দলের পরোক্ষ সমর্থন নিয়েই ২০২১ সালে ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে দাঁড়িয়ে বরিশাল সদর উপজেলার চন্দ্রমোহন ইউনিয়নের চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছিলেন বিএনপি নেতা সিরাজুল ইসলাম। সম্প্রতি কাজী ফিরোজ আহমেদকে সভাপতি ও মো. জুলহাসকে সাধারণ সম্পাদক করে ওই ইউনিয়ন বিএনপির কমিটি গঠিত হয়েছে। অথচ এ বিষয়ে দলসমর্থিত চেয়ারম্যান হয়েও জানতেন না সিরাজুল। ইউনিয়ন বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি প্রবীণ নেতা ইসরাইল পণ্ডিতও কমিটি গঠনের বিষয়ে ছিলেন পুরোপুরি অন্ধকারে। ইসরাইল পণ্ডিতের ছেলে ওবায়েদুল করীম তুহিনসহ স্থানীয় বিএনপির এক পক্ষের অভিযোগ, ত্যাগী নেতাকর্মীকে বাদ দিয়ে সদর উপজেলা বিএনপির সভাপতি এনায়েত হোসেন বাচ্চু তাঁর ছোট ভাই কাজী ফিরোজকে আহ্বায়ক করে কমিটি করেছেন। একই অভিযোগ ইউনিয়ন চেয়ারম্যান সিরাজুল ইসলামেরও।

শুধু চন্দ্রমোহন নয়, সদর উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক কমিটির বিরুদ্ধে প্রতিটি ইউনিয়ন কমিটি গঠনে একই অভিযোগ পাওয়া যাচ্ছে। ১০টি ইউনিয়নের মধ্যে এ পর্যন্ত চারটিতে যথাক্রমে– চন্দ্রমোহন, জাগুয়া, কাশীপুর ও রায়পাশা-কড়াপুরে কমিটি গঠিত হয়েছে। এই প্রতিটি ইউনিয়নেই ত্যাগী ও যোগ্যদের বাদ দেওয়ার অভিযোগ তুলে বিক্ষোভ করেছেন পদবঞ্চিতরা। এমনকি বরিশাল-৫ আসনের সাবেক এমপি ও বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব মজিবর রহমান সরোয়াকে অন্ধকারে রেখে ইউনিয়ন কমিটি গঠিত হচ্ছে বলেও তিনি সমকালের কাছে অভিযোগ করেছেন।

বরিশাল মহানগর ও সদর উপজেলা নিয়ে আসন বরিশাল-৫। এটি বিভাগে মর্যাদার আসন হিসেবে পরিচিত। বিএনপির একাধিক নেতাকর্মী বলছেন, দল নির্বাচনে গেলে এ আসনে সাবেক এমপি মজিবর রহমান সরোয়ার ফের মনোনয়নপ্রত্যাশী হবেন। তাঁর প্রার্থিতা ঠেকাতেই সরোয়ার অনুসারীদের বাদ দিয়ে একতরফাভাবে গঠিত হচ্ছে ইউনিয়ন কমিটি। এর পেছনে কলকাঠি নাড়ছেন মনোনয়নপ্রত্যাশীদের মধ্যে আলোচনায় থাকা এক নেত্রী।

জাগুয়া ইউনিয়ন বিএনপির সাবেক সভাপতি ডা. ফজলুর রহমান বলেন, ইউনিয়নে নবগঠিত কমিটির আহ্বায়ক মন্টু খান একই সঙ্গে জেলা কমিটির দপ্তরের দায়িত্বপ্রাপ্ত সদস্য এবং সদর উপজেলা কমিটির যুগ্ম আহ্বায়ক। দল যেখানে এক নেতা এক পদ নীতি গ্রহণ করেছে, সেখানে মন্টু খান পেয়েছেন তিনটি পদ। আমি ১৮ বছর ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি হলেও কমিটি গঠনের আগে আমাকে জানানো হয়নি।

কাশীপুর ইউনিয়ন বিএনপির সাবেক সহসভাপতি আব্দুল হক সিকদারের অভিযোগ, টানা ২০ বছরের সভাপতি আলী আহমেদকে ফের আহ্বায়ক করে ৭ সেপ্টেম্বর কমিটি গঠন হয়েছে। সদস্য সচিব করা হয়েছে হুমায়ন কবীর ওয়াসিমকে। অথচ তাঁর বাড়ি বাবুগঞ্জ উপজেলার চাঁদপাশা ইউনিয়নে। কাশীপুরে তাঁর নানাবাড়ি।
সদর উপজেলার বিগত কমিটির আহ্বায়ক নুরুল আমিন টানা দুই মেয়াদ রায়পাশা-কড়াপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান ছিলেন। তিনি বলেন, আমার ইউনিয়নে কমিটি গঠনের বিষয়টি আমাকেই জানানো হয়নি। উপজেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক হিসেবে ইউনিয়নে কমিটি গঠন নিয়ে জানার অধিকার আমার রয়েছে। অথচ ওয়ান-ইলেভেনের সময় রাজনীতি না করার অঙ্গীকার করে দলত্যাগ করা রফিকুল ইসলাম ইউনিয়ন কমিটির সভাপতি হয়েছেন।

বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব ও সাবেক এমপি মজিবর রহমান সরোয়ার বলেন, ‘সংসদীয় আসনভুক্ত ইউনিয়ন কমিটি গঠন হচ্ছে। অথচ সদর উপজেলা নেতারা আমার সঙ্গে কোনো আলোচনা বা পরামর্শ নিচ্ছেন না। স্থানীয় নেতাকর্মীর মাধ্যমে আমি বিভিন্ন অভিযোগ পাচ্ছি। অন্য দলের লোকজনকে ইউনিয়ন কমিটিতে পদায়ন করার সুনির্দিষ্ট অভিযোগ রয়েছে। কেউ কেউ নিজের লোক পদায়ন করার জন্য কমিটি গঠনে রাজনৈতিক প্রক্রিয়া মানছেন না। এতে দলের চলমান আন্দোলন ক্ষতিগ্রস্ত হবে।’

তবে সব অভিযোগ অস্বীকার করে সদর উপজেলা কমিটির আহ্বায়ক কাজী এনায়েত হোসেন বাচ্চু বলেন, ‘বিএনপি বড় দল, পদ কম, তাই সবাইকে খুশি করা যায় না। সেজন্য পদবঞ্চিতরা এসব অভিযোগ করছেন।। চন্দ্রমোহন এবং রায়পাশা-কড়াপুর ইউনিয়নে সম্মেলন করে ভোটের মাধ্যমে কমিটি হয়েছে। অভিযোগ করা সবাইকে আমন্ত্রণ করা হয়েছিল, তারা যাননি।’

চেয়ারম্যান সিরাজের অভিযোগ বিষয়ে এনায়েত হোসেন বলেন, চেয়ারম্যান সিরাজ আওয়ামী লীগের সঙ্গে আঁতাত করে চলেন। কাশীপুরে আরেক উপজেলার ওয়াসিমকে সদস্য সচিব করা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ওয়াসিম ভোটে নির্বাচিত হলে আমার কিছু করার থাকে না। জাগুয়ায় মন্টু খান তিনটি পদ পেলেও তাঁর স্বাক্ষর ক্ষমতা দেওয়া হয়েছে একটি পদে। এটা নিয়মতান্ত্রিক। আর মজিবর রহমান সরোয়ার কেন্দ্রের নেতা হওয়ায় তিনি ইউনিয়ন পর্যায়ে সময় দিতে পারেন না। কমিটি গঠনে তাঁকে পেলে অবশ্যই দল উপকৃত হবে।