসহ সবকিছুর দাম বেড়ে গেছে। বিদ্যুতের দামও বেড়েছে অনেক। কিন্তু মানুষ বিদ্যুৎ পায় না, কৃষিকাজে সেচ দিতে পারে না।
বিএনপি মহাসচিব বলেন, বর্তমান সরকার দুর্নীতির পাহাড় তৈরি করেছে। তাই আজকে অর্থনীতি ক্রমান্বয়ে নিচের দিকে নেমে গেছে। রিজার্ভ কমে যাচ্ছে। এ জন্য অর্থনীতির চাকা ঘুরছে না। আজকে তরুণরা সবচেয়ে ভুক্তভোগী। তাদের এখন চাকরি নেই।
বিএনপি মহাসচিব বলেন, খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থা ভালো নেই। এই সরকারের কাছে তাঁর পরিবার বারবার বিদেশে নিয়ে চিকিৎসার ব্যবস্থা করার জন্য বলেছে। কিন্তু সরকার কোনো কথাই শুনছে না। অথচ তারা নিজেরা চিকিৎসার জন্য বারবার বিদেশ যাচ্ছে। এক-এগারোর সময় বর্তমান প্রধানমন্ত্রীও বন্দি ছিলেন। তখন তিনি কানের অসুখের কথা বলে প্যারোলে মুক্তি নিয়ে আমেরিকা গিয়েছিলেন। অথচ আজকে খালেদা জিয়াকে তিনি বিদেশে চিকিৎসার কোনো সুযোগ দিচ্ছেন না।
যুবদলের কেন্দ্রীয় সভাপতি সুলতান সালাহউদ্দিন টুকুর সভাপতিত্বে পথসভায় আরও বক্তব্য দেন স্বেচ্ছাসেবক দলের কেন্দ্রীয় সভাপতি এস এম জিলানী, ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় ভারপ্রাপ্ত সভাপতি রাশেদ ইকবাল খান। অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন যুবদলের কেন্দ্রীয় ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক শফিকুল ইসলাম মিল্টন, স্বেচ্ছাসেবক দলের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক রাজিব আহসান এবং ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক সাইফ মাহমুদ জুয়েল।
এ সময় রংপুর মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক সামসুজ্জামান সামু, সদস্য সচিব মাহফুজ-উন-নবী ডন, জেলা বিএনপির আহ্বায়ক সাইফুল ইসলাম, সদস্য সচিব আনিছুর রহমান লাকুসহ যুবদল, স্বেচ্ছাসেবক দল, ছাত্রদল, কৃষক দল, তাঁতী দল, মহিলা দল, ওলামা দল ও জাসাসের নেতাকর্মী উপস্থিত ছিলেন।
বেলা সাড়ে ১১টায় রোডমার্চ শুরু হয়। দলীয় সূত্র জানায়, তখন দুই হাজারের বেশি মোটরসাইকেল ছাড়াও কার, জিপ, মাইক্রোবাস, পিকআপ ছাড়াও বেশ কিছু খোলা ট্রাক ছিল। পথে আরও অনেক গাড়ি যুক্ত হয়।
রোডমার্চ রংপুর থেকে দিনাজপুর অভিমুখে যাওয়ার পথে সৈয়দপুরে কেন্দ্রীয় বাস টার্মিনালে পথসভায় মির্জা ফখরুল বলেন, নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচন দিতে হবে। বাংলার মাটিতে আর কোনো পাতানো নির্বাচন করতে দেওয়া হবে না। জনগণকে সঙ্গে নিয়ে পাতানো নির্বাচন প্রতিহত করা হবে।
বিকেলে দিনাজপুর শহরের বটতলী ট্রাক টার্মিনাল প্রাঙ্গণে তারুণ্যের রোডমার্চের প্রথম দিনের সমাপনী অনুষ্ঠানে বিএনপি মহাসচিব বলেন, এই সরকার বিএনপির কর্মসূচিকে ভয় পায়। এ জন্য তাদের রোডমার্চ বানচালের জন্য নানাভাবে চেষ্টা করছে। ঠাকুরগাঁও ছাড়াও বিভিন্ন স্থানে বহু নেতাকর্মীকে গ্রেপ্তার করে মিথ্যা মামলা দিয়েছে। এ সরকার সব গণতান্ত্রিক ব্যবস্থাকে ধ্বংস করেছে। এই সরকারের বিরুদ্ধে কথা বললে বিভিন্ন আইনে মিথ্যা মামলা দিচ্ছে।
এ সমাবেশের জন্য দিনাজপুর শহরের গোর-এ-শহীদ ময়দানে পুলিশ প্রশাসন ও জেলা প্রশাসন অনুমতি দিলেও এক দিন আগে রাতে নির্ধারিত মাঠে বিএনপির কর্মসূচি পালনে নিষেধাজ্ঞা জারি করে। পরে সমাবেশের জন্য শহরের বটতলী এলাকায় ট্রাক টার্মিনাল মাঠ নির্ধারণ করে দেয়।
আজকের কর্মসূচি
রাজশাহী বিভাগীয় রোডমার্চ বগুড়া শহরের এরুলিয়া স্কুলমাঠ থেকে সকাল ৯টায় শুরু হবে। কর্মসূচি সফল করতে গতকাল দিনভর শহরে লিফলেট বিতরণ করেছেন দলের নেতাকর্মীরা। রোডমার্চটি নওগাঁ হয়ে বিকেল ৫টার দিকে রাজশাহী পৌঁছে শহরের ফায়ার ব্রিগেডের সামনের সড়কে সমাবেশের মাধ্যমে শেষ হবে।
মন্তব্য করুন