- সারাদেশ
- বাঁধের কাজে ধীরগতি, উপকূলে আতঙ্ক
বাঁধের কাজে ধীরগতি, উপকূলে আতঙ্ক

রামগতি উপজেলার বড়খেরী ইউনিয়নের রঘুনাথপুরে মেঘনার ভাঙন। ছবি-সমকাল
রামগতির অনেক এলাকায় মেঘনা নদীর পানির চাপে ভাঙন দেখা দিয়েছে। জোয়ারের তীব্র স্রোতে পানি উঠছে লোকালয়ে। এরই মধ্যে বিলীন হয়েছে ফসলি জমি, ঘরবাড়িসহ নানা স্থাপনা। বাঁধ নির্মাণে প্রকল্পের কাজ চলছে ঢিমেতালে। চর আলগী ও চর আলেকজান্ডার এলাকায় নদীতীর সংরক্ষণ প্রকল্পের বালুভর্তি জিও ব্যাগের বাঁধও ধসে গেছে। ফলে তীব্র ভাঙনে উপকূলের বাসিন্দাদের আতঙ্কে দিন কাটছে।
রামগতির বড়খেরী ইউনিয়নের বাসিন্দা প্রান্ত মজুমদারের দাবি, ঠিকাদার বালু ও শ্রমিক সংকট দেখিয়ে কাজ শুরু করেনি। ফলে এলাকাটি ভাঙনের মুখে পড়েছে। কয়েকটি বাড়ি নদীতে চলে গেছে। জোয়ারের পানি আসায় ভোগান্তির শেষ নেই। চর টবগী গ্রামের শরীফুল ইসলাম বলেন, উপকূলীয় এলাকার মানুষকে ভাঙন থেকে রক্ষায় তদারকির মাধ্যমে প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করতে হবে।
রামগতির বয়ারচর সেতু থেকে ওচখালী পর্যন্ত ১২ কিলোমিটারের মধ্যে ৬ দশমিক ২ কিলোমিটারে বেড়িবাঁধ আছে। বাকি ৫ দশমিক ৮ কিলোমিটার বাঁধ নির্মাণ করবে পাউবো। উপসহকারী প্রকৌশলী এ এম এম নঈম বলেন, এ অংশে দুটো লটে কাজ পেয়েছে ঠিকাদার। একটির ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান কেসিইএল অ্যান্ড কেসিসি জেবি ২০২২ সালের ১৪ আগস্ট কার্যাদেশ পেলেও শ্রমিক ও বালু সংকট দেখিয়ে গড়িমসি করছে। অন্যটির টেন্ডার প্রক্রিয়াধীন। কেসিইএল’র ব্যবস্থাপনা পরিচালক জয় খান কবে কাজ শুরু হবে, জানাতে পারেননি।
ওচখালী থেকে সেন্টার খাল পর্যন্ত সাড়ে ৯ কিলোমিটারের মধ্যে সাড়ে ৩ কিলোমিটার বেড়িবাঁধ আছে। বাকি ৬ কিলোমিটারের দায়িত্বে থাকা উপসহকারী প্রকৌশলী তনয় রায় বলেন, এখানে ছয়টি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান কাজ করছে। কেউই কার্যাদেশ অনুযায়ী কাজ শেষ করতে পারেনি।
সেন্টার খাল থেকে কমলনগরের সীমানা পর্যন্ত ৭ কিলোমিটার বাঁধ নির্মাণকাজের দায়িত্বে থাকা উপসহকারী প্রকৌশলী মো. জোবায়ের বলেন, গত বছর ৯টি লটে ৯ জন ঠিকাদার কাজ পেয়েছে। সঠিক সময়ে কেউই জিও ব্যাগ ডাম্পিং করতে পারেনি। একজন ব্লকের কাজ শুরু করেছে। আর লক্ষ্মীপুর পাউবোর উপবিভাগীয় প্রকৌশলী এম এম জাহাঙ্গীরের ভাষ্য, আরও ৯ ঠিকাদার কার্যাদেশ পেয়েছে। বর্ষা শেষ হলে কাজ শুরু হবে।
চর আলগী ও চর আলেকজান্ডার ইউনিয়নে ঘুরে ও স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, পাউবোর কার্যাদেশ পেলেও অনেক ঠিকাদার যথাসময়ে কাজ শুরু করেনি। জিও ব্যাগ ডাম্পিংয়ের কাজও যথাযথভাবে হয়নি। অনেক জায়গায় জিও ব্যাগের বাঁধ নির্মাণ হলেও কিছু অংশে দেখা দিয়েছে ধস। বড়খেরী ইউনিয়নে দৃশ্যমান কাজ হয়নি। রামগতি-লক্ষ্মীপুরের আঞ্চলিক সড়কের বড়খেরী অংশ ভাঙনের মুখে রয়েছে।
চর আলগী ইউপি চেয়ারম্যান জাকির হোসেন লিটন জানান, চর টবগী এলাকা ব্যাপক হারে ভাঙছে। ঠিকাদাররা কাজ শেষ করতে পারেনি। প্রায় ১৫০ মিটার জিও ব্যাগের বাঁধ ধসে গেছে। মসজিদসহ অসংখ্য ঘরবাড়ি ভেঙে গেছে। চর আলেকজান্ডার ইউনিয়নের উকিলপাড়া অংশের ১৫০ মিটার জিও ব্যাগের বাঁধ নদীতে ধসে গেছে বলে জানান ইউপি চেয়ারম্যান শামীম আব্বাস সুমন। তাঁর ভাষ্য, টেকসই বেড়িবাঁধ না হলে ভোগান্তির শেষ থাকবে না। বড়খেরী ইউপি চেয়ারম্যান হাসান মাকসুদ মিজান বলেন, রঘুনাথপুরের কিছু অংশে জিও ব্যাগ ডাম্পিংয়ের কাজ করেছে। এ ছাড়া দৃশ্যমান কোনো কাজ হয়নি।
তবে পাউবোর লক্ষ্মীপুরের নির্বাহী প্রকৌশলী ফারুক আহমেদের দাবি, রামগতি ও কমলনগরের ১৩ কিলোমিটারের ১৮ লাখ জিও ব্যাগ ডাম্পিং করা হয়েছে। নদী উত্তাল থাকায় কাজ বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। আগামী মাসের প্রথম সপ্তাহে কাজ শুরু হবে। যেসব ঠিকাদার কাজ করবে না তাদের বাতিল করা হবে। রামগতি-লক্ষ্মীপুর সড়কের বড়খেরীর অংশে জিও ব্যাগ ডাম্পিংয়ের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।
মন্তব্য করুন