
ফাইল ছবি
প্রতিবন্ধী না হয়েও ভাতা পাওয়ার আশায় এক আওয়ামী লীগ নেতাকে টাকা দিয়ে পেয়েছেন কম্পিউটারে তৈরি প্রতিবন্ধী কার্ড। ঘটনাটি ঘটেছে নাটোরের লালপুর উপজেলার দুড়দুড়িয়া ইউনিয়নে। এ ঘটনায় প্রতিকার চেয়ে গত ১২ সেপ্টেম্বর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কাছে ২৫ জন ভুক্তভোগী লিখিত অভিযোগ করেছেন।
উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা মোতালেব সরকার বলেন, ভুক্তভোগী ২৫ জনের কার্ড যাচাই করে দেখা গেছে, সব কার্ডই ভুয়া। বিগত উপজেলা সমাজসেবা অফিসারের স্বাক্ষর স্ক্যান করে কম্পিউটারে তৈরি করা হয়েছে কার্ডগুলো। তাদের সঙ্গে প্রতারণা করা হয়েছে।
ভুক্তভোগী দুড়দুড়িয়া ইউনিয়নের বেড়িলাবাড়ী গ্রামের জিল্লুর রহমানের ভাষ্য, তিনি গাছ থেকে পড়ে হাতে চোট পান। এখন হাত দিয়ে তেমন কাজ করতে পারেন না। প্রতিবন্ধী ভাতার আশায় বছর খানেক আগে আসলাম উদ্দিনকে ২ হাজার ৫০০ টাকা দিয়ে একটি কার্ড পেয়েছেন। কার্ডটি দিয়ে কাজ হচ্ছে না। এখন টাকাও ফেরত পাচ্ছেন না।
শুধু তিনিই নন, তাঁর মতো আরও ২৩ জন প্রতিবন্ধী কার্ড করার জন্য ওই আওয়ামী লীগ নেতাকে ২ হাজার ৫০০ করে টাকা দিয়ে পেয়েছেন সমাজসেবা কর্মকর্তার স্বাক্ষর স্ক্যান করে কম্পিউটারে তৈরি ভুয়া প্রতিবন্ধী কার্ড।
একই এলাকার পলান উদ্দিনের ছেলে আব্দুল মান্নানের ভাষ্য, তার এক হাত নেই। প্রতিবন্ধী ভাতার জন্য বিভিন্ন জায়গায় ঘুরেও প্রতিবন্ধী ভাতার কার্ড করতে ব্যর্থ হন তিনি। পরে আওয়ামী লীগ নেতা আসলাম উদ্দিন তাঁকে প্রতিবন্ধী কার্ড করে দেওয়ার আশ্বাস দেন। তাঁকে ২ হাজার ৫০০ টাকা, ভোটার আইডি কার্ডের ফটোকপি ও এক কপি ছবি দিয়েছেন। টাকা দেওয়ার কিছু দিন পরে আসলাম উদ্দিন তাঁকে একটি প্রতিবন্ধী কার্ড দেন। তাঁর কার্ডটি নিয়ে ইউনিয়ন পরিষদের তথ্য সেবাকেন্দ্রে আবেদন করতে যান। তাঁর কার্ড দিয়ে অনলাইনে আবেদন হয় না। পরে তিনি উপজেলা সমাজসেবা অফিসে ওই কার্ড নিয়ে গেলে জানতে পারেন তাঁর কার্ডটি ভুয়া। তিনি প্রতারণার শিকার হয়েছেন। শুধু মান্নানই নন। তাঁর মতো ওই গ্রামের আরও ২৩ জনের কাছ থেকে এক বছর আগে ২ হাজার ৫০০ করে টাকা নিয়ে এমন ভুয়া প্রতিবন্ধী কার্ড করে দিয়েছেন আসলাম উদ্দিন।
অভিযুক্ত দুড়দুড়িয়া ইউনিয়নের ১ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সহসভাপতি আসলাম উদ্দিন অভিযোগ অস্বীকার করেছেন। তিনি দাবি করেন, তাঁকে হেয় করতে ষড়যন্ত্র করা হচ্ছে। যারা তাঁর বিরুদ্ধে অভিযোগ করছেন তিনি তাদের চেনেন না।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শামীমা সুলতানা বলেন, ‘এ-সংক্রান্ত লিখিত অভিযোগ পেয়েছি। ঘটনাটি তদন্ত করে ব্যবস্থা নিতে উপজেলা সমাজসেবা অফিসারকে নির্দেশ দিয়েছি। একই সঙ্গে ভুক্তভোগীদেরও থানায় প্রতারণার এজাহার দায়ের করার পরামর্শ দিয়েছি।’
মন্তব্য করুন