নওগাঁর বদলগাছী উপজেলায় ভিডব্লিউবি উপকারভোগীদের কাছ থেকে ২০০ টাকা করে আদায়ের অভিযোগ উঠেছে। মিঠাপুর ইউপি চেয়ারম্যানের নির্দেশে এ টাকা আদায় করা হয়েছে বলে জানা গেছে। রসিদে টাকা আদায়ের কারণও উল্লেখ করা হয়নি। তবে গৃহকর বাবদ টাকা নেওয়া হয়েছে বলে দাবি করেছেন চেয়ারম্যান।

উপকারভোগীরা জানিয়েছেন, বৃহস্পতিবার ইউপি কার্যালয়ে চাল বিতরণের সময় গ্রাম পুলিশ (চৌকিদার) সদস্যরা ‘ইউরেট রসিদ’র মাধ্যমে টাকা আদায় করেন। তবে খাত উল্লেখ ছিল না। এর প্রতিবাদ করেও লাভ হয়নি। গ্রাম পুলিশ সদস্য বলেছেন, ‘দুবছর মাগনা চাল পাবেন, এ কারণে সবাইকে ২০০ টাকা করে দিতে হবে।’

মহিলা ও শিশুবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের ভিডব্লিউবি কার্যক্রমটি বাস্তবায়ন করছে মহিলাবিষয়ক অধিদপ্তর। আগের নাম ছিল দুস্থ মহিলা উন্নয়ন (ভিজিডি)। ইউনিয়নের ২৩৫ জন উপকারভোগী রয়েছেন। তারা দু’বছর মাসে ৩০ কেজি করে চাল পাবেন।

ভুক্তভোগীদের অভিযোগ, বৃহস্পতিবার তাদের ৩০ কেজি করে চাল দেওয়া হয়। এর আগে গ্রাম পুলিশ সবার কাছ থেকে ২০০ টাকা করে দাবি করে। দিতে না চাইলে চাল দেবে না বলে জানায়। বাধ্য হয়ে তারা টাকা দিয়েছেন। চেয়ারম্যান টাকা আদায়ের নির্দেশ দিয়েছেন বলে তারা জানিয়েছেন। উপকারভোগীরা ডাচ্-বাংলা এজেন্ট ব্যাংকের প্রতিনিধির কাছে ভাউচারে ২২০ টাকা সঞ্চয়ও জমা দিয়েছেন।

হেলেনা বেগম, সুমতি রানী, পরী বানুসহ কয়েকজন উপকারভোগী জানান, ২০০ টাকা দিয়ে চাল নেওয়ার সময় ইউপি সদস্যরাও উপস্থিত ছিলেন। তারাও চেয়ারম্যানের নির্দেশে টাকা নেওয়ার কথা জানিয়েছেন। যারা প্রতিবাদ করেছেন, তাদের কার্ড বাতিলের হুমকি দেওয়া হয়েছে।

টাকা দিতে না চাওয়ায় সেখানে বাগ্বিতণ্ডা হয়েছে বলে জানান মিঠাপুর বাজার ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক ইমরুল কায়েশ সোহেল। তিনি বলেন, উপকারভোগী সবার কাছ থেকে টাকা নেওয়া হয়েছে। তিনি নিজেও প্রতিবাদ করেছেন। তবে ফল মেলেনি।

এ বিষয়ে মিঠাপুর ইউপি চেয়ারম্যান ফিরোজ হোসেন বলেন, বাড়িঘরের করের টাকা আদায় করা হচ্ছে। রসিদের মাধ্যমে বকেয়া কর আদায় করা হয়েছে। দোষের কিছু নেই। রসিদে করের স্থানে টিক না থাকার বিষয়টি জানালে তিনি দাবি করেন, টিক দেওয়া আছে। তাঁর ভাষ্য, প্রয়োজনবোধে চাল আটকে টাকা আদায় করতে হবে।

দায়িত্বপ্রাপ্ত ট্যাগ অফিসার সহকারী ইনস্ট্রাক্টর (ইউআরসি) প্রেম কুমার বলেন, তিনি সেখানে উপস্থিত ছিলেন না। তবে ইউপি সচিব ফোনে বিষয়টি জানিয়েছেন। তিনি টাকা তুলতে নিষেধ করলেও তারা শোনেননি।

উপজেলা মহিলাবিষয়ক কর্মকর্তা ফারুক আহমেদ বলেন, উপকারভোগীদের ডাচ্-বাংলা এজেন্ট ব্যাংকে নিজস্ব সঞ্চয়ী হিসাব খোলা রয়েছে। প্রতি মাসে ব্যাংকের প্রতিনিধিরা উপস্থিত থেকে ভাউচারের মাধ্যমে ২২০ টাকা করে সঞ্চয় নেন। মেয়াদ শেষে উপকারভোগীরা লভ্যাংশসহ ফেরত পাবেন। অন্য কোনো টাকা চাল বিতরণের সময় আদায় করা যাবে না। মিঠাপুর ইউপির বিষয়টি তিনি জানেন না।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আলপনা ইয়াসমিন বলেন, ঘটনাটি জানতে তিনি মিঠাপুর ইউপিতে যাবেন। ট্যাগ অফিসারসহ অন্যদের সঙ্গে কথা বলে সত্যতা পেলে তদন্ত কমিটি গঠন করা হবে।