ঢাকা বুধবার, ২৯ নভেম্বর ২০২৩

রংপুর বিশেষায়িত শিশু হাসপাতাল

চিকিৎসা কার্যক্রম চালু হয়নি সাড়ে ৩ বছরেও

চিকিৎসা কার্যক্রম চালু হয়নি সাড়ে ৩ বছরেও

স্বপন চৌধুরী, রংপুর

প্রকাশ: ১১ সেপ্টেম্বর ২০২৩ | ১৮:০০

জনগণের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে সাড়ে তিন বছর আগে রংপুরে নির্মাণ করা হয় একটি বিশেষায়িত শিশু হাসপাতাল। কিন্তু তাতে আজও চালু হয়নি চিকিৎসা কার্যক্রম। গত ১৬ ফেব্রুয়ারি ঢাকঢোল পিটিয়ে হাসপাতালটি উদ্বোধন করেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক। এর পর কেটে গেছে আরও আট মাস। তবুও ১০০ শয্যার এই হাসপাতালটির চিকিৎসাসেবা আলোর মুখ দেখেনি।

২০২০ সালের ৮ মার্চ হাসপাতাল ভবনটি জেলা সিভিল সার্জনের কাছে হস্তান্তর করে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। তবে করোনা মহামারির সময় হাসপাতালটিকে করোনা ডেডিকেটেড হাসপাতাল হিসেবে ব্যবহার করা হয়েছিল। এর পর দীর্ঘ দিনেও শিশু হাসপাতালের জন্য প্রয়োজনীয় জনবল ও স্বাস্থ্যসেবার যন্ত্রপাতি সংযোজন করা হয়নি। এতে শিশুদের চিকিৎসায় ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন এলাকায় ছুটতে হচ্ছে রংপুর অঞ্চলের মানুষের।

জানা যায়, রংপুর মেডিকেল কলেজ (রমেক) হাসপাতালে জনবল সংকট থাকায় শিশু বিভাগে চিকিৎসাসেবা পূর্ণাঙ্গভাবে দেওয়া সম্ভব হচ্ছে না। এ কারণে দীর্ঘদিন ধরে নগরীতে একটি বিশেষায়িত পূর্ণাঙ্গ শিশু হাসপাতালের দাবিতে আন্দোলন হয়। দাবি মেনে সরকার হাসপাতাল করলেও চিকিৎসা কার্যক্রম শুরু হয়নি। এতে হতাশ রংপুরের মানুষ।

রমেক হাসপাতালের শিশু ও নিউরো মেডিসিন বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ডা. এম এ ওয়াহেদ বলেন, রমেকে একটি মাত্র শিশু বিভাগ। এতে রংপুর বিভাগের আট জেলার শিশুদের চিকিৎসাসেবা সম্ভব হচ্ছে না। বিশেষায়িত শিশু হাসপাতালটির কার্যক্রম শুরু হলে স্বল্প মূল্যে শিশুদের জটিল সার্জারি ও সাধারণ রোগের চিকিৎসা দেওয়া সম্ভব হবে।

সরেজমিন দেখা যায়, বিশেষায়িত শিশু হাসপাতাল ভবনে ভূতুড়ে পরিবেশ বিরাজ করছে। দায়িত্বপ্রাপ্ত একজন আবাসিক চিকিৎসক, চারজন নার্স এবং নিরাপত্তা প্রহরীরা অলস সময় কাটাচ্ছেন। হাসপাতাল চত্বরে শিশুদের জন্য নির্মিত খেলার রাইডগুলো ধুলায় মলিন। 

সুশাসনের জন্য নাগরিক-সুজনের রংপুর মহানগর সভাপতি ফখরুল আনাম বেঞ্জু বলেন, দ্রুত সময়ের মধ্যে শিশু হাসপাতালে সেবা কার্যক্রম চালু করা সময়ের দাবি। নাট্যকর্মী রাজ্জাক মুরাদ বলেন, স্বাস্থ্যমন্ত্রী ঢাকঢোল পিটিয়ে শিশু হাসতালটির উদ্বোধন করেছিলেন। এই অঞ্চলের মানুষ আশায় বুক বেঁধেছিল। কিন্তু এখন সে আশায় গুড়েবালি। এই অঞ্চলে সবচেয়ে বেশি মানুষ দারিদ্র্যসীমার নিচে বাস করে। কম খরচে তাদের সুচিকিৎসা জরুরি। 

রংপুরের স্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তর জানায়, সাবেক রংপুর সদর হাসপাতালের ১ দশমিক ৭৮ একর জমির মধ্যে শিশু হাসপাতাল নির্মাণের কার্যাদেশ দেওয়া হয় ২০১৭ সালের ২১ নভেম্বর। ৩১ কোটি ৪৮ লাখ ৯২ হাজার ৮০৯ টাকা ব্যয়ে ভবনটি নির্মিত হয়। ভবনে আছে সুপারিনটেনডেন্ট কোয়ার্টার, ছয় তলা ডক্টরস কোয়ার্টারের নিচতলায় গাড়ি পার্কিং, দ্বিতীয় তলা থেকে ডাবল ইউনিট, ছয় তলা বিশিষ্ট স্টাফ অ্যান্ড নার্স কোয়ার্টার, দুই তলা বিশিষ্ট গ্যারেজ কাম ড্রাইভার কোয়ার্টার। বিদ্যুৎ সাবস্টেশন স্থাপনের জন্যও রয়েছে আলাদা ভবন।

মূল ভবনের একতলায় থাকবে জরুরি বিভাগ, বহির্বিভাগ, চিকিৎসকদের চেম্বার এবং ল্যাব। দ্বিতীয় তলায় থাকবে অপারেশন থিয়েটার, বোন ইউনিট এবং তৃতীয় তলায় ওয়ার্ড এবং কেবিন।

এ ব্যাপারে রংপুর সিভিল সার্জন ডা. জাহাঙ্গীর কবির সমকালকে বলেন, শিশু হাসপাতাল চালুর ব্যাপারে প্রশাসনিক অনুমোদন প্রয়োজন। প্রয়োজনীয় চাহিদাপত্র স্বাস্থ্য অধিদপ্তর থেকে মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে। অনুমোদন সাপেক্ষে প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি এবং জনবল পাওয়া গেলেই চিকিৎসা কার্যক্রম চালু করা হবে।

রংপুর বিভাগীয় স্বাস্থ্য পরিচালক ডা. এবিএম আবু হানিফ বলেন, বিশেষায়িত শিশু হাসপাতালটির যন্ত্রপাতি ও জনবল বরাদ্দে মন্ত্রণালয়ে চাহিদাপত্র পাঠানো হয়েছে। দাপ্তরিক কাজ চলছে।

আরও পড়ুন