স্কুলশিক্ষকের অন্যরকম বিদায়

বরযাত্রীর গাড়ি নয়! ৪০ বছরের শিক্ষকতা শেষে এবার বিদায়। তাই লাকসামের স্কুলশিক্ষক সৈয়দ মো. আবদুল আউয়ালের জন্য এমন আয়োজন -সমকাল
কুমিল্লা প্রতিনিধি
প্রকাশ: ২১ সেপ্টেম্বর ২০২৩ | ১৮:০০
চার দশক শিক্ষকতা করেছেন কুমিল্লার লাকসাম উপজেলার উত্তরদা উচ্চ বিদ্যালয়ে। বাড়ি থেকে স্কুলের দূরত্ব ১১ কিলোমিটার। গ্রামের ভেতর দিয়ে চলা এ পথে সহকারী শিক্ষক সৈয়দ মো. আবদুল আউয়াল যাওয়া-আসা করতেন বাইসাইকেলে। কখনও তাঁকে গাড়িতে দেখা যায়নি। গতকাল বৃহস্পতিবার তিনি স্কুলের কর্মজীবন থেকে বিদায় নিয়েছেন। এ বিদায়কে সাজিয়ে তুলতে ছিল বিশেষ আয়োজন। ফুলে ফুলে সজ্জিত গাড়িতে বাড়ি ফেরেন তিনি। সামনে-পেছনে ছিল মোটরসাইকেল শোভাযাত্রা।
জনপ্রিয় এ শিক্ষক হাত নেড়ে কুমিল্লা-নোয়াখালী আঞ্চলিক মহাসড়ক হয়ে ফেরেন বাড়ি। তাঁকে বহনকারী গাড়ি দেখে অনেকেই ধারণা করেছিলেন, কোনো রাজনৈতিক নেতার শোডাউন। কিন্তু এ আয়োজন করেছেন শিক্ষক, শিক্ষার্থী, ম্যানেজিং কমিটি ও প্রাক্তন শিক্ষার্থীরা।
তাঁর বিদায়কে কেন্দ্র করে এক শোকাবহ পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়। অশ্রুসিক্ত চোখেই তাঁকে বিদায় জানানো হয়। যিনি চার দশক বাইসাইকেলে যাতায়াত করতেন, তাঁর কর্মজীবনের শেষ দিনটি স্মরণীয় করে রাখতে এ ব্যতিক্রমী আয়োজন করা হয়।
বিদ্যালয় সূত্র জানায়, কৃতী শিক্ষক আবদুল আউয়াল ১৯৮৩ সালে উত্তরদা উচ্চ বিদ্যালয়ে সহকারী শিক্ষক হিসেবে শিক্ষকতা জীবন শুরু করেন। কর্মস্থলে দায়িত্ব পালনে ছিলেন আন্তরিক। পারিবারিক জীবনে স্ত্রী, তিন মেয়ে ও এক ছেলে রয়েছে। বিদায়ী অনুষ্ঠানে বিদ্যালয়, ম্যানেজিং কমিটি, বর্তমান ও প্রাক্তন শিক্ষার্থীদের পক্ষ থেকে তাঁকে ফুলেল শুভেচ্ছা ও উপহারসামগ্রী দেওয়া হয়।
উত্তরদা উচ্চ বিদ্যালয়ের সিনিয়র সহকারী শিক্ষক মো. মাসুদুল হক বলেন, আবদুল আউয়াল তাঁর শিক্ষক ও দীর্ঘদিনের সহকর্মী। এমন ভদ্র ও জ্ঞানী মানুষ খুব কমই হয়।
বিদায় উপলক্ষে সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে সভাপতির বক্তব্যে বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ইদ্রিছ মিয়া বলেন, আবদুল আউয়াল তাঁর ভালো একজন সহকর্মী ছিলেন। তারা চেষ্টা করেছেন ব্যতিক্রমী আয়োজনে তাঁকে বিদায় জানাতে।
বিদ্যালয় ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি ডা. খায়রুল ইমরান অনি বলেন, এ শিক্ষক দায়িত্বের প্রতি ছিলেন অত্যন্ত আন্তরিক। শিক্ষার্থীদের কাছে তিনি বেশ জনপ্রিয় ছিলেন। এমন গুণী শিক্ষকের বিদায় একটু ব্যতিক্রম কিছু দাবি করে।
বিদায়ী ওই শিক্ষক বলেন, শেষ দিনে এমন ভালোবাসা ও শ্রদ্ধা পেয়ে এ পেশার প্রতি তাঁর গর্ব বেড়েছে। দেশে আর কোনো শিক্ষককে এভাবে বিদায় দেওয়া হয়েছে কিনা তাঁর জানা নেই। এটি তাঁর জীবনের অনেক বড় পাওয়া। আয়োজকদের প্রতি তিনি কৃতজ্ঞ।