মেহেরপুরে ব্যাপক হারে ছড়িয়ে পড়েছে অ্যানথ্রাক্স রোগ। দুই উপজেলায় চলতি মাসেই দুই শতাধিক মানুষ এ রোগে আক্রান্ত হয়েছেন বলে খবর পাওয়া গেছে। রোগটি প্রতিরোধে কার্যকর ব্যবস্থা না নেওয়ার অভিযোগ উঠেছে প্রাণিসম্পদ বিভাগের বিরুদ্ধে। আগস্ট থেকে চলতি মাসের প্রথম ১৫ দিনে ৪৫০ জনের বেশি অ্যানথ্রাক্সে আক্রান্ত হয়েছে বলে মেহেরপুর হাসপাতাল ও গাংনী স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সসহ একাধিক সূত্রে জানা গেছে।

মেহেরপুর জেনারেল হাসপাতালের চিকিৎসা কর্মকর্তা মখলেচুর রহমান ও গাংনী উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কর্মকর্তা সুপ্রভা রানী এ তথ্য নিশ্চিত করে বলেন, প্রতিদিনই রোগীরা হাসপাতালে এসে চিকিৎসা নিচ্ছেন। এ বছর সদর ও গাংনীতে আক্রান্তের সংখ্যা বেশি। তবে মুজিবনগরের কয়েকটি গ্রামেও রোগী পাওয়া গেছে।

এ দুই চিকিৎসা কর্মকর্তার মতে, অনুন্নত এলাকা হওয়ায় মানুষের অ্যানথ্রাক্স সম্পর্কে ধারণা কম। আক্রান্ত পশু পরীক্ষা-নিরীক্ষা ছাড়াই জবাই করে মাংস খাচ্ছেন। অসুস্থ পশু গ্রামে ও হাটে জবাই করে মাংস বিক্রি হচ্ছে। যারা মাংস নাড়াচাড়া করছেন, রান্নার জন্য ধুচ্ছেন– তারা এ রোগে আক্রান্ত হচ্ছেন।

গরুর মাংস কিনে আনলে ধুয়ে রান্না করেন গাংনীর বেতবাড়িয়া গ্রামের গৃহবধূ মনিরা খাতুন। পরিবারের সবাই খেলেও তিনজনের শরীরে ঘা হয়েছে। তিনি জানান, বেতবাড়িয়া কমিউনিটি ক্লিনিকে গেলে গাংনী স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে পাঠানো হয়। চিকিৎসা নিয়ে ঘা কমেছে। আগস্ট মাস থেকে এ পর্যন্ত ৬৭ জন রোগীকে গাংনী স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ও মেহেরপুর হাসপাতালে পাঠিয়েছেন বলে জানান কমিউনিটি ক্লিনিকটির হেলথ কেয়ার প্রোভাইডার জিন্নাতুন নেছা। আক্রান্ত অনেকের সেরে উঠতে দেরি হচ্ছে বলে জানান তিনি।

বামুন্দী গ্রামের কৃষক আজিজুল হক বলেন, পশু অসুস্থ হলে তার পরিচর্যা করতে হয়। বেশি অসুস্থ হলে অনেকে জবাই করে বিক্রি করেন। সেই মাংস কিনে খাওয়ায় অনেকে অ্যানথ্রাক্সে আক্রান্ত হচ্ছেন। খাওয়ার দু-চার দিন পর শরীরে বড় বড় ঘা হয়। সদরের উজুলপুর গ্রামের রূপালী খাতুনের ভাষ্য, তাঁর চাচাশ্বশুর গরু জবাই করে মাংস দিয়েছিলেন। তা ধুয়ে রান্না করায় তাঁর হাতে ঘা হয়েছে। চাচাশ্বশুরের বাড়ির যারা মাংস নাড়াচাড়া করেছেন, সবাই আক্রান্ত হয়েছেন।

অসুস্থ পশু জবাই করতে নিষেধ করা হয়েছে বলে জানান সদরের কুতুবপুর ইউপি চেয়ারম্যান সেলিম হোসেন। তিনি বলেন, জনগণকে সতর্ক করতে মাইকিং করা হয়েছে। কোথাও অসুস্থ পশু জবাইয়ের খবর পেলে জানাতে বলা হয়েছে।

গাংনী বাজার এলাকার শিক্ষক বীর মুক্তিযোদ্ধা সিরাজুল ইসলাম বলেন, প্রাণিসম্পদ ও স্বাস্থ্য বিভাগের তদারকি না থাকায় অসুস্থ পশু জবাই হচ্ছে। জবাইয়ের আগে সুস্থতার সনদ নেওয়ার নিয়ম রয়েছে। একজন স্যানিটারি ইনস্পেক্টর পরিদর্শন করে সনদের বিষয়টি নিশ্চিত করবেন। অথচ কসাইরা পশুর সনদ নেন না। স্বাস্থ্য বিভাগেরও কেউ পরিদর্শন করেন না। এ কারণে রোগটি প্রতিরোধ করা যাচ্ছে না।

তবে অ্যানথ্রাক্স প্রতিরোধে গরু-ছাগলের টিকা দেওয়ার পাশাপাশি মানুষকে সচেতন করার কার্যক্রম অব্যাহত আছে বলে দাবি উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা মো. আলাউদ্দিনের। কর্মী সংকট থাকলেও সীমিত জনবল নিয়ে কার্যক্রম চালাচ্ছেন বলে জানান তিনি। জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা মো. সাইদুর রহমান বলেন, প্রত্যন্ত এলাকায় গোপনে অসুস্থ পশু জবাই করায় মানুষ অ্যানথ্রাক্সে আক্রান্ত হচ্ছেন। তারা সচেতন হলে এ রোগের প্রকোপ থেকে রক্ষা পাওয়া সম্ভব। এর প্রকোপ শিগগিরই কমে আসবে।

সিভিল সার্জন জাওয়াহেরুল আনাম সিদ্দিকী বলেন, মেহেরপুর হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে আসা অধিকাংশ রোগী গাংনীর। দেড় মাসে এ উপজেলার অন্তত ৩০০ ও সদরে ১৫০-এর কিছু বেশি রোগী পাওয়া গেছে। মুজিবনগরে ১০-১২ জন হতে পারে। জেলা প্রশাসন ও প্রাণিসম্পদ দপ্তর উদ্যোগী হয়ে অসুস্থ পশু জবাই না করতে দিলে রোগটি নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব হবে।

বিষয় : অ্যানথ্রাক্স

মন্তব্য করুন