- সারাদেশ
- ছিলাই নদী খুবলে খাচ্ছে কারা
ছিলাই নদী খুবলে খাচ্ছে কারা

দোয়ারাবাজারের বাঘমারা এলাকায় ছিলাই নদীতে বসানো হয়েছে ড্রেজার মেশিন। ছবি-সমকাল
জলমহালের জন্য ইজারা দেওয়া নদী থেকে গভীর রাতে ড্রেজার মেশিন দিয়ে বালু উত্তোলন করা হচ্ছে। এ কারণে নদীর পাড় ভেঙে বসতি বিলীন হচ্ছে। ভাঙনের মুখে পড়েছে নদীপাড়ের হাওররক্ষা বাঁধও।
সুনামগঞ্জের দোয়ারাবাজারের পাহাড়ি ছিলাই নদীর বুক এভাবেই প্রতিনিয়ত খুবলে খাচ্ছে একটি চক্র। বিষয়টি স্থানীয় ভূমি অফিসকে জানিয়েও কোনো লাভ হচ্ছে না। বালু বোঝাই করে ভূমি অফিসের নাকের ডগা দিয়েই ট্রলারে করে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে এসব বালু। কারা এভাবে নদীর বুক খুবলে খাচ্ছে সে ব্যাপারে কারও কাছেই সুনির্দিষ্ট কোনো তথ্য নেই।
ভারতের চেরাপুঞ্জি থেকে সুনামগঞ্জের দোয়ারাবাজারের বাংলাবাজার, ভোগলা, সুরমা, দোয়ারাবাজার সদর ইউনিয়নের ওপর দিয়ে বয়ে যাওয়া পাহাড়ি নদী ছিলাই মিলেছে সুরমার সঙ্গে। ছিলাইয়ের দুই পাড়ে রয়েছে সুন্দরবই, রুহিতপুর, রাখালকান্দি, গুজাউড়া, নামনগর, বাঘমারা, ভোলাখালী, ভিখারগাঁও, বালুচরা, বাঘরাসহ প্রায় ১৫টি গ্রাম। ভাঙনের কারণে ১৫ বছর আগে থেকেই এই নদীতে বালু উত্তোলনে স্থানীয় প্রশাসনের নিষেধাজ্ঞা আছে। সেই নিষেধাজ্ঞা উপেক্ষা করেই একটি মহল বালু খুবলে নিচ্ছে।
নদীপাড়ের গ্রাম রাখাল কান্দির বাসিন্দা সাবেক ইউপি সদস্য হোসেন আলী জানান, নদীতে বালু কমে গেছে। এর পরেও ড্রেজার মেশিন দিয়ে অনেক গভীর থেকে তোলা হচ্ছে বালু। গভীর রাতে ড্রেজারে শত শত বারকী নৌকায় বালু তোলা হয়। গেল বছর এভাবে উত্তোলন করা বেশ কিছু বালু জব্দ করে কম দামে নিলাম দেওয়া হয়েছিল। নিলামে বিক্রয় করা বালু বহনের অজুহাতে দিনের বেলায়ও বালু উত্তোলন করে বিক্রয় করা হয়েছে বেশ কিছুদিন। এ কারণে নাইন্দার হাওরের বেড়িবাঁধের একাংশ নদীতে বিলীন হয়েছে। উপজেলা সহকারী কমিশনারের (ভূমি) কাছে অভিযোগ করেও বালু উত্তোলন ঠেকানো যায়নি।
বর্তমান ইউপি সদস্য আবুল কালামও একই ধরনের মন্তব্য করে জানান, নদী খননের কারণে রাখালকান্দি গ্রামের আব্দুল মালেক, ছামেদ মিয়াসহ অনেকের বসতভিটা এখন হুমকির মুখে। নাইন্দার হাওরের বেড়িবাঁধও ভেঙে গেছে।
স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, সীমান্ত এলাকার আনফর আলী, ইয়াজুল, এখলাছ ও নুরুল আমিন নামের কয়েক জনের নেতৃত্বে রাতে এই বালু লুটের উৎসব চলে। কোনো কোনো সময় দিনেও চলে বালু লুটপাট। প্রশাসন দিনদুপুরেও যেন তাদের এসব অপকীর্তি দেখে না।
অভিযোগের জবাবে আনফর আলী জানান, তাদের কারও ড্রেজার মেশিন নেই। হাতের যন্ত্র দিয়ে লুকিয়ে লুকিয়ে কিছু বালু তুলে বিক্রয় করা হয়। প্রশাসনের লোকজন বা পুলিশ এলে পালাতে হয়। হাতের যন্ত্রে বালু তুললে পাড় ভাঙে না। ড্রেজার মেশিন কারা চালায় তা তার জানা নেই।
এ বিষয়ে জানার জন্য উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) ফজলে রব্বানী চৌধুরীর মোবাইল ফোনে একাধিকবার কল করেও সাড়া পাওয়া যায়নি।
দোয়ারাবাজার তহশিল অফিসের তহশিলদার রঞ্জন কুমার দাস ছিলাই নদী থেকে বালু উত্তোলনের কথা সত্য বলে জানান। তিনি বলেন, এই মহালটি বালুমহাল হিসেবে নয়, জলমহাল হিসেবে গেল ১৩ আগস্ট ইজারা দেওয়া হয়েছে।
মন্তব্য করুন