২১ খালের ১৬টিরই অস্তিত্ব নেই

প্রকাশ: ২২ সেপ্টেম্বর ২০২৩ | ১৮:০০
পদ্মা ও বড়ালকেন্দ্রিক খালঘেরা রাজশাহীর চারঘাট। খালগুলো দিয়ে এক সময় নৌকা চলত। বর্ষা মৌসুমে জোয়ার-ভাটার পানির সঙ্গে পলি এসে বাড়াত জমির উর্বরতা। এ খাল বেয়েই নিষ্কাশন হতো এলাকার বৃষ্টির পানি। এক যুগ ধরে জনপ্রতিনিধিসহ প্রভাবশালী ব্যক্তিরা খাল দখল করে ভরাট করে গড়ে তুলেছেন একের পর এক বাড়িঘর এবং রাস্তা।
বড়াল নদী ও খাল রক্ষা আন্দোলন সূত্রে জানা গেছে, কাগজে-কলমে উপজেলায় ছোট-বড় ২১টি খাল রয়েছে। এর মধ্যে গঙ্গামতী খাল, ঝিনি খাল, ত্রিমহনী খাল, কাঁটা বড়াল খাল, শ্যামা সুন্দরী খাল, সলিয়ারদহ খাল, ভাটপাড়া খাল, বেলঘরিয়া খাল ও নারদ খাল উল্লেখ্যযোগ্য। বাস্তবে ১৬টি খালের অস্তিত্ব বিলীন হয়ে গেছে। যে পাঁচটি খাল আছে, সেগুলোও অস্তিত্ব সংকটে।
এ সংগঠনের সভাপতি সাইফুল ইসলাম বাদশা বলেন, ইচ্ছে মতো খাল দখল চলছে। আন্দোলন করেও প্রতিকার মিলছে না। সিএস নকশা ধরে খাল উদ্ধার করে খনন করলে কৃষকরা উপকৃত হবেন।
সরেজমিন দেখা যায়, চারঘাট থেকে বানেশ্বর পর্যন্ত আঞ্চলিক মহাসড়কের পশ্চিম পাশে আট কিলোমিটার খাল রয়েছে। খালটি পদ্মা নদীর সঙ্গে নারদ নদে সংযোগ স্থাপন করেছে। ২০১৭-১৮ অর্থবছরে বরেন্দ্র বহুমুখী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ খালটি খনন করেছে। এর পর খোদ সড়ক ও জনপথ বভাগ রাস্তা নির্মাণের জন্য খাল ভরাট করেছে। প্রতিষ্ঠানটি খালের দুই-তৃতীয়াংশে গাইড ওয়াল দিয়ে ভরাট করায় পানি চলাচল সম্পূর্ণ বন্ধ হয়ে গেছে।
রাজশাহী সড়ক ও জনপথ বিভাগের উপবিভাগীয় প্রকৌশলী শাহ মো. আসিফ বলেন, খালের অধিকাংশ জমি সড়ক ও জনপথ বিভাগের। জায়গা না থাকায় পশ্চিম পাশের কিছু অংশে গাইড ওয়াল দিয়ে রাস্তার কাজ করা হয়েছে। এতে পানি নিষ্কাশনে সমস্যা হবে না।
একইভাবে বড়াল নদী থেকে সলিয়ারদহ পর্যন্ত প্রশস্ত খালটিতে চলছে স্থানীয়দের দখল উৎসব। খালের বামুনদীঘি অংশে খাল ভরাট করে উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক মোয়াজ্জেম হোসেন, ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শাহাদাত হোসেনসহ একাধিক ব্যক্তি ক্লাব, বহুতল মার্কেট, দোকান ও রাজনৈতিক কার্যালয় গড়ে তুলছেন।
আওয়ামী লীগ নেতা মোয়াজ্জেম হোসেন বলেন, খাল ভরাট করে বঙ্গবন্ধু স্মৃতি সংসদ ও ওয়ার্ড দলীয় কার্যালয় নির্মাণকাজ শুরু করেছিলাম। পানি উন্নয়ন বোর্ড বাধা দেওয়ায় কাজ বন্ধ আছে।
একই অবস্থা ইউসুফপুর ইউনিয়ন থেকে নারদ নদী পর্যন্ত প্রবাহিত নারদ খালের। ২০১৮-২০১৯ অর্থবছরে বরেন্দ্র উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ খালটি পুনর্খনন করেছিল। পুঠিয়া উপজেলার জয়পুর এলাকাসংলগ্ন এই খালের মুখ ভরাট করছেন মোহাম্মদ বাবু। খালটি ভরাট করায় ইউসুফপুর, শ্রীখণ্ডী, জয়পুর ও চক মুক্তারপুর গ্রামের দুই হাজার বিঘা ফসলি জমি জলাবদ্ধতার কবলে পড়বে বলে জানিয়েছেন স্থানীয় সাবেক ইউপি সদস্য ইখলাস উদ্দিন।
খাল ভরাটকারী মোহাম্মদ বাবু বলেন, বরেন্দ্র কর্তৃপক্ষ ভুল করে তাঁর জমিতে খাল খনন করেছিল। এখন তিনি ভরাট করছেন।
বরেন্দ্র উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের চারঘাট-পুঠিয়া উপজেলার দায়িত্বপ্রাপ্ত সহকারী প্রকৌশলী হানিফ শিকদার বলেন, ভরাটের বিষয়টি খোঁজখবর নিয়ে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
রাজশাহী পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী আরিফুর রহমান অঙ্কুর বলেন, খাল দখলকারীদের তালিকা করে জেলা প্রশাসকের কাছে পাঠানো হয়েছে। পরবর্তী নির্দেশনা পেলে দখলমুক্ত করতে অভিযান চালানো হবে। একই কথা বলেছেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সোহরাব হোসেন।
জেলা প্রশাসক শামীম আহমেদ বলেন, পানি উন্নয়ন বোর্ড উচ্ছেদের রূপরেখা ও লজিস্টিক সাপোর্ট দিলে ম্যাজিস্ট্রেট দেওয়া হবে।