রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় (রাবি) শাখা ছাত্রলীগের সম্মেলন আগামীকাল সোমবার। প্রায় সাত বছর পর হতে যাওয়া সম্মেলনের শেষ মুহূর্তের প্রস্তুতি চলছে। ব্যানার-ফেস্টুনে ছেয়ে গেছে ক্যাম্পাস। নতুন কমিটির সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক পদ পেতে শতাধিক নেতা ধরনা দিচ্ছেন আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় ও স্থানীয় নেতাদের কাছে। তবে নেতৃত্বের দৌড়ে এগিয়ে আছেন ৯ জন। যদিও তাদের বিরুদ্ধে ছাত্রত্ব শেষ, ড্রপআউট, চাঁদাবাজি, সিট বাণিজ্য, মাদক কারবার,
শিক্ষার্থী নির্যাতন, দলীয় কোন্দল সৃষ্টিসহ নানা অভিযোগ রয়েছে।

ছাত্রলীগ সূত্রে জানা গেছে, পদপ্রত্যাশীদের মধ্যে আলোচনার শীর্ষে বর্তমান কমিটির সহসভাপতি কাজী আমিনুল হক লিংকন, জাকিরুল ইসলাম জ্যাক, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক শেখ মামুন, শাহিনুল ইসলাম সরকার ডন, গণযোগাযোগ ও উন্নয়নবিষয়ক সম্পাদক মোস্তাফিজুর রহমান বাবু, উপ-ধর্মবিষয়ক সম্পাদক তাওহীদুল ইসলাম, প্রশিক্ষণবিষয়ক সম্পাদক আসাদুল্লাহ হিল গালিব, সাংগঠনিক সম্পাদক মেহেদী হাসান মিশু ও ছাত্রলীগ কেন্দ্রীয় নির্বাহী সংসদের সদস্য সাকিবুল ইসলাম বাকি।

মার্কেটিং বিভাগের শিক্ষার্থী কাজী লিংকন ২০১৬ সালে বিবিএ, পরের বছর এমবিএ করেন। নেতৃত্ব পেতে সান্ধ্য কোর্সে পড়ছেন। তিনি বলেন, ‘সম্মেলনের মাধ্যমে দীর্ঘদিন কমিটি না থাকায় যে অচলাবস্থা তৈরি হয়েছে, তা কেটে যাবে।’ ইসলামিক স্টাডিজের ২০১৫-১৬ সেশনের শিক্ষার্থী দুর্জয় অনার্স করলেও ছাত্রত্ব ধরে রাখতে মাস্টার্স করেননি। তাঁর বিরুদ্ধে গ্রুপিং তৈরির অভিযোগ থাকলেও অস্বীকার করেন দুর্জয়।

সভাপতি প্রার্থী মেজবাহুল হকের পরিবার জামায়াত-শিবিরের সঙ্গে জড়িত বলে অভিযোগ রয়েছে। তাঁর বাবা নাশকতার মামলার আসামি। তবে তিনি এসব মিথ্যা-বানোয়াট এবং প্রতিপক্ষের অপপ্রচার বলে দাবি করেন।
সমাজবিজ্ঞানের ২০১৪-১৫ সেশনের ছাত্র ছিলেন মিশু। ড্রপআউটে ছাত্রত্ব হারান। তাঁর বিরুদ্ধে শিক্ষার্থীকে জিম্মি করে চাঁদা দাবি, সিট বাণিজ্য, দোকান ভাঙচুর, মাদক কারবার ও শিক্ষার্থীকে মারধরের অভিযোগ রয়েছে। তবে মিশু বলেন, ‘চাঁদাবাজি ও সিট বাণিজ্যের সঙ্গে আমার কোনো সম্পর্ক নেই।’

আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের ২০১৪-১৫ সেশনের ছাত্র ছিলেন গালিব। তিনিও ড্রপআউটে ছাত্রত্ব হারান। এখন গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগে সান্ধ্য কোর্স করছেন। তবে ঢাকার একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের নামে জাল সনদ এনে সান্ধ্য কোর্সে ভর্তি হন বলে অভিযোগ রয়েছে। এ বিষয়ে প্রশ্ন করলে এড়িয়ে যান গালিব। তবে অতীশ দীপঙ্কর বিশ্ববিদ্যালয়ের পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক কামরান চৌধুরী বলেন, ‘আসাদুল্লাহ হিল গালিব আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা করেননি। তাঁর সনদ জাল। প্রশাসন চাইলে আমরা প্রমাণ দেব।’

ডন ফাইন্যান্স বিভাগের ২০১১-১২ সেশনের ছাত্র। ২০১৮ সালে ছাত্রত্ব শেষ হলে ইংলিশ অ্যান্ড আদার ল্যাংগুয়েজের জার্মান ভাষার শর্ট কোর্সে ভর্তি হন। তাঁর বিরুদ্ধে সংগঠনে গ্রুপিংয়ের অভিযোগ রয়েছে। ডন বলেন, ‘গ্রুপিং নয়, আমি সব সময় সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের সঙ্গে থেকেছি।’

মোস্তাফিজুর রহমান বাবু ক্যাম্পাসে সক্রিয় ছিলেন না। তবে সম্মেলন ঘিরে হঠাৎ করে তিনি সরব হয়েছেন। সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক প্রার্থী শেখ মামুন বলেন, ‘এখন পর্যন্ত আমার নামে কেউ কোনো অভিযোগ আনতে
পারেনি। আমি সংগঠনটির আদর্শ ধারণ করে রাজনীতি করছি।’

বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার পর আশির দশক পর্যন্ত সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক পদে বিভিন্ন বিভাগ থেকে নেতৃত্ব এসেছে। পরে নেতৃত্ব স্থানীয় বলয়ে আটকে গেছে। ২০০২-০৪ সাল পর্যন্ত আহ্বায়ক ছিলেন ক্যাম্পাস-সংলগ্ন বিনোদপুর এলাকার কামরুজ্জামান চঞ্চল, ২০০৪-১০ সাল পর্যন্ত সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেন পাবনার ইব্রাহিম হোসেন মুন ও রাজশাহীর মোহনপুরের আয়েন উদ্দিন, ২০১০ সালের কমিটির সাধারণ সম্পাদক মাজেদুল ইসলাম অপু ক্যাম্পাস-সংলগ্ন তালাইমারীর বাসিন্দা, ২০১৩ সালের কমিটির সভাপতি মিজানুর রহমান রানার বাড়ি বাগমারা ও সাধারণ সম্পাদক তৌহিদ আল হোসেন তুহিন বাঘার, ২০১৫ সালের কমিটির সভাপতি ক্যাম্পাস-সংলগ্ন মেহেরচণ্ডীর রাশেদুল ইসলাম রঞ্জু ও সাধারণ সম্পাদক কাজলার খালিদ হাসান বিপ্লব, সর্বশেষ কমিটির সভাপতি গোলাম কিবরিয়ার বাড়ি ক্যাম্পাস-সংলগ্ন মেহেরচণ্ডী ও সাধারণ সম্পাদক ফয়সাল আহমেদ রুনু রাজশাহী নগরীর নওহাটার বাসিন্দা।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ছাত্রলীগের সাবেক এক শীর্ষ নেতা বলেন, ছাত্রলীগ এখন আওয়ামী লীগ নেতাদের প্রটোকল ও সালাম দেওয়ার মধ্যে আটকে গেছে। কাউন্সিলসহ দলের গুরুত্বপূর্ণ কার্যক্রমেও গণতান্ত্রিক চর্চার সংকট দৃশ্যমান। এ ইউনিটের শীর্ষ দুই পদে বিগত দুই দশকের বেশি ঘুরেফিরে স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতাদের ‘পছন্দ’ প্রাধান্য পাচ্ছে। ফলে ক্যাম্পাসে সক্রিয় নন এমন শিক্ষার্থীও পদ পাচ্ছেন। এবারও ব্যতিক্রম হবে বলে মনে হয় না। শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক ফয়সাল আহমেদ রুনু বলেন, ‘আগামী জাতীয় নির্বাচন আওয়ামী লীগের জন্য খুবই চ্যালেঞ্জের। ফলে নেতৃত্বে যোগ্য ও ত্যাগীরা প্রাধান্য পাবে।’

রাবি ছাত্রলীগের সবশেষ সম্মেলন হয় ২০১৬ সালে। এর পর গত বছরের ১২ নভেম্বর তারিখ নির্ধারণ করলেও শেষ পর্যন্ত সম্মেলন হয়নি। শীর্ষ দুই পদে ৯৪ জন জীবনবৃত্তান্ত জমা দেন, যার মধ্যে সভাপতি ২২ ও সম্পাদক পদে ৭২ জন।