
নড়াইলের কালিয়া উপজেলার নবগঙ্গা নদীতে নির্মাণাধীন সেতু। ছবি-সমকাল
নকশায় ত্রুটির কারণে নড়াইলের কালিয়া উপজেলার নবগঙ্গা নদীর ওপর নির্মিতব্য সেতুর নির্মাণ ব্যয় ৬৫ কোটি টাকা থেকে বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১৩৬ কোটি টাকা। এ সেতুর নির্মাণ শুরু হয় ২০১৮ সালের জানুয়ারিতে। কাজ ২০১৯ সালের জুনে শেষ হওয়ার কথা থাকলেও এখন ষষ্ঠবারের মতো ২০২৫ সালের জুন পর্যন্ত বাড়ানো হয়েছে সময়। গত ৫ সেপ্টেম্বর রাজধানীর শেরেবাংলা নগরে পরিকল্পনা কমিশনের এনইসি সম্মেলন কক্ষে একনেক বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এ সেতু প্রকল্পের নকশা প্রণয়নে দুর্বলতা নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেন। নকশার দুর্বলতার কারণে সেতুর নিচ দিয়ে নৌ চলাচল বিঘ্নিত হবে বলেও মন্তব্য করেন তিনি। বৈঠকে সেতুটির জন্য নতুন করে আরও ৬১ কোটি টাকা বরাদ্দ অনুমোদন করে একনেক।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, ২০১৮ সালের জানুয়ারিতে মেসার্স এমডি জামিল ইকবাল অ্যান্ড মো. মইনুদ্দীন বাঁশি জেভি ফার্ম এ সেতুর কার্যাদেশ পায়। ৬৫১.৮৩ মিটার দীর্ঘ এবং ১০.২৫ মিটার প্রস্থের সেতুর নির্মাণ ব্যয় ধরা হয় ৬৫ কোটি ৩ লাখ ৮৯ হাজার টাকা। কিন্তু ওই বছরের জুনে নকশায় জটিলতা ধরা পড়ায় কাজ কয়েক মাস বন্ধ থাকে। সে বছর নভেম্বর মাসের শুরুর দিকে তৎকালীন নড়াইল সড়ক ও জনপথ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী ফরিদ উদ্দীন এবং ঠিকাদার মইনুদ্দীন বাঁশি সমকালকে জানিয়েছিলেন, সেতুর পাইল ক্যাপ পানির ওপরে নাকি নিচে থাকবে– সেটা নকশায় ধরা ছিল না। এ ছাড়া নকশা অনুযায়ী, বর্ষাকালে যদি নদীতে পানির উচ্চতা অতিমাত্রায় বাড়ে তাহলে প্লাবিত হতে পারে সেতুর দুই পাশের পিলার। সে কারণে সেতুর শুরু ও শেষের অংশ অর্থাৎ দুই প্রান্তই তিন মিটার করে উঁচু করা প্রয়োজন। তবে সেতুর মাঝখানের উচ্চতা আগের নকশা অনুযায়ীই হবে। নকশা সংশোধনের প্রস্তাব সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ে পাঠানোর প্রায় ছয় মাস পর তা অনুমোদন পেলে সেতুর নির্মাণকাজ শুরু হয়। তবে ২০২০ সালের ২০ জুন ও পরের বছর ৬ সেপ্টেম্বর বালু বোঝাই বাল্কহেডের ধাক্কায় মাঝ নদীতে অবস্থিত সেতুর নির্মাণাধীন ৯ নম্বর পিলার আঘাতপ্রাপ্ত হয়ে হেলে পড়ে।
দুর্ঘটনার পৌনে তিন মাস পর ২৬ নভেম্বর সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তরের তৎকালীন প্রধান প্রকৌশলী আবদুস সবুর একটি কারিগরি দল নিয়ে ডুবে যাওয়া পিলার সরেজিমন দেখতে সেতু এলাকায় আসেন। ২০২২ সালের মে মাসে নড়াইল সড়ক ও জনপথ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. আশরাফুজ্জামান জানিয়েছিলেন, পিলারগুলো যাতে বারবার আঘাতপ্রাপ্ত না হয় সে জন্য নিরাপত্তা বলয় তৈরি, সেতুর নিচ দিয়ে বড় নৌযান চলাচল যাতে বিঘ্নিত না হয়, সে বিষয়টি মাথায় রেখে এবং তলিয়ে যাওয়া ৯ নম্বর পিলারটির স্থানে স্টিলের স্প্যান স্থাপনের জন্য নকশা পরিবর্তন প্রয়োজন। তিন মাসের মধ্যে নকশা পরিবর্তনসহ আনুষঙ্গিক কাজ শেষ করে বাকি কাজের জন্য নতুন টেন্ডার দেওয়া হবে। কিন্তু সেই তিন মাসের জায়গায় এক বছরের বেশি সময় পরে এসে চলতি মাসে সেই নকশা একনেকে অনুমোদন পেল। এভাবে কয়েক মাস কাজ বন্ধ থাকা, শুরু থেকেই অল্প সংখ্যক শ্রমিক দিয়ে প্রকল্প এলাকায় কাজ করানো, সেতু নির্মাণে ধীরগতি, নির্মাণ দ্রব্যের মূল্যের ঊর্ধ্বগতি এবং দু’বার নকশা পরিবর্তনে দ্বিগুণ ব্যয় বেড়ে গেছে।
নড়াইল সড়ক বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. আশরাফুজ্জামান বলেন, ‘৯ নম্বর পিলারটি আঘাতপ্রাপ্ত হয়ে ভেঙে যাওয়ায় এটি না রেখে ৮ ও ১০ নম্বর পিলারের ওপর কংক্রিটের ঢালাই না দিয়ে নতুন টেন্ডারের মাধ্যমে ৮৬ মিটার লম্বা স্টিলের একটি স্প্যান বিদেশ থেকে এনে বসাতে হবে। বর্ষাকালে এই অংশে পানি থেকে সেতুর উচ্চতা থাকবে ২৭ ফুট। এ ছাড়া সেতুর অন্যান্য অংশ দিয়ে ছোট নৌযান চলাচল করবে; সেটা সাইনবোর্ডে লিখে দেওয়া থাকবে। সেতুর পিলারগুলো যাতে নৌযান দ্বারা আঘাতপ্রাপ্ত না হয়, সে জন্য প্রতিটি পিলারের চারদিকে স্টিলের বেষ্টনী দিয়ে তৈরি করা হবে নিরাপত্তা বলয়। এ জন্য স্প্যানের পেছনে ৪০ কোটি টাকা এবং পিলারের নিরাপত্তার জন্য বাকি অর্থ ব্যয় হবে। বাড়তি ৬১ কোটি টাকা বরাদ্দ হলেও নতুন করে টেন্ডার, কার্যাদেশসহ আনুষঙ্গিক কাজ করতে আরও তিন-চার মাস সময় লাগবে। আশা করা হচ্ছে, ২০২৫ সালের জুনে সেতুর নির্মাণ শেষ হবে। তবে সেতুর দুই প্রান্তের সংযোগ সড়কসহ বাকি কাজ এ বছরের জুনে সম্পন্ন হয়েছে।’
নড়াইল-১ আসনের এমপি কবিরুল হক মুক্তি বলেন, ‘আমলাদের অদক্ষতা ও অসচেতনতার কারণে নকশায় ত্রুটি হয়েছে। ফলে সরকারের কোটি কোটি টাকার ক্ষতি হলো। আশার কথা, জটিলতা কেটে গেছে। এখন দ্রুত সেতুর কাজ
শেষ করলে লাখ লাখ মানুষের যাতায়াতের পথ উন্মুক্ত হবে।
মন্তব্য করুন